ঢাকা, ১১ জুলাই- তরূণ-তরুণীদের কাছে তিনি অনিন্দ্য সুন্দরী। অভিনয়ের পাশাপাশি রূপে ও গুণে লাখো দর্শক মুগ্ধ করানো এই নায়িকা পার করেছেন জীবনের ৩৯টা বসন্ত। বয়স বাড়লেও রূপের ঝলকানি যেন একটুও কমেনি। তরুণ বয়সে যেভাবে রূপে মাতিয়েছিলেন এখনও যেন তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। দিন যতই বাড়ছে ততই যেন তার রূপে আলো ছড়াচ্ছে। বলছি ঢাকাই সিনেমার নন্দিত চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার কথা। পুরো নাম দিলারা হানিফ রীতা হলেও সবার কাছে তিনি পূর্ণিমা নামেই পরিচিত ও জনপ্রিয়। দেখতে দেখতে জীবনের ৩৯ বসন্ত পার করে এবার পা রাখলেন ৪০তম বছরে আর ক্যারিয়ারে ২৩তম। আজ এই নায়িকার জন্মদিন। জন্মদিনে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী থেকে শুরু সহকর্মীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই সুন্দরীতমা; যাকে বলা যায় বিউটি অব বাংলা সিনেমা। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করা পূর্ণিমার শৈশব সেখানে কাটলেও কৈশোরে চলে আসেন ঢাকায়। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে নাম লেখান রূপালী পর্দায়। শত্রু ঘায়েল ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু তাঁর। ১৭ বছর বয়সে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার সিনেমার মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে তাঁর; যেটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। প্রথম সিনেমাতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সেই সময়ের হার্টথ্রব রিয়াজকে। বাজিমাত করে বসেন প্রথম ছবি দিয়েই। ফটিকছড়ির রীতা একটু একটু করে হয়ে উঠেন আজকের পূর্ণিমা। পরিশ্রম, সাধনায় দিনে দিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন ঢাকাই ছবির অন্যতম একজন অভিনেত্রী হিসেবে। চলচ্চিত্রে আসার আগে ছোটবেলায় নাচগানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। চলচ্চিত্রের দাপুটে সময়টাতেও তিনি কাজ করেছেন টিভি পর্দাতেও। সেখানেও সফল এ অভিনেত্রী। নায়িকাদের মধ্যে তার সময়ে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটক, টেলিফিল্মে দাপটের সাথে তাকে দেখা গেছে। এটিএন বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় ধারাবাহিক লাল নীল বেগুনী-তে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। টিভি পর্দায় তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে - ল্যাবরেটরি, নীলিমার প্রান্তে, অমানিশা, ঐখানে যেও নাকো তুমি, এখনো ভালোবাসি, দুর্ঘট, যদি ভালো না লাগে তো দিও না মন, প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাতদিন, প্রতিহরণ, ম্যানিকুইন, রংবেরং, জলে ভাসা পদ্ম, ঘরের খবর পরের খবর, শঙ্খচিল, লাভ অ্যান্ড কোং, হলুদ রঙের বায়না, ১০১ লাভ ইমার্জেন্সি। নাটক,টেলিফিল্মের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা। তাঁর বিজ্ঞাপনের মধ্যে ছিল - গ্রামীণফোন, সিটিসেল, সানক্রেস্ট কোলা, বার্জার ঝিলিক, রাঙাপরী মেহেদি, মেরিল বেবি লোশন, কোহিনূর ডিটারজেন্ট, সুরেশ সরিষার তেল। জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত-এর ইত্যাদি থেকে উঠে আসা শিল্পী আকবর-এর জনপ্রিয় গান হাত পাখার বাতাসের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় পূর্ণিমা। মিউজিক ভিডিওর মধ্যে এটা সেসময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। প্রায় দুই যুগের অভিনয় ক্যারিয়ারে শতাধিক দর্শকনন্দিত ছবি উপহার দিয়েছেন এই অনিন্দ্য সুন্দরী। পূর্ণিমার চলচ্চিত্রজীবন সমৃদ্ধ। বাণিজ্যিক, সাহিত্যনির্ভর ছবিতে দেখিয়েছেন অসাধারণ প্রতিভা। সেসময়ে রিয়াজ, মান্না, ফেরদৌস, আমিন খান, শাকিল খান থেকে শুরু করে আজকের শাকিব খানের সঙ্গেও জুটি বেঁধে কাজ করেছেন এবং হয়েছেন সফলও। প্রত্যেকের সঙ্গেই গড়ে উঠেছে তাঁর সফল জুটি তবে আমিন খান ও শাকিল খানের সঙ্গে সাফল্য পাননি খুব একটা। তবে রিয়াজ-পূর্ণিমাকে ঢালিউডের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় জুটি বলা হয় এখন পর্যন্ত। তাঁদের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে - মনের মাঝে তুমি, হৃদয়ের কথা, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, শাস্তি, মেঘের পরে মেঘ, জামাই শ্বশুর, সাথী তুমি কার, মায়ের সম্মান, লাল দরিয়া, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, জীবনের চেয়ে দামী, বাধা, টাকা, খবরদার, মনে রেখ আমায়, চিরদিন আমি তোমার, তোমাকেই খুঁজছি, জমিদার, তুমি কত সুন্দর, ধনী গরিবের প্রেম, বন্ধু তুমি আমার, কে আমি। এত এত সিনেমার মাঝে এ জুটির মনের মাঝে তুমি সিনেমা ছিল বাণিজ্যিক ছবির মধ্যে দেশের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি। সেইসাথে হৃদয়ের কথা, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা এ দুটি ছবিও বহুল জনপ্রিয়। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমাকে ভাল হতে দিলো না ছবির জন্য ২০১০ সালে পূর্ণিমা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়াও পূর্ণিমা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছে দুইবার - মনের মাঝে তুমি (২০০৩), হৃদয়ের কথা (২০০৬) সিনেমা দিয়ে। ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পূর্ণিমা। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান; নাম আরশিয়া উমাইজা। স্বামী সংসার নিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটাচ্ছেন পূর্ণিমা। বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা নিয়মিত নন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে জ্যাম ও গাঙচিল নামের দুইটি সিনেমা রয়েছে। যেগুলো পরিচালনা করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। দুটি ছবিতে পূর্ণিমা জুটি বেঁধেছেন ফেরদৌস ও আরেফিন শুভর সঙ্গে। পুর্ণিমার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুভা, আজকের সমাজ, মা আমার স্বর্গ, দুশমন দরদী, বিয়ের প্রস্তাব, মাটির ঠিকানা, আই লাভ ইউ, পরাণ যায় জ্বলিয়া, ভালোবাসার লাল গোলাপ, হিংসার পতন, জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার, বাপবেটার যুদ্ধ, মনের সাথে যুদ্ধ, নায়ক, ভিলেন, বাস্তব, উল্টাপাল্টা ৬৯, ক্ষমতার গরম, ক্ষত বিক্ষত, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, ধোঁকা, বাবা, ধ্বংস, পিতামাতার আমানত, ধ্বংস, আরমান, সুলতান, মাস্তানের উপর মাস্তান, গাদ্দারি, বিদ্রোহী সালাউদ্দিন, মধু পূর্ণিমা, বলো না ভালোবাসি, বিপ্লবী জনতা, আমার স্বপ্ন আমার সংসার, বিপদজনক, যোদ্ধা, প্রেমের নাম বেদনা, ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না, রাজা সূর্য খাঁ, মিস ডায়না, ছায়াছবি, টু বি কন্টিনিউড ইত্যাদি। আর/০৮:১৪/১১ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/38KMXLS
July 11, 2020 at 10:41AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন