ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর- আজ-কাল টেলিভিশন খুললেই তামিমের পটানো বিষয়ক বিজ্ঞাপন খুব চোখে পড়ে। তামিম কখনো বোলার, কখনো আম্পায়ার, কখনো রোদ্দুর, কখনো আরো কাকে কাকে যেন পটাচ্ছেন! তা হয়তো আম্পায়ার, বোলার বা সমর্থকদের পটাতেও পারেন তামিম ইকবাল খান। কিন্তু একটা ব্যাপার বিশ্বাস করুন ভাই, পটানো বলতে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে, সেই বান্ধবী পটানোর ব্যাপারে তামিম একেবারে শুরু থেকেই বড় আনাড়ি। আসলে আনাড়ি না বলে, বলা ভালো সে চেষ্টাও খুব একটা করেননি চট্টগ্রামের খানবাড়ির এই যুবরাজ! কেন করেননি? কারণ, সেটা দরকারই হয়নি। কারণ, অন্যদের পটাবেন কখন? পুরো কৈশোর তো গেছে একজনকে পটাতে পটাতে। ঠিক, ঠিক ধরে ফেলেছেনআয়েশা সিদ্দিকা। হ্যাঁ, সারাজীবন এই একজনকেই পটাতে পটাতে কেটে গেল তামিমের। এই আয়েশা সিদ্দিকী যে ইতোমধ্যে তামিম ইকবালের সহধর্মিণী হয়ে গেছেন, সেটা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না? বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা, তামিম ভক্তরা তো বটেই; যারা ক্রিকেটের খুব একটা খোঁজখবর রাখেন না, তারাও টের পেয়েছেন সেই বিয়ের ধুমধাম। চট্টগ্রামের বনেদি পরিবারগুলোর এমনিতেই বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে জাঁকজমক করার একটা রেওয়াজ আছে। তার ওপর তামিমের ব্যাপারটা আবার একটু আলাদা। এই পরিবারের আদ্যোপান্ত তারকার ছড়াছড়ি। একেবারে সোজাসাপটা তিন টেস্ট ক্রিকেটার তার পরিবারেআইসিসি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক আকরাম খান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের নায়ক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান নাফীস ইকবাল খান এবং উইজেডেনের বর্ষসেরা স্বয়ং তামিম ইকবাল খান। টেস্টের আঙ্গিনা ছেড়ে আরেকটু ভেতরে খোঁজখবর নিন। তামিমের বাবা ইকবাল খান নিজে তুখোড় ফুটবল ও টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন; বলা হয় খান পরিবারকে ক্রীড়া পরিবারে পরিণত করার স্বপ্নদ্রষ্টাও ছিলেন সেই মানুষটি। এরপর আকরাম খান ছাড়াও তামিমের বাকি চাচারা সবাই দেশের শীর্ষ পর্যায়েই ক্রিকেট খেলেছেন। তামিমের মা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিশিষ্ট সংগঠক, তামিমের ফুফা সিরাজউদ্দিন আলমগীর বিসিবির সাবেক পরিচালক ও শীর্ষ সংগঠকদের একজন! এমন পরিবারের ছোট ছেলের বিয়ে সারা দেশ জানবে না তাই কী হয়! হ্যাঁ, সারা দেশকে জানিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে শেষ হয়েছে সেই বিয়ের অনুষ্ঠান। অবশেষে মহাধুমধাম করে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা আয়েশা ঘরণী হয়েছেন। আমরা বরং আয়েশার এই পটার গল্পটার খোঁজখবর করে আসি। তামিম ছিলেন তখন সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ লেভেলের ছাত্র। আয়েশা ওই একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী। হঠাত্ একদিন কী করে যেন তামিমের চোখে পড়ে গেলেন আয়েশা। তারপর সিনেমায় যা হয় আর কী! তামিমের জীবনের তখন ধ্যানজ্ঞানই হয়ে দাঁড়ালো এই আয়েশাকে পটানো। কিন্তু জীবন তো আর সিনেমা নয়। চাইলেই পটিয়ে ফেলা যায় না। প্রথম প্রথম ইশারা ইঙ্গিতে চেষ্টা করলেন; কাজ হয় না। এরপর আয়েশার এক বান্ধবীকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠানো; এটা চিরায়ত উপায়। কিন্তু এতেও কাজ হলো না। অবশেষে তামিম ঠিক করলেন, আর ডিফেন্স করে লাভ নেই। হোক পেস বোলিং, এবার সামনে বেড়ে তুলে মারতে হবে। এগিয়ে গেলেন। সোজা হেঁটে গিয়ে বললেন, আই লাভ ইউ। টি-টোয়েন্টির যুগ। এতে নাকি কাজ হয়ে যায়। কীসের কী! কাজের ক-ও হলো না। একেবারে শোনামাত্র প্রস্তাব খারিজ করে দিলেন আয়েশা। ঠিক কী বলে খারিজ করেছিলেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্ক আছে। তবে কেউ কেউ বলে, আয়েশা নাকি বলেছিলেন, আই হেইট দিস ওয়ার্ডলাভ! ও, মা! তাহলে কীভাবে হবে! আপনি কী জানেন, তামিম মারকাটারি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঝে মাঝে স্পিন করেন? স্পিনারদের মাথায় বলের মতোই বাক নেওয়া কিছু বুদ্ধি থাকে। এবার তামিম পার্ট টাইম স্পিনার বুদ্ধিটা কাজে লাগালেন। বিনয়ের সঙ্গে প্রস্তাব দিলেন, আচ্ছা প্রেম করে কাজ নেই! ওটা ভালো কথা না। ওর চেয়ে আমরা বন্ধু হিসেবেই থাকি। হ্যাঁ, এটা ভালো প্রস্তাব। এমন নিরীহ প্রস্তাবে আর না করলেন না আয়েশা। আর যায় কোথায়! যে লোক অ্যান্ডারসন, ব্রেসনানান, টিনো বেস্টদের ঘুম হারাম করে দিতে পারেন; তার সঙ্গে থেকে থেকে ভালোবাসবেন না, যাবেন কোথায়। আয়েশা টেরও পেলেন না, কবে তামিমের পার্ট টাইম স্পিনে কাবু হয়ে গেছেন তিনি। আয়েশা কাবু হলেন, তামিম আগে থেকেই পড়ে ছিলেন; অতএব শুরু হয়ে গেল ভালোবাসা, প্রেম এবং ভালোবাসা। আহা, যা ভাবছেন তা নয়। সিনেমা আভি বি বাকি হ্যায়... চট্টগ্রামের দুই সম্ভ্রান্ত রক্ষণশীল পরিবারের ছেয়েমেয়ে রাস্তায় ড্যাং ড্যাং করে হাত ধরে প্রেম করে বেড়াবে, সে কল্পনারও সুযোগ নেই। একবার প্রেম শুরু হয়ে গেলে শুরু হলো আসল যন্ত্রণা। স্কুলের দারোয়ান, বাসার পাহারাদার, অভিভাবকদের লাল লাল চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখাই করা দায়। প্রেম হবে কী করে? ভাগ্যিস ততদিনে মোবাইল এসে গেছে দেশে; নইলে আরেকটা লাইলী-মজনু লিখতে হতো কী না, কে জানে। মোবাইলে আবার বেশি কথা বলার উপায় নেই। তাহলে ধরা পড়ে যাবে। তাই ছোট ছোট টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে চলে প্রেম। আর ফাকে ফুসরতে একবার চোখের দেখা মিললেই যেন আকাশ হাতে মেলে। এর মধ্যে আয়েশা একবার বাসায় টেক্সট পাঠালে ধরা পড়ে কেলেঙ্কারিও নাকি হতে বসেছিল। সমস্যাটা দিনকে দিন আয়েশার তরফেই বাড়তে থাকল। তামিম ওপেনার মানুষ তো; মাকে বলে আগেই প্রেমের জানাজানির সূচনাটা করে রেখেছিলেন। তামিমের মাও খুব সেকেলে মানুষ নন। তাই মেনেই নিয়েছিলেন ব্যাপারটা। কিন্তু আয়েশার হলো ঝামেলা, বাড়ি বলতেও পারেন না, সইতেও পারেন না। আত্মীয়-স্বজনরা যা গিফট দেয় লুকিয়ে তামিমকে পাঠিয়ে দেন, আর গুমরে ফেরেন। এর মধ্যে আয়েশাকে মুক্তি দিল মালয়েশিয়া। কুয়ালালামপুরের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চলে গেলেন আয়েশা। ব্যস! তামিমের পৃথিবীতে প্রিয় শহর হয়ে গেল কুয়ালামপুর, প্রিয় পরদেশ মালয়েশিয়া, প্রিয় বিমান মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স! ততদিনে তামিম জাতীয় দলের তারকা। সিরিজের মাঝে মাঝেই ছুটি পান। ছুটি পেয়েই সো করে চলে যান মালয়েশিয়া। আমরা যারা ক্রীড়া সাংবাদিকতা করি, ততদিনে জেনে ফেলেছি। কিন্তু পত্রিকায় লেখার উপায় নেই। কারণ, তামিমের এই মালয়েশিয়া অভিসারের তাহলে কপালে দুঃখ আছে। দেশে যতই বাধা থাক, মালয়েশিয়াই আসলে প্রথম সিনেমার মতো প্রেম জমল। রেস্টুরেন্ট, সিনেমা, বেড়ানো; এসব না হলে আর কীসের প্রেম। আর এসবই হলো মালয়েশিয়ায়। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? নাহ। আর বেশি চেপে রাখলেন না তামিমের মা। বুঝলেন ছেলে বড় হয়েছে, মেয়েও যোগ্য; তাহলে আর কীসের বাধা। তিনি মাথা নাড়াতেই কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আকরাম খান, নাফীস ইকবাল, সিরাজউদ্দিন আলমগীররা। শুরু হয়ে গেল বিয়ের মহাযজ্ঞ। তারপর? তারপরের গল্প তামিম আর আয়েশার কাছ থেকেই শুনে নেবেন না হয়। শুধু তামিম মাঝে একদিন গোপনে বলার মতো করে বলছিলেন, সে জীবনে আর এই জীবনে একটা বড় পার্থক্য আছে, শুনবেন? এখন আর ওর সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে হয় না।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2hUo4oX
December 21, 2016 at 10:54PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন