নিজস্ব প্রতিবেদক ● কুমিল্লার গোমতী নদী থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মাটি কাটা সিন্ডিকেটের লোকজন। এতে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে নদীর প্রতিরক্ষা বাধেঁর ভিতরের অংশ। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে পরিবহনের ফলে প্রতিরক্ষাবাধঁ হুমকীর মখে। প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ কোনটাই করতে পারছেনা নদী তীরের মানুষ। এদিকে নদীটির দু’পাশে বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ফসলী জমি। নদী তীরবর্তী এসকল জমিতে তীরবর্তী এলাকার সাধারন কৃষকরা আবাদ করতো বিভিন্ন কৃষি দ্রব্য।
তবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়ে লোকজন কখনোবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্ণীতি পরায়ণ লোকদের অর্থিক সুবিধার মাধ্যমে অবাধে প্রতিদিন মাটি কেটে শত শত ট্রাক্টরযোগে পরিবহন করে বিক্রি করছে। যার পুরোটাই ভাগভাটোয়ারা করে নিচ্ছে তারা। সরকার বঞ্চিত রাজস্ব থেকে। পাশাপাশি সাধারন কৃষকরাও পারছেনা প্রভাবশালীদের অত্যাচারে তীরবর্তী জমিতে চাষাবাদ করতে।
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র মাটি কেটে ট্রাক্টরযোগে পরিবহন করায় প্রতিরক্ষা বাধঁও বর্তমানে হুমকীর মুখে রয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা থানা, পুলিশ একেবারেই নিরব ভূমিকা পালন করছে। তবে কালে ভদ্রে ভ্রাম্যমান আদালত নদী তীরে অভিযান চালিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর আটক করে জরিমানা করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধিরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে।
সরেজমিন গোমতী নদীর তীরবর্তী বিভিন্নস্থান ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার প্রধান নদী গোমতীর প্রতিরক্ষাবাধেঁর ভিতরে সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর উপজেলার কমপক্ষে ৩০/৩৫ টি স্থান থেকে প্রভাবশালীরা অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাক্টর চালক জানান, নদীর মাটি প্রতি ট্রাক্টর বিক্রি হচ্ছে দেড়’শত টাকা করে। পরবর্তীতে স্থান কাল ভেদে দুরত্ব বুঝে প্রতি ট্রাক্টর মাটির সর্বোচ্চ মূল্য দাড়ায় কমপক্ষে ৭’শত টাকা। এভাবে জেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো থেকে প্রতিদিন অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে বিভিন্নস্থানের প্রভাবশালীরা। এর জন্য সংশ্লিস্ট এলাকার থানা, ফাঁড়ি পুলিশ, রাজনেতিক নেতারা পাচ্ছে নির্দিষ্টহারে মাসোহারা। দায়িত্বশীল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার আমতলী, আলেখারচর, দুর্গাপুর, পালপাড়া, কাচিয়াতলী, কাপ্তানবাজার, ছত্রখীল, রত্নাবতী, বাবুবাজার, বুড়িচংযের কামাড়খারা, গোবিন্দপুর, মীরপুর, ব্রাহ্মণপাড়ার মনোহরপুর, মালাপাড়া, রামনগর, দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জ, সুলতানপুর, মুরাদনগরের কোম্পানিগঞ্জসহ বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিন এভাবে শত শত ট্রাক্টরযোগে প্রভাবশালীরা মাটি কেটে বিক্রি করছে।
এতে নদীর মূল প্রতিরক্ষা বাধঁ হয়ে পড়েছে হুমকীর মুখে। পাশাপাশি নদীর তীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পানি প্রবাহ। এছাড়াও নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকগণ চাষাবাদকরতে পারছেনা।
কামারখাড়া, দূর্গাপুর, গোবিন্দপুর এলাকার একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা নদী তীরে বিভিন্ন তরিতরকারী যেমন, আখ, সরিষা, আলু, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতাম। কিন্তু এখন প্রভাবশালীদের অত্যাচারে আবাদ করতে পারছিনা। প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখায়। অনেক সময় দেখা যায় চাষকৃত জমির উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে নস্ট করে ফেলে। ফলে চাষাবাদ করতে পারছিনা আগের মত। পুরো নদী তীরের বিশাল এলাকাজুড়ে খালি পড়ে রয়েছে শত শত একর জমি।
অপরিকল্পিতভাবে নদীর প্রতিরক্ষা বাধেঁর ভিতরে মাটি কেটে বিক্রি এবং প্রতিরক্ষা বাধেঁর ক্ষতির বিষয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, মাটি খেকোরা এতই শক্তিশালী যে মনে হয় যেন আমরা তাদের কাছে অসহায়। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা সোচ্চার না হলে এদেরকে রোধ করা সম্ভব নয়।
The post গোমতী নদীর মাটি নিয়ে অবৈধ ব্যবসা appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2hDC4D6
December 20, 2016 at 06:23PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন