ঢাকা, ২৪ মে - বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় সবসময় এক বাক্যে মেনে নেন, তাদের ভালো খেলার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা মাঠের দর্শকরা। দল খারাপ করলেও যেভাবে সমর্থকরা পাশে থাকে, সেজন্য বরাবরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, সাকিবরা। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একধরনের বিশেষ রকমের সমর্থকদের দেখা মিলছে। যারা কি না দলের চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত। মাশরাফি-সাকিবদের নামের শেষে ইয়ান, বিয়ান যোগ করে তারা হয়ে যান ব্যক্তি খেলোয়াড়ের ভক্ত। নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত হওয়া ভুল বা খারাপ কিছু নয়। তবে একজনের সেরা ভক্ত হতে গিয়ে দলের বাকিদের নিচু করার মানসিকতাও দেখা যায় অনেকের মাঝে। যা কি না চোখে পড়েছে জাতীয় দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীমের। তাই ভক্তদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে পরিষ্কার বার্তাও দিয়েছেন চারজনে। যার মূল সারমর্ম হলো, সবার আগে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করুন। পরে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত হন। আর নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত হতে গিয়ে দলে অন্য কাউকে ছোট না করার পরামর্শই দিয়েছেন মাশরাফি-তামিমরা। শনিবার রাতের লাইভ আড্ডায় এ প্রসঙ্গটা তুলে তামিম বলেন, এখন দেখেন প্রতিটা ক্রিকেটারের ফ্যানদের আলাদা গ্রুপ থাকে। তামিমিয়ান, মুশফিকিয়ান, মাশরাফিয়ান... সব দর্শকদের পছন্দের খেলোয়াড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় কি, এই গ্রুপের কারণে মাঝেমাঝে একজন আরেকজনকে আক্রমণ করতে থাকে। এখন এই আক্রমণ কতটা ঠিক সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি অনুরোধ করব এই আক্রমণটা যেন না করেন আপনারা (দর্শক)। এই গ্রুপটা যেমন আছে থাক, সবাই আমরা বাংলাদেশের জন্য খেলি, সবাই বন্ধু-ভাই। তো আপনারাও এমন বন্ধু ভাই হয়ে থাকেন। তামিমের সমর্থকরা মুশফিককে গালি দেবে বা মুশফিকের সমর্থকেরা তামিমকে গালি দেবে, এটা আপনারা কইরেন না। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, এটা আমার অনেকদিন ধরে মাথায় এসেছে। আমি এই বিষয়ে একমত। আমাদের ক্ষতি কিন্তু আমরাই করতে পারি। আমাদের ক্ষতি কিন্তু বাইরের মানুষরা এসে করবে না। এটা কিন্তু একটা বড় ক্ষতি। আজকে আমাকে যে পছন্দ করে সে তামিমকে গালি দিচ্ছে, মুশফিককে যে পছন্দ করে সে আমাকে গালি দিচ্ছে। আসলে আমরা কার জন্য খেলি? আমরা আপনাদের জন্য খেলি, আমরা বাংলাদেশের জন্যই খেলি। গালি যদি দেন আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেন। খেলা নিয়ে একসঙ্গেই গালি দেন সবাইকে। তিনি আরও যোগ করেন, সমালোচনা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কাউকে গালি দেবেন না। মুশফিক আজকে ভালো খেলেছে দেখে আপনি আর দশজনকে গালি দিবেন সেটা তো হতে পারে না। প্রত্যেকটা সাপোর্টারের আলাদা পছন্দের খেলোয়াড় আছে। তার মানে এই না যে প্রকাশ্যে এসে সেগুলা দেখানো। সবাই কিন্তু আমরা বাংলাদেশের জন্য খেলছি, আপনার জন্যই খেলছি। আলাদা আলাদা খেলোয়াড়ের ফ্যানবেজ থাকুক, কিন্তু কাউকে অসম্মান করা বা কাউকে টেনে নামিয়ে নিয়ে আসার মতো কাজগুলা যেন না করি। এগুলো খুবই দৃষ্টিকটু। আমি আশা করব, ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। আমাদের দর্শকেরা সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এ বিষয়ে নিজের মতামত দিয়ে বলেন, কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে আসলে কোন লাভ হয়না। নিজের গায়েই লাগে। সবারই পছন্দের খেলোয়াড় থাকে। তার মানে এই না যে আমি অন্যকে অপছন্দ করব। একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে, ভালোর কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি ভালো কাজ করেন তাহলে এর ফল ভালোই পাবেন। কাউকে সম্মান করতে তার বিনিময়ে সম্মান আপনিই পাবেন। অসম্মান কখনও পাবেন না। এই জিনিসটা একটু খেয়াল রাখবেন। একই সুরে মুশফিক বলেন, আমরা বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করি। অনেক সময় সফল হই, অনেক সময় হই না। তার মানে এই না যে, একজনের জন্য দল হেরে যাচ্ছে, একজনের কারণেই দল জিতে যাচ্ছে। আমার মতে পুরো দলের সবাই আমরা সমান। দর্শক, মিডিয়া সবাই কিন্তু আমরা এর অংশ। জিতলেও সবাই একসঙ্গে জিতি, হারলেও সবাই একসঙ্গে। সম্মানটা খুবই জরুরি এবং আমি মনে করি সম্মানটা সবারই দেয়া উচিৎ। আমি কখনও চাইব না আমার ভক্তরা তামিম, রিয়াদ ভাই, সাকিব, মাশরাফি ভাইকে খারাপ বলুক। এটা আসলে আমিও মেনে নিতে পারি না। আমি মনে করি এটা সবাই খেয়াল রাখবেন। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২৪ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36qHOY3
May 24, 2020 at 08:11AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top