কলকাতা, ২৩ জুলাই - প্রত্যাশামতো একুশের বিধানসভা লড়াইয়ের আগে সাংগঠনিক স্তরে বড়সড় রদবদল ঘটল রাজ্যের শাসক শিবিরে। কার্যত ঢেলে সাজানো হচ্ছে সংগঠনকে। মাওবাদী সন্দেহে দীর্ঘকাল জেলবন্দি থাকার পর গত বছর মুক্ত হওয়া ছত্রধর মাহাতোকে (Chhatradhar Mahato) সরাসরি নিয়ে আসা হল তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে। দেওয়া হল সম্পাদকের পদ। এই সংযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। পাকাপোক্ত পরিকল্পনা করেই তাঁকে রাজনীতি মূল স্রোতে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া রাজ্য কমিটির নতুন সদস্য হলেন অমিত মিত্র, সৌগত রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার হাঁসদা। ২১ জনের রাজ্য কমিটির অধিকাংশেই ঠাঁই পেলেন নতুনরা। উনিশের লোকসভায় জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের কাছে তৃণমূলের শোচনীয় হার থেকে বেশ শিক্ষা নিয়েছে তৃণমূল। অথচ জঙ্গলমহল তৃণমূলের রীতিমতো শক্ত ঘাঁটি ছিল। মাওবাদী সমস্যা দমন করে সেখানে শান্তি ফেরানোর প্রতিদান স্বরূপই সেখানকার জনসমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তবে বছর কয়েক আগে থেকে গেরুয়া শিবিরের আচমকা এসব জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে বসে উনিশের ভোটে জঙ্গলমহলের মূল তিন জেলা ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের সাফ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। সেই জঙ্গলমহলে হৃত সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে ফের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মমতা। তাই সেই জায়গার দায়িত্ব দিয়ে তিনি সরাসরি রাজ্য কমিটিতে নিয়ে এলেন ছত্রধর মাহাতোকে। [আরও পড়ুন : পদ খোয়ালেন অরূপ রায়, তৃণমূলে গুরুত্ব বাড়ল রাজীবের ] বাম আমলে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে জঙ্গলমহলে গড়ে ওঠা জনসাধারণ কমিটিতে ছত্রধর মাহাতোর ভূমিকা কী ছিল, তা বেশ ভাল জানতেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এখনও তাই লালগড়-সহ জঙ্গলমহলের একাংশে ছত্রধরের মতো ব্যক্তিত্বের কী প্রভাব, তা তিনি সম্যক উপলব্ধি করেছেন। গত বছর জেলমুক্তির পর ছত্রধর নায়কের মতো লালগড়ে নিজের গ্রামে ঢুকেছিলেন। তাঁকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও কত আবেগ, তা বুঝেছিলেন সকলে। তখনই জল্পনা উসকে উঠছিল, তবে কি এবার সরাসরি মূলস্রোতের রাজনীতিতে ফিরছেন ছত্রধর? তখন এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, মিলল আজ। ছত্রধরকে সামনে রেখেই ফের ওই অংশের রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পেতে চাইছেন মমতা। তাই সরাসরি তাঁকে রাজ্য কমিটির সম্পাদক পদে বসালেন তৃণমূল নেত্রী। জঙ্গলমহলের দিকে নজর রেখে মমতা আরও তিন জেলা নিয়েও বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুরুলিয়ার জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে। বদলে নতুন সভাপতি হলেন গুরুপদ টুডু, যিনি আবার সম্পর্কে আরেক মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী। শান্তিরাম মাহাত দীর্ঘদিন ধরে জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলালেও তাঁর বিরুদ্ধে কিছুটা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠছিল বেশ অনেকদিন ধরে। মমতা তাঁকে একাধিকবার সাবধানও করেন। এবার তাঁকে দায়িত্ব থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল। ঝাড়গ্রামে নেত্রীর নিজের অত্যন্ত পছন্দের পাত্রী বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে দেওয়া হল একুশের দিকে চোখ রেখে। তাঁর জায়গায় জেলা সভাপতি হলেন দুলাল মুর্মু। বাঁকুড়ায় তৃণমূলের নতুন জেলা সভাপতি হলেন শ্যামল সাঁতরা। [আরও পড়ুন :কাছে পেলে মাথার চুল কামিয়ে দেব, রাহুল সিনহাকে হুমকি অনুব্রতর] অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গেও লোকসভা ভোটের খারাপ ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে রদবদল ঘটিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে সরানো হয়েছে অর্পিতা ঘোষকে। নতুন জেলা সভাপতি গৌতম দাস। এই জেলাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ ভালই পড়েছিল। তা একেবারে বন্ধ করে দিতেই এই পরিবর্তন আনা হল বলে মনে করা হচ্ছে। সুত্র : সংবাদ প্রতিদিন এন এ/ ২৩ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3jwpHpZ
July 23, 2020 at 03:33PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন