সিলেট, ০২ মার্চ - দেশের ক্রিকেটের অন্যতম স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান ধরা হয় লিটন দাসকে। উইকেটের চারপাশে বাহারি শট খেলার সামর্থ্য তাকে আলাদা করেছে অন্য ব্যাটসম্যানদের চেয়ে। যে কোনো ভালো বলেও অনায়াসে বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন লিটন। তার ব্যাটিং দেখে জনপ্রিয় শিল্পী পিকাসোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসার উদাহরণও টেনেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ইয়ান বিশপ। তবু এত বেশি সামর্থ্য রয়েছে যার, সেই লিটনের ব্যাট থেকে কদাচিৎই আসে বড় কোনো ইনিংস। প্রায় নিয়মিতই আউট হন ৩০-৩৫ রানের ঘরে। এমন নয় যে, সে সব ইনিংসে ছন্দে থাকেন না তিনি। দারুণ সব শট খেলতে খেলতে হুট করেই বাজে এক বলে নিজের উইকেট দিয়ে আসাও নিত্যচিত্র লিটনের। সে সবকে আজ অতীত করে দিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী লিটন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলেছেন ১০৫ বলে ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। পায়ে টান লেগে মাঠের বাইরে যেতে না হলে আরও বড় হতে পারতো তার এ নান্দনিক ইনিংসটি। প্রায় আড়াই ঘণ্টার ব্যাটিংয়ে একবারের জন্যও কোনো ভুল শট খেলেননি তিনি। সাধারণত কোনো মাইলফলকে পৌঁছার পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যে তাড়াহুড়ো দেখা যায়, সেটিও ছিল না লিটনের ব্যাটিংয়ে। ব্যক্তিগত পঞ্চাশে তিনি পৌঁছান ৪৫ বলে, ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে। এরপর সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে খেলেন আরও ৫০ বল, বাউন্ডারি আসে মাত্র ৪টি, ছিলো না কোনো ছয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, ব্যক্তিগত ৬৯ থেকে চার মেরে ৭৩ রানে পৌঁছার পর ২৯ বলে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাননি লিটন। মাঝের ২৮ বল থেকে সিঙ্গেলস-ডাবলসের মাধ্যমেই নিয়েছেন ২৬ রান। পরে মুখোমুখি ৯৫তম বলে মিডউইকেট দিয়ে চার মেরে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এরপর শুরু করেন হাত খুলে খেলা। তিরিপানোর এক ওভারে মারেন তিন চার, পরে মাধেভেরকে বিশাল ছক্কায় পাঠান লংঅন বাউন্ডারিতে। এরপর পায়ে টান লেগে মাঠ ছাড়তে হলেও, লিটনের ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংসেই বিশাল সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, সাইফদের ব্যাটে দলীয় সংগ্রহ ঠেকে ৩২২ রানে। পরে বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে জয় আসে ১৬৯ রানের রেকর্ড ব্যবধানে। স্বাভাবিকভাবেই এমন জয়ের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনা লিটনের সেঞ্চুরিকে ঘিরেই, ম্যাচসেরার পুরষ্কারও ওঠে তার হাতে। সেই ট্রফিটি হাতে নিয়েই আসেন সংবাদ সম্মেলনে। জানালেন মাঠে যেমন দেখা যাচ্ছিল দারুণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলেছেন পুরো ইনিংস, তিনি নিজের মধ্যে ঠিক ততটা রিল্যাক্সড ছিলেন না। বরং খানিক নার্ভাস থাকায়ই খেলতে পেরেছেন দায়িত্বশীল এ ইনিংস। মূলতঃ অনেকদিন পর ইনিংস সূচনা করার দায়িত্ব আসার কারণেই নার্ভাস ছিলেন লিটন। তার নিজের কথা, অনেকে হয়তো বোঝেননি, আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম আজকে। কালকে (শনিবার) রাত থেকেই অনেক নার্ভাস ছিলাম। কারণ, আমি অনেকদিন থেকেই ওয়ানডে খেলছি না। সবশেষ শ্রীলঙ্কায় আমি খেলিনি। তারপর, আমি জানতাম আজকে আমি ওপেন করব। ব্যাক অব দা মাইন্ডে আরও বেশি চাপ ছিল। তবে এই নার্ভাসনেস যে ইতিবাচক হিসেবেই কাজ করেছে, সেটিও মনে করিয়ে দেন লিটন। তিনি বলেন, তবে ওই নাভার্সনেসটা আমার মনে হয়, পজিটিভ হিসেবে কাজ করেছে মাঠে। যেহেতু নার্ভাস, আমাকে আরও ফোকাস নিয়ে খেলতে হবে। সব শট খেলা যাবে না। যদিও পারি সব শট, সব খেলা যাবে না। নাভার্সনেসের কারণে উইকেটে যতক্ষণ ছিলাম, ফোকাস খুব ভালো ছিল। নার্ভাসনেস থেকে এলো ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তাহলে কি রিল্যাক্সড থাকলে ব্যাটিংটা কঠিন হয়ে যায়? উত্তরে লিটন জানান, রিল্যাক্সড থাকাটা (ব্যাটিংয়ে) বাধা দেয়, এটা বলব না। তবে আত্মবিশ্বাস যখন একটু বেশি হয়ে যায়, তখন মনে হয় সব শট খেলা যায়। তখন সমস্যা হয়। যখন ব্যাটিংয়ে গোছানো থাকবেন, ব্যাটিংয়ে যে কয়েকটি শট নিয়ে যাচ্ছি, এই শটগুলোয় পারদর্শী, বাকিগুলোয় সিঙ্গেল নিয়ে পার হয়ে যাব, এভাবে শট কমিয়ে দিলে ঝুঁকি কমিয়ে দিলেন। কিন্তু যখন জানবেন যে আমি এখন আত্মবিশ্বাসী, তখন আউটের সুযোগও বেশি থাকে। এভাবে হয়তো সফল হবেন ব্যাটিংয়ে, চার-ছয় মারতে পারবেন, কিন্তু আউটের সুযোগও বেশি থাকে। তবে পরের ম্যাচে আর নার্ভাস থাকবেন না লিটন, জানালেন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, এখন আর নার্ভাস থাকব না। কারণ আমি জানি যে ওপেন করছি এবং একটি ম্যাচ খেলছি। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০২ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3aeNODW
March 02, 2020 at 01:52AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top