শচীন টেন্ডুলকার থেকে রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র শেবাগ থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি- ক্রিকেট ইতিহাসে একেকটি উজ্জ্বল নাম। ভারতীয় ক্রিকেটে বিতর্ক কম নয়। নেই বিতর্কিত ঘটনার অভাবও। তার মধ্যে বেশ কয়েকটির সঙ্গে আবার জড়িয়ে রয়েছে এসব তারকা ক্রিকেটারদের নাম। যাদের সংঘাত নিছক মতপার্থক্যের চেয়েও বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। ক্রিকেটে পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরলে তা হয়ে ওঠে আগুনের ফুলকি। ভারতীয় ক্রিকেটের এমনই কিছু মহা বিতর্কিত ঘটনা তুলে ধরা হলো: লালা অমরনাথ-ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা : ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম বড় বিতর্ক ঘটে ১৯৩৬ সালে। সে বার ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল দল। ক্রিকেটীয় দক্ষতার জন্য নয়, অন্য দক্ষতার সুবাদে অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। যার ফলে লালা অমরনাথের মতো আরও অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার তেমন গুরুত্ব দিতেন না তাকে। সেই সময় এক ট্যুর ম্যাচে অমরনাথকে তৈরি হতে বলেও ব্যাট করতে পাঠাননি ভিজি। অমরনাথের তখন চোট ছিল। তা নিয়েই খেলেছিলেন আগের ম্যাচগুলো। বিশ্রাম পাচ্ছিলেন না। এই ম্যাচে আবার তাকে তৈরি অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। পরে তাকে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। দ্রুত আউট হয়ে ফিরে এসে ড্রেসিংরুমে উত্তেজিত অমরনাথ ক্ষোভ উগরে দেন। ভিজি তার প্রতিশোধ নেন অমরনাথকে প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে। সেই সময়ের এই দুই মহাতারকার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রবল বিতর্ক ছড়িয়েছিল। বীরেন্দ্র শেবাগ-মহেন্দ্র সিং ধোনি : বীরেন্দ্র শেবাগ হলেন টেস্টে ভারতের শ্রেষ্ঠ ওপেনারদের অন্যতম। অন্য দিকে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হলেন দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অধিনায়কদের অন্যতম। কিন্তু, শেবাগের কেরিয়ারের শেষের দিকে তার সঙ্গে ধোনির সম্পর্ক ভালো ছিল না। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে ধোনি সিদ্ধান্ত নেন যে প্রতি ম্যাচে শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকার ও গৌতম গম্ভীরের মধ্যে কোনো এক জনকে বিশ্রাম দেওয়া হবে। ধোনির যুক্তি ছিল, তিন জনই আউটফিল্ডে মন্থর গতির, ফলে একইসঙ্গে তিন জনকে খেলানো সম্ভব নয়। পরের ম্যাচেই একটা দারুণ ক্যাচ নিয়ে শেবাগ বলে ওঠেন, আমার ক্যাচটা দেখেছ? গত ১০ বছর ধরেই একই রকম আছি। কিছুই বদলায়নি। ধোনি জবাবে কিছু বলেননি। তবে শেবাগ এর পর ধীরে ধীরে দলের বাইরে চলে যান। রাহুল দ্রাবিড়-শচীন টেন্ডুলকার : ২০০৪ সালে সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু, সৌরভ অসুস্থ থাকায় প্রথম দুই টেস্টে নেতৃত্ব দেন রাহুল দ্রাবিড়। মুলতানে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে শচীন টেন্ডুলকার যখন ১৯৪ রানে অপরাজিত, তখন ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন দ্রাবিড়। যা মানতে পারেননি শচীন। যদিও মনে করা হয় যে শচীনকে অনেক বার বার্তা পাঠানোর পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনার এক দশক পর আত্মজীবনীতে শচীন লেখেন, রাহুল বলেছিল যে, দলের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আমরা যে জিততে আগ্রহী তা বোঝাতেই ওই সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা আমার বিশ্বাস হয়নি। শচীনের মতে, আরও দুই ওভার পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল তাকে। দ্রাবিড় অবশ্য এই বিষয়ে কখনও মুখ খোলেননি। সুনীল গাভাস্কার-কপিল দেব : সুনীল গাভাস্কার ও কপিল দেব হলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি। কিন্তু, দুজনের মধ্যেই ছিল ব্যক্তিত্বের সংঘাত। ১৯৮৩ সালে গাভাস্কারের জায়গায় কপিল অধিনায়ক হওয়ার পর তার তিক্ততা বাড়ে। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে গাভাস্কার ২৩৬ রানে ব্যাট করার সময় ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন কপিল। যা মানতে পারেননি গাভাস্কার। ১৯৮৪ সালে গাভাস্কার ক্যাপ্টেন হয়ে ইডেন টেস্টে বাদ দেন কপিলকে। বলা হয়, দিল্লিতে তার আগের টেস্টে কপিলের বেহিসেবি শটের মাসুল হিসেবে হারতে হয়েছে দলকে। কপিলের বিশ্বাস ছিল, তার বাদ যাওয়ায় গাভাস্কারেরই হাত ছিল। যদিও গাভাস্কারের দাবি, তিনি সেই নির্বাচনী বৈঠকে ছিলেনই না। পরে অবশ্য গাভাস্কার-কপিল দুজনেই বলেন যে তাদের সম্পর্ক ততটা খারাপ ছিল না, যতটা প্রচারিত হয়েছিল। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন-শচীন টেন্ডুলকার : শচীন টেন্ডুলকার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন, তখন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ছিলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর আজহারের জায়গায় শচীন অধিনায়ক হওয়ার পর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। শচীন মনে করেন যে আজহার নিজের সেরাটা দিচ্ছেন না। ১৯৯৮ সালে আজহার আবারও অধিনায়ক হন। কিন্তু ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর আবার সরানো হয় তাকে। নেতৃত্বে আনা হয় শচীনকে। কিন্তু, শচীন আর দলে আজহারকে ফেরাতে চাননি। ২০০০ সালের শুরুতে আজহারকে আনা হয় দলে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের আগেই শচীন বলেন, নেতা হিসেবে এটাই তার শেষ টেস্ট সিরিজ। সেই বছরই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হন আজহার। শুরু হয় সিবিআই তদন্ত। শচীন সাক্ষ্য দেন যে, বুকিদের সঙ্গে আজহারের সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। অধিকাংশ সময় তিনি যে ম্যাচে ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিতেন না, সেটাও বলেন শচীন। আজহারকে এরপর আজীবন নিষিদ্ধ করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। পরে তিনি আদালতে গিয়ে অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও আজহারের ক্যারিয়ার থেমে যায় ৯৯ টেস্টে। সূত্র: কালের কণ্ঠ আর/০৮:১৪/১২ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2yOEBVy
April 12, 2020 at 01:41PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top