করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ঠ বৈশ্বিক মহামারি শেষে পুরো দুনিয়াটাই বদলে যাবে বলে এখন থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। করোনা যেভাবে সারা বিশ্বকে ঘরে বন্ধী করে ফেলেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসেই নজিরবিহীন। মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনার পাশাপাশি খেলাধুলার জগতেও আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে- তা এখনই বলে দেয়া যায়। ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিতো তেমন শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। তিনি বলে দিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়টাতে ফুটবল নিশ্চিতভাবেই বদলে যাবে। আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। তবে, ফুটবলের ভবিষ্যৎ কি হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে ইনফ্যান্তিনোর কাছে মনে হয়, ফুটবলের পরিবর্তনটা হবে ইতিবাচক। তিনি মনে করেন, করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের কাছে ফুটবল হয়তো কিছুটা গ্ল্যামার হারাবে। কিন্তু মানুষ একে অনেক বেশি গ্রহণও করে নেবে। ইতালির সংবাদ সংস্থা লেখা এক কলামে তিনি লেখেন, এমন এক সময় আসবে, যখন আমাদেরকে ফুটবল নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে করতে হবে। আমরা হয়তো ফুটবলকে নিয়ে যাত্রা শুরু করবো দুঃস্বপ্নের এক রাত শেষে দিন যেভাবে শুরু হয়, সেভাবে। এরপরই তিনি বদলে যাওয়ার কথা নিয়ে আসেন। ফিফা প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনাভাইরাসের পর ফুটবল সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ নিতে পারে। আমূল বদলে যেতে পারে ফুটবলের ভবিষ্যৎ। করোনার পর ফুটবল হয়ে উঠবে সমষ্টিগতভাবে আরও বেশি সামাজিক। ফুটবল স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে এক সুতোয় বাধতে সহায়তা করবে। ওই সময় ফুটবল এমন একটি বিশ্বব্যাপী খেলা হয়ে উঠবে, যা কম অহঙ্কারী হবে এবং একে মানুষ আরও বেশি স্বাগত জানাবে। তবে একটি বিষয় সম্ভবত পাল্টাবে না, তা হলো গোল উদযাপন। সেটা আগের মতই থেকে যাবে। করোনার পরবর্তী সময়ে মানুষও বদলে যাবে বলে মনে করেন ইনফ্যান্তিনো। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই জয়ী হবো এবং আরও মানবিক হবো। একই সঙ্গে আরও বাস্তব মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবো। ফিফা প্রেসিডেন্টের আশা, ইতালি থেকেই এই পরিবর্তনের সূচনা হবে। তারা যে কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিচ্ছে, তাতে করে সেরাটাই হয়তো তারাই দিতে পারবে। ইনফ্যান্তিনো হচ্ছেন ইতালিয়ান সুইস। অর্থ্যাৎ মা-বাবা ইতালির। কিন্তু তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সুইজারল্যান্ডে। এ কারণেই ইতালির প্রতি অনেক টান ফিফা প্রেসিডেন্টের। আশা করছেন, দ্রুতই ইতালি এই বিপর্যয় কাটিতে উঠতে পারবে। শুধু ইনফ্যান্তিনোই নন, ইউরোপিয়ান ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমূল বদলে যাবে ফুটবল। স্প্যানিশ ফুটবল সাংবাদিক গ্রাহাম হান্টার। ইএসপিএন সকারনেটের ফুটবল রিপোর্টার। ফুটবল নিয়ে লেখেন কলামও। করোনাভাইরাসের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার কলমে উঠে এসেছে ফুটবলের ভবিষ্যতের গল্প। ২৫ বছরেরও বেশি ফুটবল নিয়ে রিপোর্টিং করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাহাম যেন দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছেন, ফুটবলের ভবিষ্যৎ। তার মতে, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে আমুল বদলে যাবে ফুটবলের ভবিষ্যৎ। যা মানুষের ধারণারও অনেক দুরে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এমন একটা অনিবার্য সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি, যেটা নিয়ন্ত্রন আপাতত মানুষের হাতে নেই। সাধারণ মানুষ (বিশেষত ইউরোপে) কোনোভাবেই পারছে না, তাদের জীবন রক্ষায় করোনাভাইরাসকে ঠেকিয়ে রাখতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মানুষই বাধ্য হচ্ছে তাদের জীবনাচরণ বদলে ফেলতে। গ্রাহাম হান্টার লিখেছেন, সারা বিশ্বেই স্বাভাবিকভাবে সমস্ত খেলাধুলা এখন বন্ধ। করোনাভাইরাসের কারণে ইউরোপের ফুটবল অনেক আগেই স্থগিত কিংবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২৫ বছর লা লিগা কাভার করার অভিজ্ঞতা আমার। এবারই দেখলাম, ১০ মার্চ এই লিগটি বন্ধ হয়ে যেতে। কারণ, সারা বিশ্বেই স্বাস্থ্য বিভাগ এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এখনও পর্যন্ত প্রচুর মানুষ আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুবরণ করেছে। এই কলাম যখন লিখছি, তখন প্রচুর মানুষ রয়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। প্রচুর মানুষ রয়েছে দারুণ ঝুঁকিতে। যে বিষয়টা অনেক কিছুকেই এখন ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে ফুটবল কিংবা খেলাধুলা নিয়ে কিছু লেখা এবং পাঠকের আগ্রহ তৈরি করার চেয়ে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা মানুষের জীবন সম্পর্কিত। ফুটবলের চেয়ে তো এখন মানুষের জীবনই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনও অনেক মানুষ আছে, যারা ফুটবলছাড়া বাঁচার কথা চিন্তাই করতে পারে না। তাদের ভালোবাসার নামই হচ্ছে ফুটবল। এ কারণে ফুটবলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা বিচলিত হন। কিন্তু এখন এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলো ফুটবলের প্রতি এসব আবেগ এবং ভালোবাসার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্থগিত হওয়া মৌসুমের নতুন তারিখ নির্ধারণ কবে হবে, মৌসুম কি আদৌ থাকবে কি থাকবে না- সেটা নিয়েই এখন চিন্তা। কেউ কেউ বলছে, ক্লাব ফাইনালস এবং লিগের সূচি আগামী জুন-জুলাইতে নির্ধারণ করতে। যদিও কোপা আমেরিকা এবং ইউরো পিছিয়ে দেয়া হয়েছে এক বছর। ২০১৯২০ মৌসুম আদৌ শেষ করা যাবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে এখন পুরো বিশ্ব। তবে, করোনার পরবর্তী সময়ে নতুন করে কিভাবে ফুটবল শুরু করা যাবে, সে পরিকল্পনাই এখন করা প্রয়োজন কর্মকর্তাদের। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি আরও বেশি দীর্ঘায়িত হলে পৃথিবীর অধিকাংশ ক্লাবই দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করলেন গ্রাহাম হান্টার। কারণ, একের পর এক রাজস্ব হারা হচ্ছে ক্লাবগুলো। একই সঙ্গে তাদের খরচের বিশাল বোঝা এখনও রয়েছে ঘাড়ের ওপর। শেষ পর্যন্ত কি পরিস্থিতি দাঁড়ায়, সেটাই বলা মুস্কিল। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৫ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/348BgfM
April 05, 2020 at 03:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন