কলকাতা, ১৪ মার্চ - বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সারা বিশ্বে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে ৫ হাজার ৮২ জন মারা গেছেন। এ ভাইরাস মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাংলাদেশসহ সব দেশের নাগরিকদের দেশে (ভারতে) প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। দেশটির এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন পড়েছেন অনেকে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী ১৩ মার্চ রাত বারোটার পর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশসহ সমস্ত বিদেশি নাগরিককের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই দিনের মধ্যে কোন ভারতীয় নতুন করে বাংলাদেশসহ সেদেশে যেতে পারবেন না পাশাপাশি বাংলাদেশিসহ অন্য বিদেশি নাগরিকরাও ভারতে আসতে পারবেন না। যদিও যারা ইতোমধ্যেই কোন একটি দেশের নাগরিক অন্য দেশে রয়েছে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে কোন বাধা নেই। খুব বেশি প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের ওই দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন এই নির্দেশিকায় একদিকে যেমন কলকাতায় আসা বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন তেমনি ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল-বেনাপোল, ঘোজাডাঙ্গাসহ অন্য স্থলবন্দরে মুদ্রা বিনিময়কারীদের মাথায় হাত। সমস্যার মুখে পরিবহন সংস্থার মালিকরা, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরাও। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে এসেছিলেন আবদুল মুজাহিদ। চিকিৎসক তার স্ত্রীকে আগামী সপ্তাহে ফের দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ভারত সরকারের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে স্ত্রীকে নিয়ে শুক্রবারই কলকাতা ছাড়েন মুজাহিদ। কারণ স্ত্রীকে কলকাতায় রেখে গেলেও আগামী একমাসের মধ্যে মুজাহিদ আর কলকাতায় আসতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে একাই কলকাতায় থেকে যেতে হবে। মুজাহিদ জানান গত ৭ মার্চ আমরা কলকাতায় আসি। আমরা চিকিৎসককেও দেখিয়েছি। কিন্তু কিছু কিছু চেক-আপ নির্দিষ্ট সময়ের ওপর নির্ভর করে হয়। সেখানে এখনই দেশে ফিরে গেলে সাতদিন পর ভারতে আসা সম্ভব নয়। তারপর এখানে দীর্ঘদিন থাকাটাও অসুবিধার। মুজাহিদের মতোই ভারত সফরে এসেছিলেন ঢাকার বাসিন্দা জহরুল ইসলাম বাবু। গত সপ্তাহেই দিল্লির আগ্রার তাজমহল, রাজস্থান ঘুরে দেখেছেন তিনি। কিন্তু ভারত সরকারের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানতে পেরেই সফর কাটছাঁট করেই কলকাতা হয়ে শুক্রবারই নিজের দেশে ফিরে গেলেন বাবু। তিনি বলেন, আমরা এসেছিলাম ঘুরতে। কিন্তু যেভাবে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। সেখানে আর ঝুঁকি না নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে বিষয়টি ভেবে দেখবো বলেও জানান তিনি। এদিকে ভারতের ঘোষণা পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউএস-বাংলা ও নভো এয়ার-বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শুক্রবার থেকে তাদের কোন ফ্লাইট ভারতে যাবে না। যদিও কলকাতায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা পর্যন্ত চাটার্ড বিমান চলাচল করতে পারে বলে জানা গেছে। প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসকে ইতোমধ্যে বিশ্ব মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আর এর পরই ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আনে ভারত সরকার। কিন্তু এই ঘোষণা আসার পরেই ধ্বস নামে ভারতের পর্যটন শিল্পে। করোনা ধাক্কায় বেহাল পর্যটন শিল্প। মাসে গড়ে ৩০০ কোটি রুপির ব্যবসা এখন ঠেকেছে শূন্যের কোঠায়। করোনা আতঙ্কে পর বাতিল হয়ে যাচ্ছে বিদেশে বেড়ানোর প্যাকেজ। কয়েক দিনের মধ্যে ব্যবসা হারিয়ে মাথায় হাত আন্তর্জাতিক পর্যটন ব্যবসায়ীদের। আতঙ্কমুক্ত নয় অভ্যন্তরীণ পর্যটনও। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় ৩০ শতাংশ পড়েছে গিয়েছে অভ্যন্তরীণ পর্যটন ব্যবসাও। করোনা আতঙ্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রে । পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পে সবথেকে বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশি পর্যটকদের। এর মধ্যে একশ্রেণীর মানুষ আসেন চিকিৎসা করাতে, কেউ বা ঘুরতে বাকীরা আসেন ব্যবসায়িক কাজে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় বাংলাদেশিরা। ইতিমধ্যেই কলকাতার নিউমার্কেট চত্বর ছাড়তে শুরু করেছে অনেক বাংলাদেশি পর্যটক। সারা বছরই বিশেষ করে ঈদের সময় নিউমার্কেট চত্বর গমগম করে ওঠে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমনে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে সেই চেনা ছবি চলতি সপ্তাহ থেকেই উধাউ। সফর কাটছাঁট করেই কলকাতা ছেড়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে অনেক বাংলাদেশিদের। তবে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক সাগর আহমেদ জনি। তিনদিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন তিনি। এদিন দুপুরে কলকাতার মার্কুযিস স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন সীমান্ত বন্ধ রাখাটা যুক্তিযুক্ত বলেই আমি মনে করি। এটা ঠিক আছে। নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন এবং সুস্থ থাকার জন্যও এটা ভাল উদ্যোগ। করোনা নিয়ে ভারত সরকারের ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনার ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবস্যায়ীরাও। প্রখ্যাত বস্ত্রবিপননী সংস্থা মিলনের পক্ষে রাজেশ কুমার তিওয়ারি জানান দুই মাস পরেই ঈদ, ইতিমধ্যেই আমরা আমাদের স্টক মজুদ করে ফেলেছি। আমাদের পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ কাস্টমার বাংলাদেশি। ইতিমধ্যেই অনেক বাংলাদেশিরাও আসতে শুরু করে দিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ করেই করোনা আতঙ্কে চলতি মরসুমটা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নতুন পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতা বলেছেন, সামান্য অসুস্থতা বোধ করলে, বাড়িতে দু থেকে ৪ সপ্তাহ বিশ্রাম নিন। পাশাপাশি পরিবারের সকলের থেকে সাবধানে থাকতে হবে। কারও সঙ্গে হাত মেলাবেন না। হাত জোড় করুন। মুখের সামনে নয়, অন্তন ৫ মিটার দূর থেকে কথা বলুন। নখ পরিষ্কার রাখবেন। একঘন্টা পরপর ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন। এন এইচ, ১৪ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/38NH4fh
March 14, 2020 at 03:00AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন