নয়াদিল্লী, ২৪ এপ্রিল - তাকে বলা হয় ক্রিকেট ঈশ্বর। তর্কসাপেক্ষে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে তার নামের পাশে ১০০ সেঞ্চুরি। অথচ এমন এক ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। নিজেই নিজেকে বলেছিলেন-নাহ, তোমাকে দিয়ে হবে না! বলছি শচিন টেন্ডুলকারের কথা। যাকে দেখে লাখো তরুণ ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেয়ার স্বপ্ন দেখে, সেই শচিনেরই স্বপ্ন ভাঙতে বসেছিল একটা সময়। ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিলেন। বুকে জমা এক পাহাড় হতাশা আওয়াজ করে বলছিল-এখানেই শেষ তোমার। বয়স তখন মাত্র ১৬। বালক শচিনের অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে। সেই সময় যে দলটির বোলিং আক্রমণে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আবদুল কাদিরের মতো বাঘা বাঘা নাম। শচিনের কি একটুও ভয় করেনি? ভয় করেনি মানে? ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হোসেনের সঙ্গে স্কাই স্পোর্টসের এক অনুষ্ঠানে ভারতের মাস্টার ব্লাস্টার এই ব্যাটসম্যান জানালেন তার সেই শুরুর গল্প। ভেঙে পড়ার মাঝে তাকে জাগিয়ে তুলেছিল একজনের পরামর্শ, সেই মানুষটির কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন শচিন। করাচিতে সে অভিষেক টেস্ট নিয়ে ভারতের লিটল মাস্টার বলেন, আমার আসলে কোনো ধারণাই ছিল না। স্বীকার করতেই হবে, আমি প্রথম টেস্টটা এমনভাবে খেলেছিলাম যেন স্কুলের ম্যাচ খেলছি। ওয়াসিম আর ওয়াকার ছিলেন বোলিং আক্রমণে। তারা শর্ট ডেলিভারি দিচ্ছিলেন, ভয় দেখাতে যা প্রয়োজন সবই করছিলেন। এমন কিছুর সামনে আমি আগে কখনও পড়িনি। ফলে অভিজ্ঞতাটা মোটেই সুখকর ছিল না। প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করে ওয়াকারের বলে বোল্ড হয়েছিলেন শচিন। আউট হওয়ার পর কি অনুভূতি হয়েছিল, সেই স্মৃতি শেয়ার করতে গিয়ে শচিন বলেন, মাঝেমধ্যেই আমি তাদের পেস এবং বাউন্সে পরাস্ত হচ্ছিলাম। যখন আমি ১৫ রান করে আউট হয়ে যাই, ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ভীষণ খারাপ লাগছিল। নিজেকে মনে মনে বলছিলাম, এটা কি করলে, কেন এই শট খেলতে গেলে। ড্রেসিংরুমে ঢুকেই বাথরুমে চলে যাই, চোখে পানি চলে এসেছিল। সেদিনই ক্যারিয়ারটার শেষ ভেবেছিলেন শচিন। বলেন, আমার মনে হচ্ছিল, আমি জায়গা হারিয়ে ফেলেছি। নিজেকেই নানা প্রশ্ন করছিলাম, বলছিলাম : সম্ভবত এটাই তোমার প্রথম এবং শেষ। আমার মনে হয়েছিল, এই লেভেলে খেলার মতো যথেষ্ট যোগ্য নই আমি। হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, মনটা ছোট হয়ে গিয়েছিল। তার মনের এই অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন সতীর্থরা। ওই সময় রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন শচিন। আর শাস্ত্রীর একটা উপদেশই তার মানসিকতা পুরোপুরি বদলে দেয়। গল্পটা এভাবে বলছিলেন শচিন, আমার সতীর্থরাও বুঝতে পেরেছিল। রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কি কথা হয়েছিল এখনও মনে আছে। রবি বলেছিলেন-তুমি তো স্কুল ম্যাচের মতো খেলেছ। তুমি সেরা বোলারদের বিপক্ষে খেলছো, তাদের সামর্থ্য আর সক্ষমতায় তোমাকে তো সম্মান দিতেই হবে। তখন আমি রবিকে বললাম, তাদের পেসেই পরাস্ত হয়েছি। রবি বলেন-কখনও এমন হয়, দুশ্চিন্তা করো না। তুমি শুধু মাঠে নেমে উইকেটে আধা ঘন্টা কাটাবে। দেখবে তাদের পেসে মানিয়ে নিয়েছ, তারপর দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। শাস্ত্রীর ওই পরামর্শটাই পরের টেস্টে মাথায় রেখেছিলেন শচিন। ফয়সালাবাদে সেই কথাগুলো জাদুর মতো কাজ করে। প্রথম ইনিংসেই শচিন খেলেন হাফসেঞ্চুরি ইনিংস। মাস্টার ব্লাস্টার এই ব্যাটসম্যান বলেন, যখন আমি ফয়সালাবাদে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পাই, মনের মধ্যে একটা জিনিস ঠিক করে নিয়েছিলাম-স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাব না। আমি শুধু ঘড়ির দিকে খেয়াল রাখব, রানের চিন্তা করব না। আমি আধা ঘন্টা ব্যাট করার পর ঠিকই স্বস্তি বোধ করছিলাম। ওই ম্যাচে ৫৯ করি, তারপরই সব কিছু পরিবর্তন হওয়া শুরু করে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২৪ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2VxUfxD
April 24, 2020 at 04:23AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন