বাউল গান কলঙ্কিনী রাধা গানটি বাংলাদেশের সিলেটের কিংবদন্তী বাউল শিল্পী শাহ আবদুল করিম কখনো গাননি বলে জানিয়েছেন তার ছেলে শাহ নূর জালাল। লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমন কুমার দাশ এবং শাহ আবদুল করিমের শিষ্য একাধিক বাউলও এটি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, গানটি শাহ আবদুল করিমের লেখা নয়, এই গানটি তাকে গাইতেও শোনেননি কেউ। খবর বিবিসি বাংলার অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্সে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বুলবুল নামের একটি ছবিতে ব্যবহৃত প্রাচীন লোকগীতি কলঙ্কিনী রাধা গানটি নিয়ে ভারতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই গানে হিন্দুদের ভগবান কৃষ্ণকে যেভাবে কানু হারামজাদা এবং তার লীলাসঙ্গিনী রাধাকে কলঙ্কিনী বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটাকে বিশেষত উত্তর ভারতে অনেকেই হিন্দুত্বের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখছেন। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং বিবিসি বাংলার খবরেও বলা হয় গানটি কিংবদন্তি বাউল শিল্পী শাহ আবদুল করিমের কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়। কিন্তু এই গানটি শাহ আবদুল করিমের লেখা কিংবা গাওয়া কোনোটিই নয় বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ও শিষ্যরা। প্রয়াত শাহ আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলছেন, এ গানটি বাবা কেন, তার সমসাময়িক বা পরের সময়েরও কোনও বাউলকে এই গানটি গাইতে শুনেছি বলে মনে হয় না। বাবার অনেকগুলো অগ্রন্থিত গান নিয়ে আমি কাজ করছি, কোথাও এ গানটি আমি পাইনি। সিলেট অঞ্চলের কোনো বাউল শিল্পীও এই গানটি নিজের লেখা দাবি করে গেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন গানটি রাধারমণের। এটি রাধারমণের গান বলেও আমার জানা নেই। আসলে ইদানীং অনেকেই লেখালেখি করতে গিয়ে যাচাই-বাছাই না করে একজনের গান আরেকজনের বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। বাবার গান, রাধারমণের গান আর রাধারমণের গান বাবার গান বলে অনেক জায়গায় লিখেছে। এমন ভুল তথ্য পরিবেশনের ফলেই এমনটি হচ্ছে। প্রয়াত বাউল শাহ আবদুল করিমের অন্যতম প্রধান শিষ্য হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের বাসিন্দা বাউল আবদুর রহমান বলেন, তার (শাহ আবদুল করিম) জীবদ্দশায় ৩৬ বছর সঙ্গ করেছি। তার অনেক গানের পাণ্ডুলিপি আমার হাতে লিখিত হয়েছে। তিনি এ গানের রচয়িতা নন। এমনকি তিনি কখনোই এ গানটি পরিবেশন করেননি। এমনকি আমরা তার শিষ্যরাও কখনোই এ গানটি পরিবেশন করিনি। কোথা থেকে যে মানুষজন ভুল তথ্য পায়। লোকসংস্কৃতি গবেষক ও করিম জীবনীকার সুমন কুমার দাশ শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে নয়টি বই লিখেছেন। তিনি বলেন, কলঙ্কিনী রাধা গানটি শাহ আবদুল করিম কখনোই পরিবেশন করেননি। না জেনে ভুলভাবে এ গানের শিল্পী হিসেবে তার মতো একজন কিংবদন্তিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ গানের কথা ও সুর লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এটি ভারতের আসাম অঞ্চলের লোকগান, মূলত এটি কামরূপী গান। সিলেট অঞ্চল যেহেতু আসামের কাছাকাছি, তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গানের আদল আর সুরের সঙ্গে সিলেটের অপরাপর লোকগানের কথা আর সুরের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য চলে আসে। তাই অনেকে লোকাচারকেন্দ্রিক এ গানটিকে সিলেটের গান বলে ভেবে থাকেন। অথচ এ গানটি সিলেট অঞ্চলের নয়। তবে এ গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম জানা যায় না। ভারতে গানটি নিয়ে আক্রমণ ও সমালোচনার মুখে নেটফ্লিক্স ওই মুভির হিন্দি সাবটাইটেলেও কৃষ্ণের বর্ণনায় হারামজাদা শব্দটি পাল্টে নটখট (দুষ্টু) শব্দটি ব্যবহার করেছে। তবে আনুষ্কা শর্মা নিজে বা মুভির নির্মাতা সংস্থা এই বিতর্ক নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি। উত্তর ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হারামজাদা বলে ডাকার ঘটনায় রীতিমতো ছি ছি পড়ে গেছে। এরই মধ্যে তেলেগু ভাষায় নেটফ্লিক্সের আর একটি রিলিজ কৃষ্ণ অ্যান্ড হিজ লীলা (কৃষ্ণ ও তার লীলা) নেটফ্লিক্সের জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে ওই প্ল্যাটফর্ম বয়কট করার দাবি ভারতে ক্রমশ আরও জোরালো হচ্ছে। এম এন / ০৪ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3eUMPf3
July 04, 2020 at 05:56PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন