টেস্ট ম্যাচে লাল বলে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে ফাস্ট বোলাররা মুখের থুতু কিংবা লালা ব্যবহার করেন বলে। এরপর সেই বলকে দেখা যায় সাদা ট্রাউজারে ঘঁষতে। একটা সময়ে এসে দেখা যায় সাদা ট্রাউজারে ডান কিংবা বাম পাশের পকেটের আশ-পাশটা হয়ে গেছে লাল আর লাল বলটা হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। তাতে পেসারদের বলগুলো সাঁই সাঁই গতিতে ছুটে আসে ব্যাটসম্যানের কাছে। বোলারের সাফল্যের পাল্লাও ভারি হতে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাস হয়তো বা ফাস্ট বোলারদের দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। চাইলেও এখন আর মনের অজান্তে কোনো বোলার মুখের থুতু কিংবা লালা দিয়ে বল ঘঁষে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে না। করোনা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, সেই থুতু কিংবা লালার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য কারো শরীরে। আর এরই সুযোগ একটি অবৈধ বিষয়, বল টেম্পারিংকে হয়তো বৈধতা দিচ্ছে যাচ্ছে ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন তৈরির সংস্থা এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে কমিটি এবেং আইসিসি। তেমনটাই চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো। তো পেসাররা কি তাহলে বলের উজ্জ্বলতা বাড়াবেন না? এ প্রশ্ন থেকেই মূলতঃ বল টেম্পারিংকে বৈধতা দেয়ার বিষয়টা আলোচনায় উঠে আসলো। ক্রিকইনফোর স্টোরিতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য বলে কৃত্রিম কোনো বস্তু ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে তাতে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে। মাঠে কর্তব্যপালনকারী আম্পায়ারের পর্যবেক্ষণেই হবে বলে কৃত্রিম কোনো বস্তু দিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ানোর কাজ। মূলতঃ আইসিসি মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টেই উঠে এসেছে বলে থুতু কিংবা লালা দিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ানোর কারণে সেখান থেক জীবানুর বিস্তার ঘটতে পারে। এ রিপোর্টের আলোকেই বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হচ্ছে আইসিসি। বলের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম উপায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক আইসিসি। কারণ, ব্যাট এবং বলের এই খেলায় যাবে ভারসাম্য নষ্ট না হয়ে যায়, সে কারণেই খুব বেশি চিন্তা ভাবনা করতে হবে। এ জন্যই মাঠে আম্পায়ারের পর্যবেক্ষণে রেখে বলের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম কিছু ব্যবহারের নিয়ম করার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে আইসিসি। তবে, বর্তমান সময়ে যে বিষয়গুলোকে বল টেম্পারিংয়ের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, তেমন কিছুর কিন্তু অনুমোদন দেয়া হবে না। যেমন- নখ দিয়ে ঘঁষে বলের সিম নষ্ট করে দেয়া, বলে ক্ষত তৈরি করা, সিরিঞ্জ কাগজ দিয়ে ঘঁষা দেয়া- আইসিসি এসবের অনুমোদ দেবেন না কোনোভাবেই। এ নিয়ে বল তৈরি করা প্রতিষ্ঠান কোকাবুরা, ডিউক কিংবা এসজির সঙ্গেও আলাপ করছে আইসিসি। যাতে বলে কোনোভাবে মোম, চামড়ায় ব্যবহার করা লিকুইড, জুতা পলিশ করার লিকুইড- এ ধরনের কিছু ব্যবকরা করা যায় কি না তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে, এ ক্ষেত্রে যেন বলের কৌণিক আকৃতিতে কোনো পরিবর্তন না আসে, সে বিষয়েও কড়া নজর রাখবে আইসিসি। মূলতঃ এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে দুটি পক্ষ। একটি হচ্ছে আইসিসির ক্রিকেট কমিটি এবং অন্যটি হচ্ছে এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটি। আগামী মে মাসের শেষ দিকে কিংবা জুনের প্রথম দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই দুটি পক্ষ আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। মার্চের শেষের দিকে এ বিষয়ে একটি মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা বাতিল করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র বলে থুতু কিংবা লালা লাগিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ানোর অভ্যাস পরিবর্তনই নয়, করোনার কারণে ক্রিকেটে আরও অনেক কিছু পরিবর্তন হতে চলেছে। যেমন, কোনো উইকেট পাওয়ার পর কিংবা ম্যাচ জয়ের পর ক্রিকেটাররা একে অপরকে আলিঙ্গন করে যে উদযাপন করতো, সে ধরনের দৃশ্য সম্ভবত আর দেখা যাবে না। কারণ, কে কি ধরনের ভাইরাস বহন করছে, তা তো কেউ জানে না। সুতরা, আলিঙ্গন করে উদযাপন করার রীতিও অনেকটা পরিবর্তন হতে চলেছে। তবে, থুতু কিংবা লালা দিয়ে বলে উজ্জ্বলতা বাড়ানোর এই অভ্যাস খুব সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার। প্যাট কামিন্স এবং জস হ্যাজলউড। তারা দুজনই সম্প্রতি এক ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অভ্যাস বাতিল করা খুবই কঠিন। হ্যাজলউড বলেন, আমি মনে করি সাদা বল (ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি) হচ্ছে খুবই ভালো। এমনিতেই উজ্জ্বল থাকে। কিন্তু লাল বলে (টেস্ট) ক্রিকেট খেলা কঠিন। বোলারদেরকে বাতাসে কিংবা কোনোভাবে বলকে মুভমেন্ট করানোর জন্য উজ্জ্বলতা বাড়ানোর ওপর নিভর করতে হয়। আপনি যদি ৮০ ওভার পর্যন্ত বলকে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারেন এবং বলের প্রাথমিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে যাওয়ার পর ব্যাটসম্যানদের জন্য ব্যাট করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়ায়। পেসাররা সেই বল থেকে আর কিছুই আদায় করতে পারে না। এ কারণেই বলের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। তবে আমার মহে হয়, থুতু কিংবা লালা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিয়ম করা যেতে পারে যে, সেটা নির্দিষ্ট একজনই করবে। আমার বিশ্বাস, ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসার আগেই এ বিষয়ে একটা সমাধান বের করা হবে। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি জানিয়েছেন, থুতু লাগিয়ে বল পলিশ করার পদ্ধতি বদলানো হতে পারে। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ভারতের বেঙ্কটেশ প্রাসাদ, প্রাবীণ কুমার, অস্ট্রলিয়ার জেসন গিলেস্পিরাও। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২৫ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3aCmE9O
April 25, 2020 at 04:24AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন