ঢাকা, ০৪ এপ্রিল - স্বাভাবিকভাবেই করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও। ফুটবলের সব বড় বড় লিগ বন্ধ। ক্রিকেটের সিরিজ, লিগ স্থগিত। টেনিস, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, রাগবি, ভলিবল, হ্যান্ডবল, বক্সিং, শ্যুটিং, অ্যাথলেটিকস, সুইমিং, জিমন্যাস্টিক- সব খেলাই বন্ধ। এতে করে ক্রীড়াবিদরাও পড়েছেন বিপাকে। খেলা না হওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায়। হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি যেসব ক্লাবের, বিশ্ব ফুটবলের সেই নামী ফুটবল ক্লাবগুলোও লিগ বন্ধ থাকায় ফুটবলারদের পারিশ্রমিক কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্পেনের বার্সেলোনা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ইতালির জুভেন্টাস, জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মত ক্লাবগুলো করোনার প্রভাবে খেলা বন্ধ থাকায়, ফুটবলারদের চুক্তিভুক্ত পারিশ্রমিকের একটা অংশ কেটে নিয়েছে বা ঘুরিয়ে বললে কমিয়ে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মহাদেশীয় আর বিশ্বকাপ হলেও ফুটবলের মূল চর্চা আর জনপ্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দুই ৬-৭টি বড় বড় লিগ। ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার শতশত ফুটবলার সেখানে খেলে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। যেহেতু এখন বিশ্বের সব জনপ্রিয় লিগ বন্ধ, তাই ক্লাবগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এরই মধ্যে। এর প্রভাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা, ঐতিহ্যবাহী আর ধনী ক্লাবগুলোও বাধ্য হয়ে ফুটবলারদের বেতনের অংশ কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রিকেটে ফুটবলের মত অমন লীগ নেই। আজকাল ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, বাংলাদেশের বিপিএল, পাকিস্তানের পিএসএল বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল- এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসর খেলেই অনেক ক্রিকেটার হাজার হাজার ডলার আয় করেন। তবে সেটা বাড়তি একটা আয়। এখনও ক্রিকেটারদের বিশেষ করে টেস্ট খেলুড়ে দেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মূল আয়ের উৎস নিজ নিজ বোর্ডের বেতন। পাশাপাশি ম্যাচ ফি, উইনিং বোনাস আর নিজ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেও অর্থ আয় করেন। তবে দৈনিক ভাতা, যাতায়াত খরচ, ম্যাচ ফি ও উইনিং বোনাস- এসবই নির্ভর করে খেলার ওপর। খেলা না থাকলে আয়ের মূল উৎস হলো বোর্ডের বেতন। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা প্রচুর অর্থ বেতন পান। আনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসেনি এখনও। তবে গুঞ্জন আছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ইসিবি আর ভারতীয় ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিসিআইসহ আর কয়েকটি বড় ক্রিকেট শক্তির ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা নাকি ক্রিকেটারদের মাসিক বেতনের টাকার পরিমাণ কমানোর চিন্তাভাবনা করছে। ঠিক গুঞ্জন বলা হয়ত ঠিক হবে না। ইংলিশ ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ইসিবি ইতোমধ্যে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন কমানোর সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিল। পরে ইংল্যান্ডের প্রফেশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে জানা গেছে, ক্রিকেটাররা এই সিদ্ধান্তে রাজি নয়। অর্থের ঝনঝনানি যে আসরে, সেই আইপিএল না হওয়ার মানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি। এছাড়া এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হোম সিরিজ বাতিল হয়েছে, সামনে আরও একাধিক সিরিজ স্থগিত বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায়। তাই বিসিসিআইও ভেতরে ভেতরে ক্রিকেটারদের বেতন ভাতার আংশিক কমানোর চিন্তায়। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কী করবে? বিসিবিও কি ঐ ইসিবি-বিসিসিআইয়ের পথে হাঁটবে বা হাঁটার চিন্তা করছে? তামিম, মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহদেরও কি মাসিক বেতনের একটা অংশ কাটা পড়তে পারে? এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৭ ক্রিকেটার যে পরিমাণ অর্থ পান, তার একটা অংশ কি কমিয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে? এখন পর্যন্ত এমন কোন আভাস মেলেনি। ঠিক গুঞ্জন ছড়িয়েছে তাও বলা যাবে না। তবে যেহেতু একাধিক ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় দলের বেতনের একটা অংশ কর্তনের ভাবনায় আছে, তাহলে বিসিবির চিন্তা কী?- তা জানার কৌতূহল অনেকেরই। সে কৌতূহলি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোনরকম নেতিবাচক খবর বা তথ্য মেলেনি। একদম নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্রের খবর, বিসিবি এখন পর্যন্ত ক্রিকেটারদের বেতন কমানোর বা বেতনের অংশ কেটে নেয়ার কোনরকম চিন্তাভাবনা করেনি এবং নিকট ভবিষ্যতে বেতন কমতে পারে- সে সম্ভাবনাও নেই। বেতন কাটা বা টাকার পরিমাণ কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবির দুই শীর্ষ কর্তা মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন। বিসিবির অন্যতম শীর্ষ পরিচালক ও নীতি নির্ধারকদের একজন জালাল ইউনুস জানান, না! এ মুহূর্তে বেতন কমানোর কোন চিন্তা আমাদের (বিসিবির) মাথায় নেই। বরং আমরা চেষ্টা করবো কীভাবে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানো যায়, তাদের সাপোর্ট করা যায়। এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। সবারই উচিৎ সবার পাশে দাঁড়ানো। এমন সংকটে ক্রিকেট বোর্ডও সাধ্যমত চেষ্টা করবে ক্রিকেটারদের সাপোর্ট দিতে। তাই আবারও বলছি এখন পর্যন্ত তেমন কোন চিন্তা ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে দেখা যাবে। বিসিবি মিডিয়া কমিটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনও। তারও কথার সারমর্ম অভিন্ন। এই মুহূর্তে বেতনের ব্যাপারে কোনরকম চিন্তাভাবনা নেই। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে আসলে করোনা কত দিন থাকে তার ওপর। এই সংকট, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুব শীঘ্রই বা সামনে থেমে গেলে বোর্ড অমন কিছু ভাববে না, ভাবতে চায়ও না। তবে খুব বেশি দিন করোনার প্রভাব অব্যাহত থাকলে তখন বিসিবিকেও আয় সংকোচানের চিন্তা করতে হবে। তবে সেটা ক্রিকেটারদের বেতন কমিয়ে নয়, হয়তো অন্যভাবে। বিসিবি সিইও বলেন, আমাদের সঙ্গে যেসব ক্রিকেটারের মাসিক চুক্তি আছে, তাদের বেতন কমানোর কথা এখন কী করে বলি বলুন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা খুব শীঘ্রই বলা হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানো, কমানো বা ঠিক রাখা- এগুলো হচ্ছে বোর্ডের মৌলিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা নিয়ে বোর্ডের নীতি নির্ধারণী মহলে কোনরকম কথা বার্তা হয়নি। তাই হুট করে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তারপরও সিইও হিসেবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমরা মানে বিসিবি অমন কোন চিন্তা ভাবনা করছি না। আমার মনে হয় অমন চিন্তার উদ্রেক মানে ক্রিকেটারদের বেতন কমানোর মত পরিস্থিতি এখনও হয়নি। বিসিবি সিইও যোগ করেন, আমরা বরং ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করছি এবং তাদের আর্থিক বিষয়টা বিশেষ বিবেচনায় স্থান পাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের এককালীন অর্থ দেয়া হয়েছে। নারী ক্রিকেটাররাও বেতনের বাইরে একটা অ্যামাউন্ট পেয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড় ও অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ক্রিকেট বোর্ডও করোনার প্রভাবে খেলা না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সমুখীন হচ্ছে। তারা যদি ক্রিকেটারদের বেতন কমানোর কথা ভাবতে পারে, তাহলে বিসিবি কি তাদের চেয়েও স্বচ্ছল? এমন প্রশ্ন করা হলে বিসিবি প্রধান নির্বাহী বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিষয়টি বড় আর আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল বোর্ডের নয়। এখানে সবার আগে দেখতে হবে বর্তমান সময়ে, নিকট অতীত আর অদুর ভবিষ্যতে কোন কোন দেশের বড় আসর আসর বা সিরিজ আছে, যেখান থেকে একটা খুব বড় অংকের অর্থ আয়ের সম্ভাবনা আছে? ধরা যাক, ভারতের আইপিএল। এ আসর না হলে বিসিসিআইয়ের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি। এর বাইরে তাদের একাধিক হোম সিরিজ না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রায় একই কথা প্রযোজ্য ইসিবির ক্ষেত্রেও। তাদেরও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট লিগ বন্ধ, একাধিক সিরিজও স্থগিত। সেসব খাত থেকে বড় অংকের অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা ছিল। তাই বিসিবি সিইও বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যেখানে রেভিনিউ জেনারেটরের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে কোন কোন বোর্ড একটু অন্যরকম ভাবতেই পারে। তারা যত বড় আর স্বচ্ছলই হোক না কেন, বছরের সম্ভাব্য আয়ের বড় অংশ কমে গেলে বা না পাওয়া গেলে বিকল্প চিন্তার উদ্রেক ঘটা অস্বাভাবিক নয়। নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন কোনরকম ভনিতা না করে জানিয়ে দিয়েছেন, আমাদের তো আর অমন অর্থ ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আগামী দুই থেকে তিন মাসে আমাদের দেশে এমন কোন বড় সিরিজ বা টুর্নামেন্ট নেই। তাই আমাদের আর্থিক ক্ষতির সুযোগ ও সম্ভাবনাও খুব কম। তারপরও সব শেষে বিসিবি সিইওর মুখে একটি কথা উচ্চারিত হয়েছে। সেটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। তা হলো, আসলে করোনা কতদিন স্থায়ী হবে সেটাই দেখার। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় করোনা সংক্রমণ বন্ধ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে কোনরকম নেতিবাচক কেন বিকল্প চিন্তারই দরকার পড়বে না। তাই আসল কথা হলো, করোনা কতদিন স্থায়ী হয়, সেটাই দেখার। সব কিছু নির্ভর করবে তার ওপর। করোনা যদি বেশি দিন স্থায়ী হয়, এমন অবস্থায় সব বন্ধ থাকলে আর সিরিজ, টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে? তখন কি ক্রিকেটারদের বেতন কমানো হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সিইওর কথা, করোনা বেশি দিন থাকলে আমাদের অবশ্যই বিকল্প চিন্তা না করলেও, যেকোনো ব্যয়ের বিষয়ে আরও সতর্ক-সাবধানী হতে হবে। তার মানে কখনও হবে না- এমন কথা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ অব্যাহত থাকলে যে বিসিবিও যে ক্রিকেটারদের বেতন কমানো বা কাটার কথা ভাববে না- তা কি জোর দিয়ে বলা যায়? সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৪ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3bMf0uL
April 04, 2020 at 02:24AM
04 Apr 2020

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top