ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর- প্রেমিক সুহেলের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সিলেটের সেবিকা ডলি। গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন স্বপ্নের সংসার। সেই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে শত লাঞ্ছনা সয়ে গেছেন প্রেমিকের। কিন্তু স্বপ্ন তার স্বপ্নই থেকে গেলো। উল্টো প্রেমিক তার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক একাউন্ট খুলে হয়রানি করে তাকে। প্রেমিকের এমন আচরণে মুষড়ে পড়েছিলেন ডলি। বেছে নিতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যার পথও। এই অবস্থায় সহকর্মীরা এসে দাঁড়ান পাশে। সাহস দেন বেঁচে থাকার। লড়াই করার অনুপ্রেরণাও দেন সবাই। সেই থেকে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন ডলি। এখন শত স্ক্যান্ডালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার ওপর অত্যাচারের প্রতিকার চাইছেন। ইতিমধ্যে দায়ের করেছেন মামলাও। ডলি জানালেন, সমাজের নষ্টদের খপ্পরে পড়ে জীবনের সবকিছু হারিয়েছি। এখন প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিচার চাইছি। এই সমাজের কাছে আমি ন্যায় বিচার চাইবো। ডলির পুরো নাম জাহানারা বেগম ডলি। সিলেটের উইমেন্স কলেজ হাসপাতালের একজন সেবিকা। তার বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। তবে মামলায় নানার বাড়ি গোলাপগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। আর তার কাঠগড়ায় অভিযুক্ত প্রেমিক সুহেল আহমদ। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কানিশাইল গ্রামের জহুল আলীর ছেলে। বর্তমানে তারা সিলেটের আলমপুরের শাহনাজ ভিলার ৪র্থ তলার বাসিন্দা। ডলি গত ২২রা অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি থানায় প্রেমিক সুহেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। এই মামলা দায়ের করার পর থেকে পলাতক সুহেল। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার করে নিতে সুহেল হুমকির মুখে রেখেছেন ডলিকে। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩ সালে। তখন লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন সুহেল আহমদ। আর ডলি ছিলেন হাসপাতালের সেবিকা। তখন ফেসবুকের মাধ্যমে সুহেলের সঙ্গে ডলির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের এ প্রেমের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছিল ডলির বান্ধবীদের কাছেও। এভাবে প্রায় দুই বছর তাদের মধ্যে ফেসবুকে প্রেম চলে। লন্ডনে অবৈধভাবে বসবাস করায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটে চলে আসেন সুহেল। সুহেল দেশে আসার পর তাদের প্রেমের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। ডেটিং করে বেরিয়েছেন সিলেটে। হোটেল, পর্যটন স্পট, পার্ক সবখানেই তারা সময় কাটান। জাহানারা বেগম ডলি জানান, দেশের আসার পর থেকে সুহেল আমাকে একান্তে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। এতে আমার বারণ ছিল। প্রায় সময় সে আমাকে ট্র্যাকে ফেলার চেষ্টা করতো। আমি এড়িয়ে গেছি। দিয়েছি বিয়ের চাপ। কিন্তু সে বিয়ে করবে করবে বলে আমাকে একান্তে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। সুহেলের এমন আচরণে কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন ডলি। কিন্তু মনের মানুষ সুহেলের সেই আবদার তিনি একপর্যায়ে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। মামলার এজাহারে ডলি উল্লেখ করেছেন, গত ২৬শে আগস্ট সুহেল তাকে নিয়ে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার চৌধুরী বোর্ডিংয়ে। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে তার বন্ধু মিন্টুর সহযোগিতায় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ সময় ডলি বাধা দিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি বলে জানান। এ ঘটনার পর ডলি অনেকটা মুষড়ে পড়েন। বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন সুহেলকে। সুহেলও তাকে আশ্বস্ত করেছিল বিয়ে করবে। এভাবে হোটেলে নিয়ে আরো কয়েকদিন সুহেল প্রেমিকা ডলিকে ধর্ষণ করে। এমনকি তার আলমপুরস্থ ভাড়া বাসায় নিয়েও ধর্ষণ করে। যেদিন ডলিকে সে তাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিল সেদিন বাসায় কেউ ছিল না। ডলি জানান, সুহেলের প্রেমে আমি মজেছিলাম। এ কারণে সুহেলকে আমি নিজের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম। এদিকে লন্ডন ফেরত সুহেল একপর্যায়ে আর্থিক অনটনে পড়ে। চাকরির খোঁজ করতে থাকে। বলে চাকরি পেয়ে গেলেই সে বিয়ে করবে। ওই সময় ডলি তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সুহেলকে সিলেটের হোটেল মেট্রোতে রিসিপশনিস্টের চাকরি দেয়। বিভিন্ন সময় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সুহেলের হাতে তুলে দিয়েছে। সেই টাকার পরিমাণ প্রায় তিন লাখ। পরবর্তীতে সে ইথোপিয়া ও সিলভিউ হোটেলেও চাকরি করে। চাকরি পেলেও সুহেল বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। ডলি যতই বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো সোহেল ততই তাকে মানসিকভাবে আঘাত করছিল। এমনকি তাকে কয়েকবার অপমানও করে। একপর্যায়ে সে তার দুটি মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেয়। ডলির সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে ডলি আরো দিশেহারা হয়ে পড়েন। তিনি নিজেও ভেঙে পড়েন। ডলি জানান, সুহেলের এরকম আচরণে তিনি হতবাক হয়ে বেছে নিতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ। না পারছিলেন বলতে, না পারছিলেন সইতে। কিন্তু তার কয়েকজন বান্ধবী এই অবস্থা বুঝে ডলির পাশে এসে দাঁড়ান। দেন অভয়ও। এরপর ডলি চলে আসেন নগরীর দাড়িয়াপাড়ার মেঘনা আবাসিক এলাকায়। সেখানে আসার পর সুহেলের সঙ্গে ফের যোগাযোগ হয় ডলির। সুহেল সোলেমান নামের একজনকে তার মামা সাজিয়ে নিয়ে আসেন ডলির বান্ধবীর বাসায়। এ সময় সুহেল বলেন, সে বিয়ে করবে। তবে তাকে সময় দিতে হবে জানুয়ারি পর্যন্ত। ডলি তার কথায় আশ্বস্ত হন। কিন্তু সুহেল একপর্যায়ে ডলির পরিবারের কাছে লোক মারফতে বিষয়টি জানায়। ডলিকে নষ্টনারী আখ্যায়িত করে তাকে সরে যাওয়ার জন্য ডলির পরিবারকে হুমকি দেন। কিন্তু ডলির পরিবার বিষয়টি জানতো না। লোক মারফতে তারা বিষয়টি জেনে ডলির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডলিও তার পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। এদিকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় নিয়ে সুহেল পুনরায় মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে। ডলির ছবি দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে নানা অপপ্রচার শুরু করে। এ অবস্থায় ডলি আরো দিশেহারা পড়েন। এ ঘটনার পর সুহেলের প্রকৃত চরিত্র তার কাছে খোলাসা হওয়ার পর তিনি কোতোয়ালি থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলাটি এখনো পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। ডলি জানান, মামলা দায়ের করার পর আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুহেল। ফেসবুকে অপপ্রচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন। হুমকি দেন তার কাছে আমার স্পর্শকাতর কিছু ছবি আছে। সেগুলো সে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। দিয়েছে আলটিমেটামও। তিনি জানান, বিভিন্ন সময় সুহেল যখন আমাকে ধর্ষণ করতো তখন সে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করতো। আমি বাধা দিয়েও তাকে আটকাতে পারতাম না। আর এসব ছবি দিয়ে সে আমাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব ঘটনা জানিয়ে ১১ই নভেম্বর সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ডলি। ওই ডায়েরিতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। ওদিকে, মামলা দায়ের করা হলেও সুহেল ও ডলির বিষয়টি মীমাংসা করতে ডলির পরিবার থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সবকিছু ভুলে তারা বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালান। প্রায় ১৫ দিন আগে ডলির চাচা কুতুব মিয়া ও আরেক আত্মীয় মনির আহমদ বিষয়টির মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন সুহেলের মা সাবিয়া খানমের কাছে। কিন্তু সাবিয়া খানম জানিয়ে দিয়েছেন, সুহেলকে তিনি ত্যাজ্যপুত্র করেছেন। সে এখন আর তাদের সঙ্গে নেই। ফলে পারিবারিকভাবেও মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। এদিকে সিলেটের কোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছেন, সুহেলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ তদন্ত শেষ করেছে। খুব শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2idxmZX
December 21, 2016 at 03:16PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন