সিলেট, ০৭ মার্চ - শেষ হলো অধিনায়ক মাশরাফি উপাখ্যান। (৬ মার্চ) রাতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষবারের মত লাল সবুজ জার্সি গায়ে নেতৃত্ব দিলেন মাশরাফি। প্রিয় ক্রিকেটার, পেস বোলার আর অধিনায়ককে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে মাঠে ছুটে এসেছিলেন অন্তত হাজার ১৫ ক্রিকেট অনুরাগী ভক্ত-সমর্থক। খেলার এক পর্যায়ে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়েছে স্টেডিয়াম ও তার চারপাশ। গ্যালারিতে থাকা ভক্তরা কাকভেজা হয়েও মাঠ ছাড়েননি। অধিনায়ক মাশরাফিকে বিদায় জানাতে, তাকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুল সরে আসেননি কেউ। এমন এক দিনে দল জিতেছে ১২৩ রানের বড় ব্যবধানে। দুই ওপেনার লিটন দাস আর তামিম ইকবালের রেকর্ডে মোড়ানো সাফল্যে আরও রঙিন, বর্ণিল হয়েছে মাশরাফির বিদায়ের দিনক্ষণ। যাকে নিয়ে এত হইচই, ভক্ত-সমর্থকদের চোখের জলে বিদায় জানানো- সেই মাশরাফির অনুভূতি কী? তার কেমন লাগলো আজ? অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবার পর এখন কেমন লাগছে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? মাশরাফি স্বীকার করেছেন, হ্যাঁ অসম্ভব ভাল লাগছে। আমরা জিতেছি। বেশ ভাল খেলে অনেক সাফল্যে মোড়ানো জয়ই পেয়েছি। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, আসলে বিদায়টা সবসময়ই একেকজনের কাছে একেকরকম। কারও কাছে ভাল, কারও কাছে খারাপ। কারও জন্য সুখের আবার কারও জন্য কষ্টের। তবে আমার অনুভূতি মিশ্র। আমার ভাল-খারাপ উভয়ই লাগছে। অধিনায়ক হিসেবে খুব ভাল ভাবে শেষ করতে পেরেছি। সেটাও অন্যরকম ভাল লাগার। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর কেমন লাগছে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, একটা কাজ তো কমে গেলো। বড় দায়িত্ব ছিল, কমে গেলো। সত্যি বলতে এটা ভালো লাগছে যে অধিনায়ক হিসেবে দলকে একতা ভালো জায়গায় রেখে শেষ করতে পারছি, আর জিতেও শেষ হয়েছে। শুধু পরিসংখ্যানই নয়। সব হিসেব নিকেশ আর আলোচনা-পর্যালোচনয় তিনিই বাংলাদেশের সবসময়ের সফলতম অধিনায়ক। এ সাফল্যের রহস্য জানতে চাওয়া হলে মাশরাফি অন্য কোনোরকম ব্যাখ্যায় না গিয়ে সোজা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, আসলে এ সাফল্যে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে চাই না। অধিনায়ক মাশরাফিকে ব্যক্তি মাশরাফি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও কৌশলী মাশরাফি, আসলে নিজের সম্পর্কে কী মূল্যায়ন করবো? আমি নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে কখনও আলাদাভাবে চিন্তা করিনি। এটা আমার মাথায় আসতো না কখনওই। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময় তিনি মিডিয়াবান্ধব। মিডিয়ার সাথে তার সম্পর্কটাও অন্যরকম। কিন্তু ক্যারিয়ার সায়াহ্নে কি কখনও মিডিয়াকে শত্রু মনে হয়েছে? মাশরাফির জবাব, নাহ তা মনে হয়নি। মিডিয়ার কাজ বিষয়টা তুলে ধরা। ভাল হলে ভাল। খারাপ হলে খারাপ। আমার মনে হয় না মিডিয়া কোনো সময় আমার প্রতিপক্ষ হয়েছে। আমি মনে করি আমি, সাকিব, তামিম, মুশফিক আর লিটনরা- যেই আজকের পর্যায়ে এসেছি, তাদের সবার উঠে আসায় মিডিয়ার ভূমিকা আছে। অবদানও অনেক। অধিনায়কত্ব শেষ। এখন ক্রিকেটার হিসেবে খেলা চালিয়ে যেতে চান। নিজের বর্তমান ফর্মকে কিভাবে দেখেন? জানতে চাওয়া হলে মাশরাফি বলেন, বিশ্বকাপে আমি ভাল করিনি। খুব খারাপ খেলেছি। আমার মনে হয় যদি মাঝখানে কয়েকটি উইকেট পেতাম তাহলে অত খারাপ যেত না। দলও হয়তো এক-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততো। মাশরাফি বোঝানোর চেষ্টা করেন, প্রত্যেক ক্রিকেটারেরর ক্যারিয়ারে কখনও না কখনও খারাপ সময় আসে, তারও এসেছিল। তবে মাশরাফির অনুভব, এখন সেই বিশ্বকাপের খারাপ অবস্থা থেকে খানিক উত্তরণ ঘটেছে। তার ব্যাখ্যা, আসলে খারাপ সময় থেকে উঠে দাঁড়াতে খানিকটা সময় দরকার। ফর্ম, আস্থা, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য একটু সময় দরকার। কিছু ভাল পারফরমেন্সও প্রয়োজন। আমার মনে হয় সাম্প্রতিক সময়ে আমি তা করতে পেরেছি। তবে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তারও নিজেকে ফিরে পেতে হয়তো আরও খানিকটা সময় লাগবে। পেস বোলার মাশরাফি কি পাকিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুত? মাশরাফির জবাব, এটা নির্বাচকরাই ভাল বলতে পারবেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক কোচের সঙ্গেই কাজ করেছেন। এদের মধ্যে কাকে মনে ধরেছে? কার সঙ্গে কাজ করে ভাল লেগেছে? মাশরাফির ব্যাখ্যা, আমার সঙ্গে হয়তো তেমন ভাল বোঝা পড়া ছিল না। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আমি যাদের পেয়েছি, তাদের ভেতরে এক নম্বর হলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ভাবা হয়, মাশরাফির টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়ার পেছনে হাথুরুসিংহের হাত ছিল। তিনি চাননি মাশরাফি আর টি-টোয়েন্টি খেলুক। তাই অনেকটা অভিমান করেই ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন মাশরাফি। তারপরও তার মূল্যায়ন হাথুরুসিংহে তার দেখা সেরা কোচ। মাশরাফির অনুভব, হাথুরুসিংহেই আসলে বাংলাদেশকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্তরণে তার অবদানই বেশি। এরপর জেমি সিডন্সের কথা মনে হয়। তামিম, মুশফিক আর সাকিবের ব্যাটিংয়ে উন্নতির পিছনে জেমি সিডন্সের অবদান প্রচুর। অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন। এখন ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে থাকতে চান। সেই ক্রিকেটার মাশরাফির বিদায় নিয়ে ভাবনা কী? আপনি কি খেলার মাঠ থেকেই বিদায় নিতে চান? মাশরাফির খানিক রসিকতায় ভরা জবাব, আসলে বিদায় তো বিদায়ই। সেটা মাঠ থেকেই কী? আর মাঠের বাইরে থেকেই বা কী? কোন কিছু তেমন আলাদা বিষয় না। নিজে আর ওয়ানডে অধিনায়ক থাকবেন না। তবে মাশরাফির আশা বাংলাদেশ আগামী বিশ্বকাপে খুব ভাল করবে এবং সেমিফাইনাল খেলবে। ওয়ানডেতে টিম বাংলাদেশের আগামী দিনের সম্ভাবনা কতটা? প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি বলে ওঠেন, আমি খুব আশাবাদী। আমার মনে হয় ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনাল খেলবো। খেলা হবে উপমহাদেশে (ভারতে)। আর আমাদের নবীন ও তরুণ প্রজন্ম তখন একদম পরিণত হয়ে উঠবে। এখন যারা বয়সে তরুণ ও পুরোপুরি পরিণত হয়ে ওঠেনি, তারা সবাই ঐ বিশ্বকাপের আগেই টগবগ করে ফুটতে শুরু করবে। তাই আমরা বিশ্বাস, আগামী বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনাল খেলব। দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথার ভিড়েও মাশরাফি ভক্ত-সমর্থক, সুহৃদ-শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। তার ক্যাপ্টেন্সির শেষ ম্যাচে সিলেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেট অনুরাগীর ঢল নেমেছিল এবং পুরো সময় দর্শক, সমর্থক ও ভক্তরা তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। তার বিদায়ের দিনে গ্যালারিতে ছিল অন্যরকম উন্মাদনা। সেটা তার খুব ভাল লেগেছে। তিনি খুব উপভোগও করেছেন। সে কথা জানিয়ে মাশরাফি বলেন, গরম ও বৃষ্টি উপেক্ষা করেও দর্শক ও ভক্ত-সমর্থকরা দীর্ঘ সময় মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই অনেক কষ্ট করেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। দর্শক ও ভক্তদের ঐ ভালোবাসায় আমি রোমাঞ্চিত। সত্যিই আমার খুব ভাল লেগেছে। আমার কৃতজ্ঞতা তাদের সবার প্রতি। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৭ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2v0R7Qh
March 07, 2020 at 02:12AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন