ঢাকা, ০৪ এপ্রিল- মৃত্যু ভয়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর শঙ্কা তো আছেই, করোনায় মনও ভাল নেই কারো। জীবন আসলে স্থবির হয়ে পড়েছে সবার। চারদিকের কোলাহল গেছে থেমে। আনন্দ, উল্লাস, উচ্ছাস আর নির্মল চিত্ত-বিনোদনের কথা একপ্রকার ভুলেই গেছেন সবাই। আর না ভুলেই বা উপায় কী? নির্মল চিত্ত-বিনোদনের প্রায় সব উপাদান ও খোরাকও যে বন্ধ। খেলাধুলা, নাট্যমঞ্চ, চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ, পার্ক, হোটেল, রেস্টুরেন্ট- সব বন্ধ। এক কথায় প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ এখন ঘরে আবদ্ধ। কিন্তু এই ঘরে বন্দী থেকেও শুয়ে বসে সময় কাটানোর সুযোগ নেই ক্রীড়াবিদদের। রাজ্যের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার ভেতরেও নিজেকে আগামীর জন্য তৈরি রাখার তাগিদটা আছে। ওজন বেড়ে গেলে ফিটনেস যাবে কমে, ক্ষিপ্রতা, চপলতাও হ্রাস পাবে। তাই ঘরেই কমবেশি সবাই ফিজিক্যাল ট্রেনিংটা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকারসহ আরও কজন ঘরেই ছোটখাট জিম বানিয়ে ফিটনেস ট্রেনিং করছেন। এর বাইরে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এ সময়ের করণীয় ঠিক করে দিয়েছেন বিসিবির ট্রেনার, ফিজিওরা। তাদের দেয়া রুটিন মেনে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ও জিমওয়ার্ক করতে হচ্ছে টাইগারদের। ক্রিকেটাররা কেমন আছেন? তাদের দিনকাল কেমন চলছে? কী করে কাটছে সময়? এগুলো কমবেশি জানা হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় কোচরা কী করছেন? তাদের সময় কাটছে কীভাবে? সব ঠিক থাকলে মানে করোনার প্রাদুর্ভাব না ঘটলে এখন তাদের কী ব্যস্ত সময়টাই না কাটতো। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বের জমজমাট লড়াই চলতো এখন। কোচদের প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ছক কষতে বসতে হতো। কবে কার বিপক্ষে কোন মাঠে খেলা, সেই দলের শক্তি-সামর্থ্য আর গঠনশৈলির কথা চিন্তা করে নিজের দল সাজানো, গেম প্ল্যান তৈরি, ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করা, তাদের সেরাটা বের করে আনা- কত কাজ। কিন্তু হায়! ওসবের কিছুই নেই। লিগ বন্ধ, প্র্যাকটিসের তাড়া নেই। ত্রিকেটারদের ম্যাচের জন্য তৈরি করার তাগিদ নেই, একদম ঘরে বসা। বের হওয়ারও সুযোগ নেই। কোচদের এখনকার প্রাত্যাহিক জীবন, চলাফেরার খোঁজ নিতে গিয়ে মিলল এক অন্যরকম গল্প। সেই গল্পের নায়ক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। রাজধানী ঢাকার সুরম্য বাড়ি কিংবা সাজানো গোছানো ফ্ল্যাটে থেকেও সে অর্থে খুব দরকারি কাজ ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার সুযোগ নেই বাকিদের। এমনকি খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাষ নেয়ার অবকাশও যেখানে কম, সেখানে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন যে মুক্ত বিহঙ্গ। সকাল বিকেল সময় করে খোলা আকাশের নিচে হাঁটছেন। ছেলে নোয়েল সানদিদকে হালকা ট্রেনিং করাচ্ছেন। কখনও ব্যাটিং আবার কখনও বোলিং অনুশীলনও করাচ্ছেন। ভাবছেন, সে আবার কী কথা? তা কী করে সম্ভব? দেশের অন্যতম সেরা কোচ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের দৌনাচার্য্য মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নিবাস রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের জিরানীতে, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে। স্ত্রী বিকেএসপির শিক্ষিকা। সালাউদ্দিন নিজেও বিকেএসপির ছাত্র, সেখানেই লেখাপড়া করেছেন, ক্রিকেটারও বনেছেন। আবার পরে শিক্ষকতাও করেছেন বিকেএসপিতে। কাজেই সালাউদ্দিনের বর্তমান আবাসস্থল বিকেএসপি। এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণে চারিদিক বন্ধ। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। এরকম আবদ্ধ অবস্থায় কী করে কাটছে সময়? সালাউদ্দিনের জবাব, কী আর করব বলুন? করার তো কিছু নেই। টেলিফোনে কথা বলা ছাড়া আর কিই বা করার আছে। করোনায় সব বন্ধ। বিকেএসপির কমপ্লেক্স থেকে বেরও হতে পারছি না। বাইরে থেকে কেউ ঢুকতেও পারছে না। তাই সারাদিন বাসায়। তবে ঢাকার সঙ্গে এখানেই পার্থক্য বিকেএসপির। বিশাল কমপ্লেক্স। অনেক বড় জায়গা। বেশ কতগুলো খেলার মাঠ। প্রচুর খালি জায়গা। সবুজের সমারোহ আছে। সেখানেই হাঁটাহাঁটির অবারিত সুযোগ আছে। এবেলা ওবেলা একটু হাঁটহাঁটি করি। পাশাপাশি আরও দুটি কাজ করছেন সালাউদ্দিন। সকালে আর বিকেলে রোদ পড়ে গেলে তার ভেতরই ছেলে সানদিদকে নিয়ে বের হন সালাউদ্দিন। করোনায় ঘরে থেকে থেকে ছেলেকে একটু-আধটু কোচিং করানোর সুযোগটা মিলেছে। জানতেনই না ছেলে এত চমৎকার ব্যাটিং করে। পাশাপাশি লেফট আর্ম চায়নাম্যান বোলিংটাও ভাল পারে। আজ (শনিবার) জাগোনিউজের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য দিয়ে সালাউদ্দিন জানালেন, সত্যি বলতে কি নিজের ছেলে হলেও আমি সানদিদকে সেভাবে সময় দিতে পারিনি। ওর সম্পর্কে তেমন একটা ধারণাও ছিল না আমার। ও ব্যাটিং কেমন করে? বোলিংটাই বা কী রকম? তেমন স্বচ্ছ ধারণা ছিল না আগে। এ কয়দিনে দেখলাম। সালাউদ্দিনের ইচ্ছে ছেলেকে বিকেএসপিতে ভর্তি করানো। যার পরামর্শ আর হাতের স্পর্শে সাকিব, মুশফিক, তামিমরা পরিণত, সুবিন্যস্ত হয়ে বড় বিশ্বমানের ক্রিকেটার বনে গেছেন। তার ছেলে পিতার মত ক্রিকেটার হবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। সালাউদ্দিনও চাচ্ছেন ছেলেকে বিকেএসপিতে ভর্তি করাতে। এ বছরই ১৩তে পা দিবে ছেলে। নিজের ছেলে বলে একদমই মন্তব্য করতে নারাজ। তবে কদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আপলোড করা ভিডিও দেখে অনেকেই মুগ্ধ! ছেলে অদ্ভূত সুন্দর ব্যাটিং করে, ফুটওয়ার্ক চমৎকার, একদম পা বাড়িয়ে খেলে। বলের পেছনে শরীর ও পা চলে যায় একদম। আবার লেফট আর্ম চায়নাম্যান বোলিংটাও বেশ। বাবা ছেলের ভালই সময় কাটছে। এর বাইরে আর কী করছেন এখন? সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই সালাউদ্দিন জানালেন এক নতুন তথ্য। যেহেতু হাতে অফুরন সময়, তাই আরও একটি কাজ করছেন। এখন অখণ্ড অবসরের একটা সময় কাটছে বই লিখে। এমন নয়, এর মধ্যেই বই লিখতে বসেছেন। আসলে কিছু অংশ আগেই লিখা ছিল। ইচ্ছে ছিল এবারের বইমেলায় প্রকাশের। তারপর বসে ভাল মত দেখলেন, বই বাজারে দেয়ার মত হয়নি, অসমাপ্ত। তাই বাকিটুকু লিখতে বসা। প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখে ফেলা। আশা আছে আগামী বছর বই মেলায় প্রকাশের। ছিলেন ক্রিকেটার, এখন দেশের অন্যতম দক্ষ, সেরা ও সফল কোচ। তবে কি এবার ঔপন্যাসিক সালাউদ্দিনের দেখা মিলবে? তার জবাব, আরে না, না। আমি ক্রিকেট পাগল মানুষ। ক্রিকেটই ধ্যানজ্ঞান। ক্রিকেট নিয়েই লিখছি। বিষয়বস্তু কী? এবার লেখক সালাউদ্দিন জানালেন, বিষয় বস্তু আছে বেশ কয়েকটা। যদিও আমি প্রশিক্ষক। কোচিং করানোই পেশা। তাই আমার লেখা বইয়ে ক্রিকেট কোচিংয়ের সম্ভাব্য বিষয়গুলো যাতে থাকে, সে চিন্তাটা মাথায় রেখেই লিখছি। কোচ সালাউদ্দিন ভাই বই লিখছেন। নিশ্চয়ই সেখানে ক্রিকেট কোচিং বিশেষ করে ব্যাটিং-বোলিংয়ের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো- এমনটা যারা ভাবছেন, তাদের জন্য আছে ভিন্ন খবর। কোচ সালাউদ্দিন যে বই লিখছেন, তাতে টেকনিক্যাল পয়েন্ট কম। তার ভাষায়, আমার বইয়ে টেকনিকাল পার্ট অত দীর্ঘ নয়। আমি টেকনিক্যাল বিষয়ের চেয়ে মানসিকতা নিয়েই বেশি লিখেছি। ক্রিকেট মেন্টাল গেম বলা হয়। মানসিকতা অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকটাই বেশি রাখার চেষ্টা আছে। এর বাইরে আমার খেলোয়াড়ি ও কোচিং ক্যারিয়ারের নানা অভিজ্ঞতার কথাও থাকছে। সালাউদ্দিন সরাসরি না বললেও তার কথায় পরিষ্কার, একজন ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠা, নিজেকে তৈরি করা এবং বড় মাপের আসরে পা রাখতে যা যা দরকার- সব রকম পরামর্শই থাকবে তার বইয়ে। ক্রিকেটারদের সহায়ক সে পুস্তকে প্রশিক্ষকদের জন্যও থাকছে নানা কথাবার্তা। আজকাল বাংলাদেশের অনেক কোচই জাতীয় দল, বয়সভিত্তিক জাতীয় দল, এ দল, একাডেমি আর বিপিএলে সহায়ক কোচের ভূমিকায় আছেন। বিশেষ করে বয়সভিত্তিক দলগুলোর প্রায় সবকটায় প্রধান সহকারী কোচ একজন বাংলাদেশি। তাদের করণীয় কী? বিদেশি হেড কোচের সঙ্গে কাজ করতে হলে কী কী গুণ একান্তই জরুরী। বিভিন্ন সময় জাতীয় দল ও অন্যান্য দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে তাও সবিস্তরে বর্ণনা করেছেন সালাউদ্দিন। কোচ সালাউদ্দিনের পরামর্শ ও সুক্ষ্ম পরিচর্যায় সাকিব গত বিশ্বকাপে দুর্বার হয়ে উঠেছিলেন। এবার লেখক সালাউদ্দিনের ক্রিকেট কোচিংয়ের বই পড়ে ক্রিকেটার ও কোচরাও উপকৃত হবেন- এমন আশা করাই যায়। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/৪ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2X8nyYB
April 04, 2020 at 01:21PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top