ঢাকা, ১২ মার্চ - অনায়াসে, ক্রিকেট ব্যকরণের প্রায় শটই তার হাতে আছে। তিনি শটস খেলতে পারেন। অবলীলায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত তিন-চার বছরে অন্তত ডজনখানেক ইনিংস আছে তার, যার পরতে পরতে ছিল আত্মবিশ্বাস, সামর্থ্যে আস্থা, বাহারি ও দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক প্লে এবং চার ও ছক্কার ফুলঝুরি। কিন্তু কেন যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই লিটনের দেখা মেলেনি। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে সেই দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক প্লে দেখা গেছে কম। আর রানের ফল্গুধারা বয়েছে কালেভদ্রে। বেশির ভাগ ইনিংসই অকালে ঝড়ে পড়েছে। ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ একটি আলগা শট খেলে বিদায় নিয়েছেন লিটন দাস। এবারই প্রথম টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটের সিরিজেই দেখা মিলল এক অন্য লিটনের। প্রতি ম্যাচে তাকে দেখে মনে হয়েছে যেন আস্থার প্রতিমূর্তি। নিজের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাসটা যেন অনেক বেশি ছিল। আর বড় ও লম্বা ইনিংস খেলায় মনোযোগ ছিল প্রচুর। কিছু করার দৃঢ় সংকল্পটা ছিল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সাফল্যও ধরা দিয়েছে। ছোট্ট এক পরিসংখ্যানই বলে দেবে লিটন কত ভালো পারফরম করেছেন। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, টেস্ট (৫৩), ওয়ানডে (১২৬+৯+১৭৬) আর টি-টোয়েন্টি (৫৯+৬০*) মিলে ছয় ইনিংসে লিটন দাস করেছেন ৪৮৩ রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই চার ও ছক্কার অনুপম প্রদর্শনী আর রানের নহর বইয়ে দেয়া লিটন দাসকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত ভালো খেলতে আর প্রচুর রান করতে কে দেখেছেন কে কবে? লিটন নিজে কি এতটা ভেবেছিলেন? তাহলে লিটনের মুখ থেকেই শোনা যাক সে সাফল্যর গল্প। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সফল সিরিজের পর আজ (বুধবার) রাতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে সে সাফল্যর পেছনের কাহিনি শোনালেন লিটন দাস। প্রশ্ন উঠল- টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে ৫০০ রান করলেন প্রায়। এমন প্রত্যাশা কী ছিল? লিটন দাসের অকপট স্বীকারোক্তি, না ভাই। সত্যি বলতে কি প্রত্যাশা কখনই এমন ছিল না। তবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, টি-টোয়েন্টিতে ফিফটির আশা করাই যায়। তার ভাষায়, আজকের ম্যাচ যদি চিন্তা করা যায়, অনেক ইজি ছিল। ব্যাটিং করা ইজি ছিল না। প্রতিটি বলই চ্যালেঞ্জিং। তবে কোনো প্রেশার ছিল না। তাড়াহুড়ো ছিল না। আমার জন্য ইজি ছিল। ওভার-অল ভালো গেছে। সাম্প্রতিক সময় মিডিয়ার সাথে আলাপে বলেছিলেন, ক্রিকেট খেলাটা হতাশার। এখন এত ভালো খেলার পরও কি তা মনে হচ্ছে? লিটনের জবাব, একটি সিরিজ ভালো কেটেছে , তাই কি আর কথা পাল্টে ফেলা যায়। আবার খারাপ সময় আসলে? তখন কী বলব? আসলে ক্রিকেটে আপস অ্যান্ড ডাউন থাকবেই। জিম্বাবুয়ের এ দলটিকে অতি দুর্বল কমজুরি ভাবা হচ্ছে। জিম্বাবুইয়ান বোলিংকে একদমই নির্বিষ ভাবা হচ্ছে। এমন বোলিংয়ের বিপক্ষে রান করা ও ভালো পারফরম করা কতটা সন্তুষ্টির? সেটা কি ধর্তব্য? লিটন কি তা মনে করেন? উত্তরে লিটন দাস বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আসলে প্রতিপক্ষ বোলিংয়ের মান, সামর্থ্যের চেয়েও বড় কথা হলো নিজের ভালো খেলার ইচ্ছা। দৃঢ় সংকল্প আর ফোকাস থাকা। তাই মুখে এমন কথা, হ্যাঁ জিম্বাবুয়ের বোলিংয়ে খুব অ্যাটাকিং বোলার নেই। বোলিং লেভেল একটু কম। তবে সাফল্যর জন্য আসলে দরকার নিজে ফোকাস থাকা। প্রতিপক্ষ বোলিং যেমনই হোক না কেন? প্রতিদ্বন্দ্বী বোলার এমপফু না, মিচেল স্টার্ক যেই থাকুন না কেন? ফোকাসটা একই থাকা একান্তই দরকারি। তাকে এই জেনারেশনের একজন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ধরা হয়। তিনি নিজে কি ভাবেন? তার নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন কী? লিটন মোটেই তা ভাবেন না। তার ভাষায়, আমি আসলে এভাবে চিন্তা করিনি কখনও। জানি না আপনারা কীভাবে রেট করেন কিনা? তবে এ সিরিজে ভালো খেলার পেছনের গল্পটা ঠিক শুনিয়েছেন লিটন। তার ধারণা, এ সিরিজে তার ভালো খেলার ইচ্ছে, দৃঢ় সংকল্পটা অনেক বেশি ছিল। তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক মনোযোগ-মনোসংযোগীও ছিলেন। এর আগেও আমি পারফরমেন্স করেছি। রান করেছি। তবে এক ম্যাচের পর একটু বেশি রিলাক্স হয়ে যেতাম। কিছুটা হলেও হয়তো ফোকাস কমে যেত। মনোযোগ-মনোসংযোগ একটু হলেও কমে যেত। মনে হতো এক ম্যাচে রান করেছি। রান হয়ে যাবে। কিন্তু এবার পুরো সিরিজে আমি চিন্তা করেছি প্রতিটি ম্যাচই নতুন। আমি ফুল ফোকাস ছিলাম। প্রতি বলে অনেক ফোকাস ছিলাম। শট সিলেকশনেও ছিলাম খুব চ্যুজি। বলের মেধা ও গুণ বিচার করে খেলার চেষ্টা করেছি। ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টাও ছিল কম। তবে এটাই শেষ নয়। তার শেষ কথা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, আগামীতে পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১২ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3aOlnNI
March 12, 2020 at 03:22AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন