ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর- প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় খল অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাদেক বাচ্চুকে পর্দায় দেখে বড় হয়েছেন নায়ক বাপ্পী চৌধুরী। চলচ্চিত্রে এই গুণী অভিনেতাকে বাবা হিসেবে পেয়েছেন তিনি। পর্দার বাইরেও বাবা-ছেলের মতো সম্পর্ক ছিল তাদের। সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাপ্পী। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে তার। দেশের একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সাদেক বাচ্চু সব সময় ব্যাটা বলে ডাকতেন আমাকে। আমি উনাকে বাবা ডাকতাম। বাবার মতোই পরামর্শ দিতেন। চলচ্চিত্র ও আমার ব্যক্তিজীবনের সব বিষয়ে বাবার কাছ থেকে আমি পরামর্শ পেয়েছি। সর্বশেষ শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু ছবিতে বাপ্পীর শ্বশুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু। লম্বা সময় একসঙ্গে থেকেছেন তারা। এ সময়ের স্মৃতিচারণ করে বাপ্পী চৌধুরী বলেন, শুটিংয়ে বেশ কয়েক দিন আমাদের একসঙ্গে থাকতে হয়েছে। শুটিং শেষে উনি আমার রুমে চলে আসতেন, তারপর গভীর রাত পর্যন্ত চলত আড্ডা। শুটিং করে ঢাকায় ফেরার সময় আমি প্রতিদিনই উনাকে বাসায় পৌঁছে দিতাম। আগে শুটিং শেষ হলেও তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করতেন। শুধু তা-ই নয়, যখন কোনো শুটিং হতো না, তখনো আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলতাম। বাপ্পী চৌধুরী আরো বলেন, বাবা সব সময় আমাকে টাকা জমাতে বলতেন। কোনো ছবির সাইনিং মানি পেলে তা দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং দিতে বলতেন। আমি উনাকে বলেছিলাম, বাকি টাকা কীভাবে দেব। তিনি বলতেন, বাকি টাকা এভাবেই দিতে পারবে, আগে বুকিং করো। উনার কথা আমি সব সময় মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আজ বাবাকে হারিয়ে নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম ঢাকায়। সিনেমার কিংবদন্তি মানুষ এহতেশাম চাঁদনী চলচ্চিত্রে তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু করে দেন। সেই থেকেই তিনি এ নামে পরিচিত। টিএন্ডটি নাইট কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাদেক বাচ্চু। ১৯৬৩ সালে খেলাঘরের মাধ্যমে রেডিওতে অভিনয় শুরু করেন সাদেক বাচ্চু। একইসাথে মঞ্চেও বিচরণ করেন। প্রথম থিয়েটার গণনাট্য পরিষদ। ১৯৭২-৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন এদেশের সাংস্কৃতিক বলয় নতুনভাবে তৈরি হচ্ছিল, তখন যোগ দেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিষিক্ত হন। প্রথম নাটক ছিল প্রথম অঙ্গীকার। নাটকটি পরিচালনা করেন আবুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ সহ অসংখ্য নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। ঝুলিতে যুক্ত হয় প্রচুর সুপারহিট নাটক। প্রথম চলচ্চিত্র শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রামের সুমতি অবলম্বনে একই নামের ছবি, নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। শহীদুল আমিন ছিলেন পরিচালক। আরো একটি চলচ্চিত্রেও সুনেত্রার বিপরীতে নায়ক চরিত্রে ছিলেন কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। খল চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন সুখের সন্ধানে চলচ্চিত্রে। শহীদুল হক খানের এই ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চন নায়ক ছিলেন। মৌসুমী চলচ্চিত্রে চাচা ঢাকা কতদূর? সাদেক বাচ্চুর এই সংলাপটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। এরপর বহু সিনেমায় তাকে দেখা গেছে দুর্দান্ত অভিনয়ে। আরও পড়ুন-করেনায় না ফেরার দেশে অভিনেতা সাদেক বাচ্চু সাদেক বাচ্চুর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- জোর করে ভালোবাসা হয় না (২০১৩), জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার (২০১৩), জীবন নদীর তীরে (২০১৩), তোমার মাঝে আমি (২০১৩), ঢাকা টু বোম্বে (২০১৩), ভালোবাসা জিন্দাবাদ (২০১৩), এক জবান (২০১০), আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০), মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯), বধূবরণ (২০০৮), ময়দান (২০০৭), আমার প্রাণের স্বামী (২০০৭), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), প্রিয়জন (১৯৯৬), সুজন সখি (১৯৯৪)। এমএ/ ১৪ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2E3ZT4I
September 14, 2020 at 01:39PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন