ঢাকা, ০২ মে - সব ঠিক থাকলে এখন প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগ চলতো; কিন্তু তা আর হলো কই? করোনায় সব লণ্ডভণ্ড। গত ১৭ মার্চের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া প্রিমিয়ার লিগ আর মাঠে গড়ায়নি। তবে এ মুহূর্তে করোনার যে প্রাণসংহারি রূপ, দেশব্যাপি এ ভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে সহসাই প্রিমিয়ার লিগ শুরুর সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি হবে? এ বছর কি আর আদৌ প্রিমিয়ার লিগ অনুষ্ঠিত হবে? তা নিয়েই জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্যেই হঠাৎ একটি চাঞ্চল্যকর খবর। সাকিব আল হাসানকে নিয়েই নাকি প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নামতে যাচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান। কিন্তু কিভাবে? একটি দায়িত্বশীল সূত্রই জানিয়েছে, ভেতরে ভেতরে সকিব আল হাসানকে প্রিমিয়ার লিগ খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া শক্তি মোহামেডান কর্তারা সাকিবকে লিগ খেলানোর চিন্তা ভাবনা করছেন। কিন্তু এখানে দুটি প্রশ্ন। সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ। তারওপর করোনার কারণে লিগ আপাতত বন্ধ। সুতরাং, লিগ সহসা শুরুও হচ্ছে না। তাহলে কিভাবে সাকিব প্রিমিয়ারে খেলবেন! ওই দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, লিগ যদি শুরুও হয়, তাহলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে হতে পারে। ততদিনে (২৯ অক্টোবর) নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে সাকিব আল হাসানের। তখন সাকিবের লিগ কেন, যে কোনো খেলায় অংশ নেয়াতে আর বাঁধা থাকবে না। কাজেই যদি অক্টোবরে লিগ শুরু হয়, তখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে খেলানো যায় কি না? এমন চিন্তা বাসা বেঁধেছে ক্লাব পাড়ায়। জানা গেছে, সাকিবকে পেতে আগ্রহী একাধিক ক্লাব। তবে এর মধ্যে মোহামেডান এগিয়ে অনেকখানি। একটি নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সাকিব আল হাসানের সাথে কথা-বার্তাও নাকি হয়েছে মোহামেডান কর্মকর্তাদের। যদি লিগ অক্টোবরে শুরু হয়, তাহলে নিয়মের মধ্যে থেকে সাকিবকে খেলানোর কথাই ভাবছে মোহামেডান। সাদা-কালো শিবিরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেট কর্মকর্তা সাকিবের সাথে কথা বলেই বিষয়টি জানিয়েছেন। করোনার ভয়াবহতার মধ্যে সাকিব ভক্ত, মোহামেডান সমর্থকসহ দেশের অগণিত ক্রিকেট অনুরাগির জন্য এটা আশা জাগানিয়া সংবাদ; কিন্তু প্রশ্ন হলো, মোহামেডান চাইলেই কি সাকিব এবারের লিগ খেলতে পারবেন? মোহামেডান কেন, যে কোনো দলই আগ্রহী হোক না কেন, সাকিবের এবারের প্রিমিয়া লিগ খেলার পথে অনেক কাটা বিছানো রয়েছে। প্রথমতঃ এবার যখন মার্চে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের দলবদল হয়েছে, তখন সাকিব ছিলেন নিষিদ্ধ। তাই তাকে কোনো দলের নেয়ার প্রশ্নই আসে না। যেহেতু সাকিবের খেলার ওপর আগামী ২৮ অক্টেবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আছে আইসিসির, মানে ২৯ অক্টোবরের আগে তার পক্ষে কোনোরকম প্রতিযোগিতামুলক ক্রিকেটে অংশ নেয়াও সম্ভব নয়, তাই সঙ্গত কারণেই এবারের প্রিমিয়ার লিগের দলবদলে সাকিবকে কোন দলই নেয়নি। সবার ধারণা ছিল, এবার দেশের একনম্বর তারকাকে ছাড়াই দলবদল ও প্রিমিয়ার লিগ অনুষ্ঠিত হবে। তবে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বিপিএল খেলতে পারবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের এখন সুপার লিগ চলতো এবং ঈদের আগে, মে মাসের মাঝামাঝিই হয়ত সুপার লিগ শেষ হয়ে শিরোপা নির্ধারিত হয়ে যেত। এখন করোনার কারণে যখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট পিছিয়ে গেলো, তখন মোহামেডান সেই সুযোগটাই নিতে চাচ্ছে। মোহামেডান কর্তাদের ধারণা, করোনামুক্ত অবস্থায় লিগ শুরু হতে হতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর লেগে যাবে। আর যেহেতু ২৯ অক্টোবর সাকিবের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে, তাহলে লিগ শেষ হবার আগেই সাকিব নিষেধাজ্ঞামুক্ত হয়ে যাবেন। তখন তাকে খেলানোও যাবে। কিন্তু মোহামডান কর্তারা যতটা সহজভাবে দেখছেন, বিষয়টি তত সহজ নয়। মোহামেডান বলে কথা নয়, যেহেতু এবারের লিগ শুরুর আগে সাকিব নিষিদ্ধ ছিলেন, তাই লিগ যখনই হোক না কেন, তাকে খেলানো কঠিন হবে। তখন অন্য সব দলও দাবি করবে, আগে জানলে আমরাও সাকিবকে নিয়ে রাখতাম। কিন্তু লিগ যখনই শুরু হোক না কেন, তাকে খেলার অনুমতি দেয়া কঠিন হবে সিসিডিএমের পক্ষে। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের ব্যবস্থাপক ও সংস্থার সদস্য সচিব আলী হোসেনকে সাকিব ইস্যুতে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সাকিবের খেলার বিষয় তো বহুদুরে, সিসিডিএমতো বর্তমান প্রেক্ষাপটে লিগ নিয়ে চিন্তা করা প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বর্তমানে বিশ্ব এবং আমাদের দেশে করোনার যে ভয়াল রূপ, তাতে করে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর চিন্তা অলিক কল্পনা। সদস্য সচিব আলী হোসেনের কথায় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, সিসিডিএম কর্তৃপক্ষই এবারের প্রিমিয়ার লিগের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। আলী হোসেনের সোজা-সাপ্টা কথা, এখন গোটা দেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত হবার লড়াই করছে। দেশের মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে মৃত্যু চিন্তা, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায়। এরকম অবস্থায় প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে চিন্তার প্রশ্নই আসে না। আলী হোসেনের শঙ্কা এ বছর লিগ আর নাও হতে পারে। তার ব্যাখ্যা, যেহেতু এটা ২০১৯-২০২০ মৌসুম। তাই আগামী জুন কিংবা সর্বোচ্চ জুলাই মাসের মধ্যে লিগ শেষ করতে না পারলে একটি ক্রিকেট বর্ষপঞ্জি শেষ হয়ে যাবে। সিসিডিএম সদস্য সচিব জানিয়েছেন, জুলাইয়ের মধ্যে লিগ শেষ করতে না পারলে নিয়ম ও প্রথা মেনে এটা আর ২০১৯-২০২০ মৌসুমের লিগ থাকবে না। তখন সেটা গিয়ে ২০২০-২০২১ লিগ হয়ে যাবে। কিন্তু ক্লাবগুলোতো গাঁটের পয়সা খরচ করে কম দিক , বেশী দিক অনেক ক্রিকেটারকে অগ্রীম পেমেন্ট দিয়েছে , এবং তার পরিমানও কম নয়। প্রিমিয়ারের অন্তত ৮ টি ক্লাব গড় পড়তা এক থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। সেই টাকার কি হবে ? এবার যদি লিগ না হয়, তখন কি হবে? সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যদি লিগ শুরু হয়- সেটা কি তাহলে ২০২০-২০২১ লিগ বলে গণ্য করা হবে? বিষয়টি পরিষ্কার করতে বলা হলে সিসিডিএম সদস্য সচিব বলেন, আমি নিয়ম ও প্রথার কথা বলছি। তবে সিসিডিএম যেহেতু ক্লাবগুলোর সংগঠন এবং প্রিমিয়ার লিগ ১২ ক্লাবের লিগ, তাদের মত, বক্তব্য সবার আগে। যদি করোনার কারণে সত্যিই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের আগে লিগ শুরু করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেটা কোন বছরের লিগ বলে গণ্য হবে, ২০১৯-২০২০ না ২০২০-২০২১? তা ঠিক করতে আমরা আগে ১২ ক্লাবের সাথে বসবো। তারা যেটা বলবে, বেশিরভাগ ক্লাব যা চাইবে, সেটাই সুপারিশ আকারে বোর্ডের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারপর দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বিসিবিই সিদ্ধান্ত নিবে, আসলে এটা কোন মৌসুমের লিগ বলে গণ্য হবে? তার মানে সিসিডিএম সদস্য সচিবের কথায় পরিষ্কার সাকিবের খেলা, না খেলা নির্ভর করবে আসলে ক্লাবগুলোর মানসিকতা ও ইচ্ছের ওপর। সেপ্টেস্বর-অক্টেবর কিংবা নভেম্বর- যখনই মাঠে গড়াক না কেন, যদি ২০১৯-২০২০ মৌসুমের লিগ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে ক্লাবগুলো মুক্ত মন নিয়ে সাকিবকে কোন এক দলে খেলতে দিতে চাইলেই কেবল তিনি এবারের লিগ খেলতে পারবেন। আর যদি এবার লিগ বাতিল হয়ে ২০২০-২০২১ লিগ হয়, তখন নতুন করে দলবদলে হবে এবং বিনা বাধায় সাকিব খেলতে পারবেন। অন্যথায় তার খেলা অনেক যদি কিন্তুর ওপর নির্ভর করবে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০২ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2KTAri8
May 02, 2020 at 05:42AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন