ঢাকা, ২২ নভেম্বর- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যেন কোনো ধরনের ইস্যু তৈরি করতে না পারে, এ জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে সরকার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের আগে বিএনপি যেন কোনো ফোরামেই ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জল ঘোলা না করতে পারে, এ ব্যাপারে কাজ করছে তাঁদের দল। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের গৃহবিবাদ নিরসনে কাজ করছেন দলীয় প্রধান স্বয়ং। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি উপদলের চরম বিরোধ রয়েছে। এটি প্রকাশ্য। এখানে তৃণমূল থেকে নাম না আসার পরও আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছে। আর তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার অর্থই হলো সরকার নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এ জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তাদের দলও। ফলে এই নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি ইস্যু তৈরি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনই সম্ভাব্য শেষ নির্বাচন। এ কমিশনের মেয়াদে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আইনি জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তা হওয়াটা অনিশ্চিত। এ ছাড়া কমিশন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনও করবে। সেই নির্বাচনে অবশ্য ভোটাররা সরাসরি ভোট দিতে পারবেন না। জেলার স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান করবেন। ইতিমধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন নিয়ে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। তারা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ​ও চেয়েছে। সূত্র বলছে, এসব বিবেচনা মাথায় রেখে সরকার কোনোমতেই নতুন নির্বাচন কমিশনের গঠনেরও প্রক্রিয়াকেও বিতর্কিত করতে দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ, এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে প্রচার-প্রচারণা করব, যাতে আমরা জয় পাই। আর আইভী ভালো প্রার্থী, সে ক্ষেত্রে জনগণ তাঁকে ভোট দেবেন বলে আশা করি। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন পরাজিত হলেই তারা ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করে। এবার এটা আমরা করতে দেব না। তাদের সব অপপ্রচার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী বলে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদকে মেয়র প্রার্থী মনোনীত করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম ছিল না। তবে দলটির মনোনয়ন পান আইভী। শামীম-আইভীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব যেন নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, এ জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে, এটা তিনি তাঁদের নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দলটির একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, এরপরে উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তাঁদের বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। ঠিক এরপরই যদি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন বিতর্কিত হয়, তাহলে বিএনপি বড় ইস্যু হাতে পাবে। ঠিক এ কারণে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে থাকবে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকা আরেকজন সদস্য বলেন, আইভীর মতো প্রার্থী হওয়ায় মেয়র পদে তিনি বিজয়ী হবেন, এটা নিশ্চিত। তবে কাউন্সিলর পদের নির্বাচনে সংঘর্ষ হতে পারে বলে তাঁর ধারণা। আজ সন্ধ্যা সাতটা থেকে গণভবনে সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দলটির নারায়ণগঞ্জের নেতাদের আইভীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিতে পারেন বলে দলটির কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তফসিল অনুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। যাচাই-বাছাই ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এফ/২১:৩৮/২২নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2gcxKXs
November 23, 2016 at 03:38AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top