ঢাকা, ২৮ মার্চ - গৃহবন্দি হয়ে থাকার একঘেয়েমিতে তাঁকেও পেয়ে না বসার কোনো কারণ নেই। তবু সেটি অবলীলায় মেনে নিচ্ছেন তিনি। কারণ জীবনের চেয়ে বড় কিছু তো আর নেই। মুশফিকুর রহিম শুধু নিজে বাঁচতে চান না, তাঁর চাওয়া সরকারের নির্দেশনা মেনে বেঁচে যাক পুরো দেশ এবং দেশের সব মানুষ। করোনাভাইরাসের থাবা এড়াতে তাই আবারও ঘরে থাকার প্রবল আকুতি জানিয়ে বলেছেন কিছু কথা। তাঁর জবানিতেই সেসব তুলে ধরেছেন মাসুদ পারভেজ আমরা সবাই মিলে যেন গভীর এক অন্ধকার রাত্রি পার করছি। আশা করছি ভোরের স্নিগ্ধ আলো ফুটবেই। তবে সেই ভোর দেখতে হলে আমাদের সবারই যার যার জায়গা থেকে অনেক কিছু বিসর্জন দেওয়ারও দরকার আছে। আমি দিতে প্রস্তুত, আশা করছি সেই প্রস্তুতি আপনাদেরও আছে। প্রথম কথা হলো, একদম ঠেকে না গেলে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। দেখুন এই ১০ দিনে আমি যদি মাছ-মাংস নাও খেতে পারি, তাও আমার সমস্যা নেই। না বের হয়ে এই সময়ে শুধু ডিম ভাজি দিয়ে খেতেও আমি রাজি আছি। কষ্টের সময়গুলো এভাবেই সামলাতে হয়। আমি সামলাচ্ছি, আশা করি আপনারাও নিজেকে নিরাপদ রাখতে সামলে নেবেন। আপনারা জানেন, আমরা এরই মধ্যে ২৭ জন ক্রিকেটার মিলে একটি তহবিল গঠন করেছি। বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ বলে ব্যক্তিগতভাবেও কিছু করা এখন কঠিন। কিছু কিনে মানুষের কাছে পৌঁছানো তাই সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করছি তাদের জন্য, যাদের আমার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। যেমনআমার বাসায় যারা গৃহকর্মের কাজে নিয়োজিত ছিল, তাদের আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, ১০-১২ দিন যাতে কিছু কিনে নিশ্চিন্তে বাসায় থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছি। তাদের বাড়তি নগদ টাকা দিয়েছি। বাসার দারোয়ান বা সিকিউরিটি গার্ড যারা আছে, তাদের জন্যও কিছু করার চেষ্টা করেছি। বাসার আশপাশে যারা আছে, যাদের কাছে একটু হেঁটেই পৌঁছানো সম্ভব, চেষ্টা করছি তাদের জন্যও কিছু করতে। সাধারণ ছুটির পর যদি এ রকম কঠিন পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কেটে যায়, তখন বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব হলে অবশ্যই করব ইনশাআল্লাহ। ধরে নিচ্ছি, আপনারাও এরই মধ্যেই এ রকম মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যেই অনেককে দেখেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক কিছু করছে। অবশ্যই তাদের সাধুবাদ জানাই। অনেকেই আছে, যারা খবরেও আসতে চায় না, নীরবেই করছে, মন থেকেই করছে। তাদেরও আমার হূদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ। এখন অনেক কঠিন সময় যাচ্ছে। আমাদের সরকার ভালোর জন্যই একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটিকে অবশ্যই সমর্থন করা উচিত। অবশ্যই ঘরে থাকা উচিত। ঘরে নিরাপদে থাকা উচিত। সেদিন নিউজে দেখলাম, এক ভদ্রলোক নিষেধ করার পরও বাইরে বেরিয়েছেন এবং গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন যে গণপরিবহন বন্ধ করেছে, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি তো বন্ধ করেনি। আমি মনে করি, এর মধ্যে সাধারণ মানুষের বোঝার ভুল রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগটি যেন একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে না যায়। কিন্তু এই নিশ্চয়তা কি কেউ এখন পর্যন্ত দিয়েছে যে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলে এই রোগ আপনাকে ছুঁয়ে ফেলবে না। এমনও তো হতে পারে যে ব্যক্তিগত বাহন নিয়ে বের হওয়া আপনার মাধ্যমেই রোগটি নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল। আপনার পরিবারের সদস্যরা বাইরে বের হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু আপনার মাধ্যমেই রোগটি তাদের মধ্যেও চলে যেতে পারে। বলা হচ্ছে, ১০-১৫ দিন অত্যন্ত ঝুঁকির। সুতরাং এই সময়টায় আমরা যেন সতর্ক থাকি। আমরা যদি কথা না শুনি ও সমর্থন না করি, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা প্রশাসনের পক্ষে সামলানো খুব কঠিন। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশগুলোও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। তার মানে নির্দেশনা না মানলে এই রোগের ভয়াবহতা আরো তীব্র হতে পারে। তাই আমার বিনীত অনুরোধ, অনেক...অনেক...অনেক জরুরি কাজ না হলে আপনারা বাইরে বের হবেন না। শ্রমজীবী মানুষ বা যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের জন্য কিন্তু আরো ভয়াবহ অবস্থা। এ জন্যই প্রশাসন দায়িত্ব নিচ্ছে, এসব মানুষকে খুঁজে বের করে কিভাবে তাদের কাছে খাবার পৌঁছানো যায়। জানি না সেটি কতটুকু সম্ভব হচ্ছে। সবার আগে নিজের স্বাস্থ্য। তবে আমি ভাবতে বলব নিজের পরিবারের সদস্য এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের কথাও। এভাবে ভেবে উদ্যোগী হলে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ থাকব। ধরুন ৪০ জন মানুষকে আপনি নিরাপত্তার বিষয়টি বোঝানোর দায়িত্ব নিলেন বা বোঝাতে সক্ষম হলেন, এ রকম করে সবাই দায়িত্ব নিলে এই অন্ধকার দ্রুত কেটে যাবে। বাইরে বেরিয়ে অনেকের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। অনেককে হয়তো পেটানো হচ্ছে। অনেক সময় ভালোভাবে কথা বললেও অনেকে শোনে না। এ রকম করলে হয়তো শোনানো যায়। ভয় পায়। আমি বলব ভালোভাবে বোঝানো যায়। এখন সময় ক্রিটিক্যাল। সবাইকে সেটি বুঝতে হবে। তাই বলে আমি বলছি না যে পিটুনি দিতে হবে। অন্য কোনো শাস্তিও হতে পারে। একটি উদাহরণ দিই। নিউজে দেখলাম এক ক্লাব ফুটবলারের ঘটনা। সে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিল। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সে সেখান থেকে বেরিয়ে বান্ধবীর জন্মদিন উদ্যাপন করতে যায়। সে ধরাও পড়ে। এবং সেই দেশের আইনে এমনও বিধান আছে যে এভাবে নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য সর্বোচ্চ ১২ বছরের জেলও হতে পারে। চিন্তা করুন, কত বড় শাস্তি! এই জিনিসগুলো আমাদের সবাই যেন বোঝে। এটিও মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তো ঝুঁকিমুক্ত নন। তবুও তাঁরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন। ডাক্তার ও নার্সদের আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তাঁদেরও পরিবার আছে, ঝুঁকি তাঁদেরও আছে। তবুও তাঁরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের একটু সমর্থন করুন। ভাববেন না যে এটি শুধু তাঁদেরই কাজ। এটি শুধু প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ডাক্তার-নার্সদের কাজ নয়। এটি আমারও কাজ। প্রতিটি নাগরিককে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এটি আমারও দেশ। সরকারের, প্রশাসনের বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেশ নয়। তাই এই দেশকে নিরাপদ রাখা, ভালো রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব তাই আমারও। এই চিন্তা একজন ধনীকেও করতে হবে, করতে হবে এমনকি একজন রিকশাচালককেও। সবাই মিলে যদি একইভাবে ভেবে এগোই, তাহলেই অন্ধকার রাত্রি ভেদ করে প্রত্যাশিত ভোরের দেখা পাব। সূত্র : কালের কণ্ঠ এন এইচ, ২৮ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3bxzcAp
March 28, 2020 at 03:11AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন