ঢাকা, ২৪ আগস্ট- এখন থেকে এলআরবি ব্যান্ড হয়ে থাকবে শুধুই স্মৃতিময় এক ইতিহাস। কারণ, দলটির প্রয়াত নেতা আইয়ুব বাচ্চুর সন্তানরা চাইছেন না বাংলা ব্যান্ডকে অন্যতম শিখরে তুলে ধরা এ নামটির কেউ অপব্যবহার করুক। আইয়ুব বাচ্চুর দুই সন্তান ফাইরুয সাফরা আইয়ুব ও আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব জানিয়েছেন, এখন থেকে এলআরবি নামে কোনো কার্যক্রম বাংলাদেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। পাশাপাশি কপিরাইট আইনও বলছে, সন্তান ও পরিবারের মতকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তাই এখন থেকে পরিবারের অনুমতি ছাড়া কার্যত কেউ-ই ব্যান্ডটি নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। কারণ, এলআরবির স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর আগে ২৩টি অ্যালবাম ও ব্যান্ড নিজের নামে নিবন্ধন করে গেছেন। এক বিবৃতিতে সাফরা ও তাযওয়ার বলেন, একজন শিল্পী এবং তার সংগীতের স্রষ্টা হিসেবে আমার বাবুই তার সৃষ্টিকর্মগুলো দীর্ঘকাল আগেই কপিরাইট করার জন্য উদ্যোগী হন। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে তিনি তার গানের পুরো তালিকা কপিরাইট নিবন্ধিত করবার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আইনিভাবে এগিয়ে যাওয়া, শিল্পীদের অধিকার এবং মালিকানা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রতি বাবুই সর্বদা লড়াই করেছে। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা পরিবার হিসেবে তার লক্ষ্য পূরণে তার অসম্পূর্ণ স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, নানা প্রতিকূলতার পরেও আমরা এখন বাবুইয়ের অসমাপ্ত কাজ সুন্দরভাবে শেষ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার অসম্পূর্ণ যাত্রাটি শেষ করা এবং কেউ যাতে তার সৃষ্টিকর্মর মালিকানার অপব্যবহারের সুযোগ খুঁজে না পায়- এটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, এলআরবি নামে ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আমার বাবুই আইয়ুব বাচ্চু সম্পূর্ণ এককভাবে নেন। তাই তিনি এককভাবে তার রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশিত ২৭টি অ্যালবামের সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট করবার পাশাপাশি এলআরবি নাম সম্বলিত লোগো এবং ব্যান্ডটিও তার নামে নিবন্ধিত করেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও তার রচিত, সুরারোপিত ও স্বকণ্ঠে পরিবেশিত আরও অসংখ্য গান রয়েছে- যেগুলো কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। তার অকাল মৃত্যুর পর সন্তান হিসেবে আমরা তার বৈধ স্বত্বাধিকারী। এদিকে ব্যান্ডটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে যোগাযোগ করা হয় এলআরবি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদুল হাসান স্বপনের সঙ্গে। তিনি জানান, আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি সম্মান জানাবেন তারা। তিনি বলেন, যদি পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, ব্যান্ডের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে-এতে আমার কিছু বলার নেই। আর বিষয়টি মাত্রই আমি জানলাম। তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথাও হয়নি। এর আগে তারা জানিয়েছিলেন, বাবার কলিগরা মানে আমরা ব্যান্ডের কার্যক্রম চালাতে পারব। তবে এখন যদি মনে করেন, বন্ধ থাকবে, তাহলে বন্ধই থাকবে। শেষ কথা, বসের অসম্মান হয়, এমন উদ্যোগ আমরা নেব না। পরিবারের সম্মান মানে বসের সম্মান। তাই তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে ফাইরুয সাফরা আইয়ুব বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে দেখছি যে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ না করেই তার (আইয়ুব বাচ্চু) রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করছেন। গানগুলোও কোনো স্ট্যান্ডার্ড বজায় না রেখে যেনতেনভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে গাইছেন; এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করছেন। যা বাংলাদেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘণ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য। এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য বাবুইয়ের সৃষ্টিকর্মের আইনি মালিকানার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়া। তাই এখন থেকে আমাদের সম্মতি ব্যতিরেকে এলআরবি নামের অপব্যবহার করে আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট নিবন্ধনকৃত গানগুলো পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্টার (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, সম্প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে ও মেয়ে বিদেশ থেকে তাকে ইমেইল করেছিলেন। রাজা চৌধুরী বলেন, মেইলে তারা তাদের বাবার গানগুলো সবখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে বলেন আমাকে জানান। সেগুলো বন্ধ করা বা রেভিনিউ চার্জ করার সুযোগ রয়েছে কিনা- তাও জানতে চান। আমি তখন দ্রুত চেক করে মুগ্ধ হয়েছি। লক্ষ্য করলাম, বাচ্চু ভাই তার বেশিরভাগ গান ও ব্যান্ড কপিরাইট করে গেছেন। ফলে সেই গানগুলোর বাণিজ্যিক প্রচার বন্ধ করা বা রেভিনিউ সংগ্রহ করার বিষয়ে কোনো বাধা থাকলো না। সেই রেভিনিউ বাচ্চু ভাইয়ের ছেলেমেয়েই পাবেন। এবং আইন অনুযায়ী গান ও ব্যান্ডের ক্ষেত্রে তারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এদিকে ভক্তদের উদ্দেশে আইয়ুব বাচ্চুর দুই সন্তান বলেন, বাবুই সর্বদা বিশ্বাস করতেন যে তার ভক্তরা তার অক্সিজেন। তাদের কারণে তিনি বেঁচে ছিলেন, বেঁচে থাকবেন। তার সন্তান হিসেবে আমরাও তার ভক্তদের আশ্বস্ত করতে চাই, বাবুই তার সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের মাঝে যেভাবে ছিলেন সেভাবেই যেন থাকেন সেটাই আমরা শতভাগ নিশ্চিত করব। আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের কাছে একটাই চাওয়া, এই মুহূর্তে তার সৃষ্টিকর্মের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটু সময় দিন। আমরা বাবা হারিয়েছি; কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে আপনারা কোনোদিন হারাবেন না। তিনি আপনাদেরই থাকবেন... অনন্তকাল... এক মৃত্যুহীন নক্ষত্র হয়ে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর দলের প্রধান আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর থেকে ব্যান্ডটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে অন্য সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে। প্রথম ১২ মাসে অন্তত পাঁচ দফা এলআরবি ভাঙা-গড়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। শুরুটা হয় দলটিতে ভোকাল ও গিটারিস্ট হিসেবে বালামের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এরপর বেরিয়ে গেছেন দলের গিটারিস্ট মাসুদ, ম্যানেজার শামীম। তাদের চলে যাওয়ার পর পুরনো সদস্য ড্রামার ও ভোকাল রোমেলকে বাদ দেন স্বপন। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল এলআরবি গড়ে তোলেন আইয়ুব বাচ্চু। সঙ্গে ছিলেন মিল্টন আকবর, এসআই টুটুল ও সাইদুল হাসান স্বপন। এরমধ্যে মিল্টন আকবর আর এসআই টুটুল বহু আগে সরে গেলেও ছায়ার মতো শেষ পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ছিলেন স্বপন। আপাতত তিনিই দলটি পরিচালনা করছিলেন। এম এন / ২৪ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/34Gsw2T
August 24, 2020 at 07:53PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন