ঢাকা, ২১ জুন- বিশ্ব বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে লিখেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল। বাবাকে নিয়ে পুতুলের লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। ঘনিষ্ঠতা মায়ের সাথেই বেশি। বাবা শেষ ঢাল হিসেবে থেকেছে আজীবন। ছোটখাটো সমস্যা বা চাওয়াগুলোর জন্য মা, আর জটিল সব পরিস্থিতিতে বাবা। পাড়ার মধ্যে গান শেখাতে নিয়ে যাবার দায়িত্বটি ছিল মায়ের, বাবা নিয়ে আসত ঢাকায়। কত প্রতিযোগিতা করলাম বাবা মেয়ে এক সঙ্গে! নতুন কুঁড়ির সময় আমি মফস্বলের এক ভীরু বালিকা। বাবার হাত ধরে হাঁটতাম, বাবার শরীরে নিজেকে আড়াল করে পাশে পাশে হেঁটে চলতাম। অন্য বাবাদের দেখতাম, কী প্রভাব, কী আত্মবিশ্বাস! নিজের গাড়ি হাঁকিয়ে একেবারে বিটিভির ভেতরে ঢুকে পড়ত। দেখে মনে হতো ওটা তাদেরই প্রতিষ্ঠান। খুব চেনা, খুব জানা। তাদের দেহভঙ্গি দেখে মনে হতো, গাইবার আগেই মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে! আর আমার বাবা! শান্ত নিরীহ মুখ নিয়ে অপেক্ষা করত বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে। ফলাফল নিয়ে বাকি মেয়ের বাবাদের সে কী হই হুল্লোড়! বাবা সেই হুল্লোড়ে ঢুকত না। এক কোণে চুপ করে বসে থাকত। এমনভাবে বসতো যে, তার উপস্থিতিই যেনে কারও দৃষ্টিগোচর না হয়। দেশের গানের প্রতিযোগিতা নতুন কুঁড়িতে, ছোট্ট পাড়া থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মিলনায়তন। বাইরে বাবার অপেক্ষা। ফলাফল ঘোষণার সময় বাইরে একটা গুঞ্জন উঠল, সাজিয়া সুলতানা নামের মেয়েটা প্রথম। প্রভাবশালী বাবারা আনুষ্ঠানিক ফল আসবার আগেই খবর নিয়ে নিয়েছেন। বাবার কানে কিন্তু সেই ফিসফাস পৌঁছেনি। বাবা যথারীতি কোনো এক কোণে প্রতীক্ষায় আছেন আমার। মিলনায়তনের ভিড় ভাঙল। বেরিয়ে আসছি প্রতিযোগীরা। বাবাকে ফলাফল জানানোর জন্য মনের ভেতর উত্তেজনার বুদ্বুদ উঠছে। সবাই ঘিরে ধরেছে। তুমি সাজিয়া সুলতানা? কী গেয়েছিলে? প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে গিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। বাবার কাছে পৌঁছতে হবে। সবার বাবাকে দেখা যায়। আমার বাবা নেই। দীর্ঘ করিডরের শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা পেলাম। কেমন একটা জড়ানো জড়ানো স্বরে বাবা, কী রে মা? ফলাফল কী, এই কথা জিজ্ঞাসা করার সাহস সম্ভবত ততক্ষণে বাবা হারিয়েছে। প্রথম কী? ফার্স্ট হয়েছিস? আমিও সিনেমার মতো দূর থেকে দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফলাফল বলিনি। বাবাও ফলাফল শুনে সিনেমাসুলভভাবে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খায়নি। কিন্তু গর্বে তার বুক কতটা স্ফীত হয়েছে তা যেনে তার জামার উপর থেকেই দেখতে পেয়েছিলাম। সেদিনের সেই নিভৃত গর্বগুলোই এখন প্রকাশ্যে এসেছে। আমি পুতুলের বাবা বলছি, এ কথাটি এখন যখন বাবাকে স্বর চড়িয়ে বলতে শুনি, তখন মনে মনে বলি, এটুকুতে এতো গর্বিত হয়ো না বাবা। তোমাকে আরও অনেক গর্ব এনে দেবো। শুধু কথা দাও, সেদিনটাতে তুমি থাকবে। মাকে নিয়ে বেশ লিখতে পারি। বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলেই কেমন খেই হারাই। ছোট ছোট কথামালায়, পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি সাজিয়ে কবিতা লিখে ওঠা হয় না, হয়নি কোনো গানও। তাকে আঁকতে হয় আরও বিস্তৃত ক্যানভাসে। আমার উপন্যাস জ্যোৎস্নারাতে বনে যেভাবে আমাদের যাওয়া হয়ে ওঠে নাতে পুরোটা জুড়েই বাবাকে আঁকার চেষ্টা করেছিলাম। আমার ভবিষ্যৎ চেষ্টাগুলো দেখতে বাবা তুমি থাকবে তো? এম এন / ২১ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Nne6KN
June 21, 2020 at 03:28PM
21 Jun 2020

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top