ঢাকা, ৩১ মার্চ - এটা চল না, তেমন রীতিও নয়। তবে এখন কেন যেন খুব কম চোখে পড়ে। না হয় একসময় বিশ্ব ক্রিকেটে দুই ভাইয়ের জাতীয় দলের হয়ে একসঙ্গে খেলা ছিল দেখার মতো বিষয়। পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ, মোস্তাক মোহাম্মদ ও সাদিক মোহাম্মদ- তিন ভাই একসঙ্গেই টেস্ট খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের স্বর্ণসময়ের দুই সারথী স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহর নাম একসময় ছিল সবার মুখে মুখে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম রুপকার ছিলেন দুই ভাই স্টিভ ওয়াহ-মার্ক ওয়াহ। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা পারফরমারদের তালিকায় খুব ওপরের দিকেই আছে দুই ভাইয়ের নাম। স্টিভ-মার্কের আগে অসিদের হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন তিন ভাই গ্রেগ চ্যাপেল, ইয়ান চ্যাপেল ও ট্রেভর চ্যাপেল। ওয়াহ ভাইদের মতো বিশ্বকাপ হয়তো জেতাতে পারেননি, তবে চ্যাপেল ভাইদের মধ্যে ইয়ান ও গ্রেগ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়। অসি ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার অন্যতম অংশীদার এই চ্যাপেল ভাইরাও। বিশ্বজোড়া খ্যাতি না থাকলেও একদম কম যাননি নিউজিল্যান্ডের জেফ ক্রো আর মার্টিন ক্রোও। দুই ভাইই নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেফ ক্রোর অধীনে ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশে হওয়া প্রথম বিশ্বকাপে খেলে গেছে নিউজিল্যান্ড। পরের আসরে ১৯৯২ সালে দেশের মাটিতে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছোট ভাই মার্টিন ক্রো। ভারতের দুই ভাই ইউসুফ আর ইরফান পাঠানও মাঝে কয়েকটি বছর জাতীয় দলের হয়ে একসাথে খেলেছেন। নৈপুণ্যের দ্যুতিতে মাঠও মাতিয়েছেন। পাঠান ভাইদের পূর্বসুরি মহিন্দর অমরনাথ এবং সুরিন্দর অমরনাথও আশির দশকে একসঙ্গে টেস্ট খেলেছেন ভারতের জাতীয় দলের হয়ে। ভাইদের গল্প এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। শুধু ভাই হিসেবে নয়, ক্রিকেটার হিসেবেও যাদের আছে বিশ্ব জোড়া খ্যাতি ও অন্যরকম পরিচতি। সেই তালিকায় খুব ওপরের দিকে আছে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের নাম। এই দুই ভাই জিম্বাবুয়ান ক্রিকেটের সবসময়ের দুই অন্যতম সফল পারফরমার, অনেক বড় তারকা। এছারাও রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল হাসি ও ডেভিড হাসি আর শন মার্শ ও মিচেল মার্শ; আয়ারল্যান্ডের কেভিন ওব্রায়েন ও নেইল ওব্রায়েন; নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও নাথান ম্যাককালাম, হ্যামিশ মার্শাল ও জেমস মার্শাল; পাকিস্তানের কামরান আকমল ও উমর আকমল; দক্ষিণ আফ্রিকার আলবি মরকেল ও মরনে মরকেল আর সবশেষ এখনও খেলে যাচ্ছেন ভারতের হারদিক পান্ডিয়া আর ক্রুনাল পান্ডিয়া। এদের মানের না হলেও কেনিয়ার স্টিভ টিকোলো ও এডওয়ার্ড টিটো আর টনি সুজি ও মার্টিন সুজি ভাতৃদ্বয়ও একসঙ্গে বেশ কিছু ওয়ানডে খেলেছেন। এই সব মানিক জোড়রা বিশ্ব ক্রিকেটের উজ্জ্বল তারা হয়ে আছেন। তার মানে দাঁড়ালো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ড ছাড়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের সহোদর ভাইরা কোন না কোন সময় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, একসঙ্গে মাঠ মাতিয়েছেন। অন্য সব দেশের ভাইদের নাম শুনে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, আচ্ছা বাংলাদেশের কোন সহোদর ভাই নেই যারা জাতীয় দলে কখনও একসঙ্গে খেলেছেন? ওপরের লেখাটুকু পড়ার পর অমন প্রশ্ন উঁকি দেয়াই যে স্বাভাবিক। তাহলে শুনুন, বাংলাদেশের দুই ভাইয়েরও আছে একসঙ্গে ওয়ানডে খেলার রেকর্ড। তারা কারা? নুরুল আবেদিন নোবেল আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। আজ থেকে ঠিক ৩৪ বছর আগে (১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ) শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় বাংলাদেশের ওয়ানডে অভিষেকে একসঙ্গে খেলেছেন দুই ভাই নুরুল আবেদিন নোবেল আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবেদিন কলোনির দুই আপন ভাই নান্নু-নোবেল শুধু দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে খেলাই নয়, ১৯৯০ সালে হল্যান্ডে একসঙ্গে আইসিসি ট্রফিও খেলেছেন। সেই প্রথম আর আর সেই শেষ। তারপর আর কোনও মানিক যুগল টিম বাংলাদেশর হয়ে ওয়ানডে, টেস্ট বা টি-টোয়েন্টি খেলেননি। জাতীয় দলের হয়ে না খেললেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই ভাইয়ের একসংগে খেলার রেকর্ড আছে অনেক। ক্লাব ক্রিকেটে সেলিম-মাইনু ভাতৃদ্বয় ছিলেন সত্তর দশকের সবচেয়ে সফল ও নামী ভাতৃদ্বয়। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম আইসিসি ট্রফি খেলতে গেলেও ঠিক ঐ সময়ে মাইনুল হক মাইনু উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ চলে যাওয়ায় আর আইসিসি ট্রফি খেলতে পারেননি। এছাড়া ইউসুফ বাবু, সামিউর রহমান সামি- দুই ভাই এক সঙ্গে আইসিসি ট্রফি খেলেছেন। ছোট ভাই সামিউর রহমান সামি দুটি ওয়ানডে খেললেও, বড় ভাই ইউসুফ বাবুর ওয়ানডে খেলা হয়নি। আরও কিছু ভাতৃদ্বয় খেলেছেন দেশের ঘরোয়া। তারা হলেন আইয়ুব-বিল্লু, আসাদুজ্জামান মিশা-তারিকুজ্জামান মুনির, ইয়াফি-খালেদ মাহমুদ সুজন, মুনির আলী খান-মোহাম্মদ আলী, আকরাম খান-আফজাল খান, নাফিস ইকবাল-তামিম ইকবালও একসঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ আকরাম খান ও তার ছোট ভাই আফজাল খানও রেলওয়ের হয়ে একসঙ্গে ঢাকা লিগে অংশ নিয়েছেন। আকরাম খানের ভাইপো চট্টগ্রাম তথা দেশের ফুটবল ও ক্রিকেটাঙ্গনের পরিচিত মুখ প্রয়াত ইকবাল খানের দুই সন্তান নাফিস ইকবাল আর তামিম ইকবাল চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন। কিন্তু এ দুই ভাইয়ের একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলা হয়নি। সেই বিরল কৃতিত্বটি বাংলাদেশে শুধু মাত্র নোবেল-নান্নু দুই ভাইয়েরই আছে। জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের আগে ও পরে নান্নু আর নোবেল দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়াসংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়েও খেলেছেন। পাশাপাশি ঢাকা মোহামেডানের হয়েও দুই ভাই একসঙ্গে কয়েক বছর দাপটের সাথে ঢাকা লিগ খেলেছেন। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ৩১ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2X7qbu3
March 31, 2020 at 10:36AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন