ঢাকা, ১৯ জুলাই- প্রায় দুই দশকের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য চোট-আঘাতের সঙ্গে লড়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ডেঙ্গুতে ভুগেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছেন। এবার তার পুরো ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা হলো কোভিড-১৯ রোগের সঙ্গে। ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ক্যারিয়ারে যিনি হয়ে উঠেছেন হার না মানা মানসিকতার প্রতীক, সেই মাশরাফি জানালেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়টায় জীবনকে তিনি চিনেছেন নতুন করে। এই শত্রুকে মোকাবেলার সাহস মাশরাফির শুরু থেকেই ছিল। সঙ্গে ছিল শঙ্কা ও অস্বস্তিও। এসবকে সঙ্গী করেই মুক্তির অপেক্ষায় কেটে গেছে তার ২৪ দিন। মাশরাফির করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে গত ২০ জুন। এরপর থেকে নেগেটিভ হওয়া পর্যন্ত সময়টায় খুব বড় শারীরিক সমস্যা তার দেখা দেয়নি। তবে মানসিক যন্ত্রণা ছিল নিত্য। তার কাছে সবচেয়ে কষ্টের অনুভূতি ছিল, ৯ বছর বয়সী মেয়ে ও সাড়ে ৫ বছর বয়সী ছেলেকে লম্বা সময় দূরে রাখা। এ প্রতিবেদকের জন্য মাশরাফি তুলে ধরলেন তার করোনাকালের দিনলিপি। অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি ২০ জুন দুপুরের দিকে পেলাম রিপোর্ট, কোভিড-১৯ পজিটিভ। শুরুতে গা ব্যথা ছিল। তখন শঙ্কা হয়নি, ভেবেছিলাম জিম করার কারণে ব্যথা হচ্ছে। পরে জ্বর হওয়ার পর যা বোঝার বুঝে গেলাম। দ্রুত পরীক্ষা করালাম। ফল আসার আগেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। একরকম নিশ্চিতই ছিলাম যে অনাকাঙ্ক্ষিত এই অতিথি চলে এসেছে আমার ঘরে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তাই ধাক্কা খাইনি। ভেতরটা একটু খালি খালি লাগছিল, মুহূর্তের জন্য। দ্রুতই সামলে নিয়েছি। করণীয় ঠিক করে নিয়েছি। আইসোলেশনে ছিলাম আগে থেকেই। সেখানেই লম্বা সময়ের বন্দোবস্ত করে নিলাম। এক রুমে বন্দি জীবনের প্রস্তুতি নিতে হলো। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর দুই দফায় নড়াইল গিয়ে কাজ করেছি। পরে ঢাকায় ফিরে নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টিনে থেকেছি। তখন কিছুই হয়নি। এখন কীভাবে আক্রান্ত হলাম, নিজেরও ধারনা নেই। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতদের ফোনকল, ম্যাসেজ আসতে থাকল স্রোতের মতো। যতজনের সঙ্গে সম্ভব হলো, কথা বললাম হাসিমুখে। বন্ধুদের অনেকে বাসায় ছুটে আসতে চায়, ওদেরকে অনেক কষ্টে বোঝালাম না আসতে। ছেলেমেয়ে দুটিকে আগে থেকেই দূরত্বে রেখেছিলাম, এখন আরও ভালোভাবে বোঝানো হলো যে বাবার কাছে আসা যাবে না। সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করে খোঁজখবর নিলেন। বিষাদময় বিদায় বাচ্চাদের বিদায় জানালাম ২১ জুন। এর চেয়ে কষ্টের অনুভূতি বুঝি আর নেই। ওদেরকে নিরাপদে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। ঢাকার বাসায় রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতো। নড়াইল পাঠিয়ে দিলাম। ক্রিকেট খেলতে সফরে যাওয়ার সময় ওদেরকে বিদায় জানানোর অভিজ্ঞতা তো অনেক আছে। এবার পুরো ভিন্ন। দেশেই আছি কিন্তু ওদের কাছে থাকতে পারব না! এমনই এক রোগ যে, ওদেরকে একটু জড়িয়ে ধরা তো বহুদূর, কাছাকাছিও যেতে পারছি না। হুমায়রা দূর থেকে আমাকে বিদায় জানানোর সময় কেঁদেই ফেলল। আমি কীভাবে নিজেকে সামলালাম, জানি না। ওদের মা নিচ পর্যন্ত গেল গাড়ীতে তুলে দিতে। বিদায় দিয়ে এসে বলল, সাহেল প্রচুর কান্নাকাটি করেছে যাওয়ার সময়। ছোট্ট ছেলে, বাবা-মা দুজনকেই ছাড়া থাকেনি আগে। হুট করেই আমার মনে হলো, এমনও তো হতে পারে যে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এটি আমার শেষ দেখা! ভেতরটায় কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। ছোট ভাই সিজার (মোরসালিন বিন মুর্তজা) বাসায়ই থাকতে চাইছিল, যদি জরুরি প্রয়োজন হয়। জোর করে ওকে পাঠিয়ে দিলাম ওর বাসায়। আমার বাসায় সারা বছর ১৮-২০ জন লোক থাকে। আরও অনেকে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। হই-হল্লায় থাকি আমরা। হুট করে সব বদলে গেল। বাসা অনেকটা ফাঁকা, কোনো হইচই নেই। প্রাণের ছোঁয়া নেই যেন। এই নিস্তব্ধতা অসহ্য লাগল। সবসময়ই লোকজন নিয়ে থাকতে পছন্দ করি আমি। এখন বাস্তবতার কাছে কতটা অসহায় আমরা! বিরক্তিকর বিপত্তি রাতে ভালো ঘুম হয়নি। শারীরিক অস্বস্তি তো আছেই, সঙ্গে নানা দুর্ভাবনা। ভালো থাকার চেষ্টা করছি। বাসায় যারা আছে, তারাও আমাকে ভালো রাখার চেষ্টায় কমতি রাখছে না। তারপরও রাতের নির্জনতায় অনেক ভাবনা পেয়ে বসে। ঘুম এলো ফজরের নামাজ পড়ার পর। বলছি ২২ জুনের কথা। রাতের ঘুম সব পেয়ে বসেছিল দিনে। ঘুমাচ্ছিলাম টানা। একটু উঠে খেয়ে টেয়ে আবার ঘুম। দুপুরে একটু ঘুম ভেঙে দেখি ফোনে অনেক মিসড কল, অসংখ্য ম্যাসেজ। জানতে পারলাম, সব জায়গায় নাকি খবর ছড়িয়ে পড়েছে, আমার অবস্থা খারাপ, হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নাকি সিট পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব তোলপাড় যখন চলছে, আমি তখন আরাম করে ঘুমাচ্ছি! বাধ্য হয়ে ফেইসবুকে সবাইকে জানাতে হলো যে এসব খবর ভিত্তিহীন, আমি ভালো আছি। ওইদিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে গেলাম বটে, তবে স্রেফ এক্স-রে করাতে। যেহেতু আমার অ্যাজমার সমস্যা পুরনো, ডাক্তারের পরামর্শে একটু চেক-আপ করালাম। সেই রিপোর্টও ভালোই এলো। দুঃখজনকভাবে, অসুস্থতার মধ্যেও এই যন্ত্রণা পরে পোহাতে হলো কয়েক দফায়। কয়েকটি মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আমি নেগেটিভ হয়ে গেছি। অথচ পরীক্ষাই করাইনি। আবার ফেইসবুকে সত্যিটা জানাতে হলো। কিছুদিন পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যথারীতি ফেইসবুকে জানাতে বাধ্য হলাম। লোকের হয়তো আগ্রহ ছিল আমার অবস্থা জানার। কিন্তু দুই দিন পরপর নিশ্চিত না হয়ে মিডিয়া এ ধরনের খবর প্রকাশ করায় মানুষ যেমন বিভ্রান্ত হয়েছে, আমার পরিবারকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আরও পড়ুন:করোনার ঝুঁকি এড়াতে ফার্ম থেকে গরু কিনলেন মোসাদ্দেক নতুন থাবা ছোট ভাই সিজারের কোভিড পরীক্ষার ফল পজিটিভ এলো ২৩ জুন। ছেলেটার নতুন সংসার। এর মধ্যেই দুর্যোগ শুরুর পর নড়াইলে যত ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম নিয়েছি, সবগুলোয় সে সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে দেখভাল করেছে। শেষ পর্যন্ত নিজেও আক্রান্ত হলো। ওকে সাহস দিয়ে বললাম, আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হবে। দুদিন পর আরেকটা খারাপ খবর এলো আমাদের পরিবারের জন্য। সুমির (স্ত্রী সুমনা হক) যেসব উপসর্গ ছিল, তাতে একরকম নিশ্চিতই ছিলাম, ও আক্রান্ত। ধারণামতোই ওর রিপোর্ট পজিটিভ এলো ২৫ জুন। সব প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা আগেই নেওয়া ছিল। এবার ওর লড়াইও শুরু হলো। এতদিন আমার খেয়াল রাখছিল ও। খেয়াল রাখা বলতে, মূল কাজ আমাকে জোর করে নিয়ম মানানো। বরাবরই ধরাবাধা নিয়মে আমার অনীহা। কোভিড হওয়ার পর নিয়মিত একগাদা ওষুধ খাওয়া, গরম পানির গড়গড়া, ভাপ নেওয়া, অ্যাজমার কারণে একটু বাড়তি সতর্ক থাকা, অনেক কিছুরই প্রয়োজন। সুমি বারবার তাগাদা দিয়ে বাধ্য করছিল আমাকে সব মানতে। এবার লড়াইটা দুজনের একসঙ্গে। শরীর ও মনের লড়াই শুরুর কয়েকদিন শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি টের পেয়েছি নানা প্রতিক্রিয়ায়। জ্বর ও গা ব্যথা ছিল। থেকে থেকে ছিল মাথা ব্যথা। দাঁড়ালে বা ঘরে হাঁটাচলা করলে মাথা ঘোরাতো। এসব অবশ্য টুকটাক হওয়ারই কথা ছিল। ডাক্তারের সঙ্গে বলেছি। একগাদা ওষুধ খেতে হয়েছে রোজ, খুবই বিরক্তিকর। খাবারের স্বাদ চলে গিয়েছিল কয়েক দিনের জন্য। তখন অনেকটা জোর করে খেতে হয়েছে। পরে খেতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। ভাত খাওয়া তো বাদই দিয়েছিলাম। কিন্তু কোভিডের কারণে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ভাত ও জুস খেতে হয়েছে নিয়মিত। মনটা খুব খারাপ হয়েছে তাতে। অনেক কষ্ট করে ওজন কমিয়েছিলাম। লকডাউন শুরুর পর থেকে ঘরবন্দি সময় কাজে লাগিয়েছিলাম। খাওয়া নিয়ন্ত্রণে এনে, অনেক ঘাম ঝরিয়ে ওজন নামিয়ে এনেছিলাম ৭৮ কেজিতে। গত ৮-৯ বছরে মনে হয় না এতটা কম ছিল আমার ওজন। খুব ফুরফুরে লাগছিল নিজের কাছেই। ফিটনেস নিয়ে, স্কিল ঝালাই করা নিয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা ছিল। সব ভেস্তে গেল আপাতত। লাখ তিনেক টাকা খরচ করে বাসায় ছাদে জিম বানিয়ে নিয়েছিলাম। সেখানে একদিন কেবল জিম করতে পারলাম, এরপরই কোভিডের ছোবল। তিন সপ্তাহ শুয়ে-বসে-খেয়ে ওজন আবার বেড়ে গেল ৬-৭ কেজি। শারীরিক সমস্যা খুব বড় কিছু হয়নি এই সময়টায়। মাঝেমধ্যে একটু শ্বাসকষ্ট হয়েছে বটে, তবে অ্যাজমার কারণে সেটা এমনিতেই হয় অনেক সময়। জানতাম এই সময় সাহস রাখা জরুরি। ছোট থেকেই এই জিনিসটির অভাব আমার কখনোই ছিল না। ছেলেবেলা বা বড়বেলা, মাঠের ভেতরে বা বাইরে, সাহস আর আত্মবিশ্বাসই আমাকে এগিয়ে নিয়েছে সবসময়। এবারও এটিই ছিল বড় সম্বল। প্যানিক অ্যাটাক যে একেবারেই হয়নি, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। দু-একবার হয়েছে, বিশেষ করে রাতের নির্জনতায়। তবে খুব বেশি সময় পাত্তা পায়নি তা। ভয়টাকে পেয়ে বসতে দিলেই শরীর খারাপের সুযোগ থাকে বেশি। মনকে দ্রুতই অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছি। সবচেয়ে বড় লড়াই ছিল মনের সঙ্গে। একটা ঘরে বন্দি থাকা মানে আমার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি। আরেকটা বড় যন্ত্রণা, ছেলে-মেয়ে দুটিকে দূরে সরিয়ে রাখা। বাবা-মা ছাড়া দিনের পর দিন নড়াইলে আছে ওরা। হুমায়রা তো আমার খুব ন্যাওটা। ছেলেটা এত ছোট। ফোনে ওদের সঙ্গে কথা হয়, মলিন চেহারা দেখি। অনেক সময় কান্নাকাটি করে, আমাদেরকে ডাকে। আমাদের জন্যও তখন নিজেদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। নড়াইলে সবাইকে বলেছিলাম খেলাধুলা ও নানাভাবে ওদেরকে ব্যস্ত রাখতে। সাহেলকে সাঁতার শিখিয়েছিলাম টুকটাক। এবার আরও ভালোভাবে শিখে গেছে। একদিন ভিডিওতে, দেখি আমাদের পুকুরের এপার থেকে ওপার চলে গেছে! সবাইকে বলেছিলাম, ওদেরকে দিনের বেলায় যেন প্রচুর ছোটাছুটি করায়। তাহলে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। রাতে ঘুমাতে দেরি হলেই মন খারাপ করে ওরা, কান্নাকাটি করে। এই বুদ্ধিতে কাজ হলো কিছুটা। সারাদিনের ক্লান্তিতে ওরা রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ত। তারপরও, এভাবে কতদিন! সাহেল এত ছোট, কান্নাকাটি করে প্রায় প্রতিদিনই। আবার একদম চুপ হয়ে যায়, কথা বলে না কারও সঙ্গে। খুব বড় সমস্যা না থাকলেও শারীরিক অস্বস্তি তো কিছু ছিলই। সঙ্গে এই মানসিক যন্ত্রণা আর অসহায়ত্ব। চাইলেও অনেক কিছু করার সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে বারবার উপলব্ধি হলো, মানুষ হিসেবে আমাদের কত সীমাবদ্ধতা। নতুন করে বুঝেছি, জীবন আসলে কত সুন্দর। সুস্থ থাকতে পারা, স্বাভাবিক পারিবারিক ও সামাজিক জীবন কাটাতে পারা অনেক বড় নিয়ামত, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানো উচিত নিয়মিত। বন্ধুত্বের আশীর্বাদ আমার সম্পর্কে যারা জানেন, সবারই জানা যে বন্ধুরা আমার জীবনের কতটা জুড়ে আছে। ভেবেছিলাম, ওদের নিয়ে নতুন করে বোঝা ও বলার আছে সামান্যই। কিন্তু এবারের বিপদে আবারও উপলব্ধি করেছি, বন্ধুরা আমাকে কতটা ভালোবাসে। আমার রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার আগেই বাবলু চলে এসেছিল বাসায়। শত অনুরোধ, যুক্তি, হুমকি, মানা করেও কোনোভাবেই তাকে বাসা থেকে ঠেলে বের করতে পারলাম না। সে বাসাতেই থাকবে, দেখভাল করবে। কোনো যুক্তি আছে? তাকে বোঝানো দায়। বন্ধুত্ব আসলে যুক্তি মানে না। বাসায় রান্না করতেন যে খালা, তারও পজিটিভ এলো। অবস্থা খারাপ ছিল না, তবু সতর্কতার জন্য তাকে হাসপাতোলে ভর্তি করলাম। এটা জেনে আমার আরেক বন্ধু তার পরিবার রেখে চলে এলো আমার বাসায়। রান্নার দায়িত্ব সে নিয়ে নিল। তাকেও কোনোভাবেই ফেরাতে পারলাম না। আরও কত বন্ধুকে যে কত কষ্টে ঠেকালাম! নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে ভাবনাই নেই ওদের, চলে আসতে চায়। বন্ধুত্বের দিক থেকে আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান। একান্ত সঙ্গী ফোন আরেকটা বড় বন্ধু ছিল আমার ফোন। সিনেমা-নাটক দেখার অভ্যাস আমার নেই ততটা। বরাববরই খেলার ভিডিও বেশি দেখতাম। এবার অনেকটা সময় কেটেছে খেলার নানা ভিডিও দেখেই। গ্রেট ক্রিকেটারদের পুরনো খেলা, ক্লিপ, দারুণ সব পারফরম্যান্স তো সবসময় দেখি। এবার বেশি দেখেছি গ্রেটদের ইন্টারভিউ। ভিভ রিচার্ডস বলুন বা রাহুল দ্রাবিড়, তাদের কথা শুনলে নেশার মতো শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে। কত কিছু যে শেখা যায়! ক্রিকেট দর্শন, জীবন দর্শন, অনেক কিছু। টেকনিক্যাল ও স্কিলের অনেক কিছুও জানা যায়। এই বয়সে, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসেও আরও অনেক শিখতে ইচ্ছে করেছে। জানি না, আমাদের এখনকার তরুণরা কতটা দেখে এসব, কতটা আগ্রহ আর তাড়না ওদের আছে। অবসর সময়ে এসব দেখলে কেবল সমৃদ্ধই হবে ওরা, ক্ষতি নেই কোনো। সুস্থতার স্বস্তি উপসর্গ তেমন না থাকায় শনাক্ত হওয়ার ১০-১২ দিন পর ডাক্তার বললেন পরীক্ষা করে দেখতে। তখনও ফল পজিটিভ এলো। কয়েকদিন পর ডাক্তার আবার বললেন। তবে এবার ইচ্ছে করেই দেরি করেছি। খুব ক্লান্তিকর অপেক্ষা। তিন সপ্তাহ হওয়ার পর ১২ জুলাই পরীক্ষা করালাম। ১৪ জুলাই দুপুর থেকেই অপেক্ষা করছিলাম, কখন ফল জানতে পারব। সেই অপেক্ষা শেষ হয় না। অবশেষে সন্ধ্যার পর জানতে পারলাম। একটু অস্বস্তি তবু থেকেই গেল। আমি ও সিজার নেগেটিভ, সুমি পজিটিভ। শারীরিক কোনো সমস্যা সুমির ছিল না। তবু মন খারাপ করা স্বাভাবিক, সন্তানদের থেকে আরও কয়েক দিন দূরে থাকতে হবে। সবাই অসহায়, কিছু করার নেই। শেষ পর্যন্ত, শুক্রবার (১৭ জুলাই) সুমির ফলও এলো নেগেটিভ। এবং নড়াইল ঘরে আটকে থাকলেও এলাকার কাজ যে একদম থেমে ছিল, তা নয়। প্রতিদিনই ফোনে অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছে নড়াইলের বিভিন্ন কাজ নিয়ে। নানা নিদের্শনা দেওয়া, অনেকের সঙ্গে কথা বলা, ভিডিও কলে সভা করা, কখনও কখনও গভীর রাত পর্যন্তও চলেছে। লোহাগড়ায় অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল, ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। তাই লোহাগড়ার সঙ্গে সব জায়গার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে, দোকান-পাট বন্ধসহ পুরোপুরি লকডাউনের আহবান জানালাম ভিডিও কলে সভা করে। সংশ্লিষ্ট সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করল। স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হলো। সবাই যেভাবে সাড়া দিল, আমি অভিভূত। ঠিক করলাম, সুস্থ হওয়ার পরই নড়াইল যেতে হবে। ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অনেক কাজ বাকি। সূত্র: বিডিনিউজ২৪ আর/০৮:১৪/১৯ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2OIOxEF
July 18, 2020 at 09:13PM
19 Jul 2020

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top