কেপটাউন, ১৫ মে - যদিও ঘটনাটি আট বছর আগের। তারপরও এখনো অনেক ক্রিকেট ভক্তের মনের আয়নায় অগণিত স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা এখনও জ্বলজ্বল করছে। অনেকেরই মনে আছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দুজন খুব নামী ব্যাটসম্যান দলের প্রয়োজনে নিজেদের পুরো ব্যাটিং স্টাইল, ধরন ও অ্যাপ্রোচ পাল্টে রীতিমত ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। দলের প্রয়োজনে, বিশেষ করে টেস্টে চরম প্রতিকুল অবস্থায় ম্যাচ বাঁচাতে কিভাবে দৃষ্টিনন্দন, ফ্রি-স্ট্রোক প্লে তথা চিত্তাকর্ষক, আক্রমণাত্মক খেলা বাদ দিয়ে দীর্ঘক্ষণ উইকেটে দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়ে ম্যাচ ড্র করা যায়? তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন তারা দুজন। যার একজন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। অন্যজন এবি ডি ভিলিয়ার্স। যারা আজ থেকে ৮ বছর আগে, ২০১২ সালের নভেম্বরে অ্যাডিলেডে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ৪৩০ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্যের পিছু ধেয়ে নিশ্চিত হার এড়াতে প্রাণপন লড়াই করে ম্যাচ ড্র করেছিলেন তারা দুজন। সময়ের প্রয়োজনে দলের জন্য নিজের খেলর ধরণ পুরোপুরি পাল্টে ফেলেছিলেন ডু প্লেসিস আর এবি ডি ভিলিয়ার্স। কেমন ছিল তাদের খোলস পাল্টে ব্যাট করা? বুধবার তামিমের ফেসবুক লাইভে এসে তার বর্ননা দিতে গিয়ে ডু প্লেসিস জানান, সেটা ছিল এক অন্যরকম ম্যাচ কন্ডিশন। আমরা দলের প্রয়োজনে ম্যাচ বাঁচাতে যা যা করণীয় তাই করার চেষ্টা করেছি। আমার লক্ষ্যই ছিল মারবো না। ভাল বলকে ঠেকাবো। আর একটু বাইরের বল আসলে ছেড়ে দেব। আর এবি (এবি ডি ভিলিয়ার্স) তো আমার চেয়েও অনেক বেশি সতর্ক ও সাবধানি ছিল। সে সারাক্ষণ শুধু ডিফেন্সই করলো। হাফ ভলি, ওভার পিচ আর শর্ট অফ লেন্থের ডেলিভারিই শুধু নয় আমার মনে আছে ফুলটচ ডেলিভরিগুলোকেও সে মাথা নিচু করে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললো। বিগ শট বা ফ্রি স্ট্রোক প্লে বহুদুরে, একবারের জন্য খোলস ছেড়ে বাইরে আসেনি। নিজের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডু প্লেসিস জানান, আসলে আমার সারা জীবনে আমি যত টেস্ট সেঞ্চুরি করেছি, তার বেশিরভাগই ২২০ বলের বেশি খেলিনি। ওই একটি ইনিংস, যেখানে দলের প্রয়োজনে আমি প্রায় দ্বিগুন বল খেলেছি। সেটা না করে উপায়ও ছিল না। ম্যাচ বাঁচাতে আমাদের দেড় দিনের মত ব্যাটিং করতো হতো। আমরা সেই অবস্থা বুঝেই নিজেদের স্টাইল ও ধরন পাল্টে ব্যাট করেছি। কতটা স্ব-বিরোধী ব্যাটিং করেছিলেন ডু প্লেসিস আর এবি ডি ভিলিয়ার্স, শুনবেন? ডু প্লেসিস প্রায় পৌনে আট ঘন্টা (৪৬৬ মিনিট) উইকেটে থেকে ৩৭৬ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে করেছিলেন ১১০ রান। আর যার ব্যাটকে ধরা হয় খোলা তরবারি, যিনি নিজের খেয়াল-খুশি মত শটস খেলতে পারেন, যার সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার তুলনা তিনি নিজেই- সেই ইচ্ছেমত শট বানিয়ে খেলা এবি ডি ভিলিয়ার্স চার ঘন্টার বেশি ২৪৬ মিনিট উইকেটে পড়ে থেকে ২২০ বলে করেছিলেন মাত্র ৩৩ রান। যাতে ছিল না কোন বাউন্ডারির মার। এবি ডি ভিলিয়ার্স আর ফাফ ডু প্লেসিস ৪৫ রানে ৪ উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটে ৬৬ ওভার ক্রিজে থেকে ৮৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। টেস্ট ইতিহাসে এত স্লো ব্যাটিং আর আছে কি না সন্দেহ। যা কঠিন এক ম্যাচবে ড্রয়ে রূপান্তরিত করতে রেখেছিল বড় ভূমিকা। সেই টেস্টে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ২৪৮ রান এবং ম্যাচ হয়ে যায় ড্র। ১১০ রানে অপরাজিত থেকে যান ডু প্লেসিস। ডু প্লেসিসের অ্যাডিলেড টেস্টে সময়ের প্রয়োজনে অস্বাভাবিক ধীর গতির ব্যাটিংয়ের স্মৃতিচারণ পর্বের শেষভাগে তামিম ইকবালও খুলনায় পাকিস্তানের সাথে ড্র করা টেস্টের উপমা টানলেন। সেই যে, প্রথম ইনিংসে ২৯০ প্লাস রানে পিছিয়ে তামিম আর ইমরুল কায়েসের প্রথম উইকেটে ৩১২ রানের পার্টনারশিপের সেই ম্যাচের উদাহরন হিসেবে টানলেন তামিম। জানিয়ে দিলেন সেটাই তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় টেস্ট। নিশ্চিত পরাজয় এড়িয়ে ড্র করা এক ম্যাচ। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Z32a8g
May 15, 2020 at 04:50AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন