নিজস্ব প্রতিবেদক ● ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর, এই দিনে কুমিল্লা পাক হানাদার বাহিনীর গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত হয় প্রিয় কুমিল্লা। কুমিল্লার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের হাসি। উড্ডয়ন হয় লাল সবুজ পতাকা। মুক্তি পাগল মানুষের জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে কুমিল্লা। অনেক ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতা কুমিল্লাবাসীর মাধ্যে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার উৎসাহ সৃষ্টি করে।
দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে বছর ঘুরে আবার আসে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন-শোষণকে কবর দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এদেশের দামাল সন্তানদের ছিনিয়ে আনা বীরত্বগাথা বিজয় অর্জনের মাস এই ডিসেম্বর। রক্তাক্ত যুদ্ধের পর এ মাসেই অর্জিত হয় বাঙালি জাতির বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা, যৌথ ও মিত্র বাহিনীর উর্পযুপরি আক্রমণে পরাস্ত হয় হানাদার বাহিনী।
কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চূয়ান্ত অভিযান শুরু করে। এ অভিযান কুমিল্লার বেশ কিছু অঞ্চল বিশেষ করে বিবির বাজার, নিশ্চিন্তপুর, চৌদ্দগ্রাম, বেলুনিয়া ও মাঝিগাছায় তীব্র হয়ে উঠে। নভেম্বরের শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমনের কাছে হার মেনে পিছু হঠে।
২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদিঘী এলাকা দখল করে নেয়। এটিই কুমিল্লার প্রথম মুক্তাঞ্চল। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তি বাহিনীর আক্রমণ আরো জোরালো হয়।
৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর যোদ্ধারা কুমিল্লার ময়নামতি আক্রমনের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহন করে। এদিন রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আর ডি হিরার নেতৃত্বাধীন ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের দায়িত্বে যৌথ বাহিনীর ৩০১ মাউন্ট ব্রিগেড এবং মুক্তি বাহিনীর ইর্স্টান সেক্টর লালমাই পাহাড় ও লাকসামে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙ্গে ফেলে এবং লাকসাম-কুমিল্লার পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ সময় কুমিল্লার ও লাকসাম পাকিস্তানি বাহিনীর ১১৭ ব্রিগেড ও ৫৩ পদাতিক ব্রিগেডের দায়িত্বে ছিল।
লাকসামের মুদাফ্ফরগঞ্জে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয় এবং ৬ ডিসেম্বর মুদাফরগঞ্জ মুক্ত হয়। পরের দিন মুক্তিবাহিনী ঢাকার সাথে ময়নামতির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এদিকে লাকসামের ঘাঁটি রক্ষায় পাকিস্তান বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠে। পাকিস্তান বাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট কুমিল্লা বিমানবন্দর (বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেড) সংলগ্ন সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থান নেয়। ৭ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ২৭ জন যোদ্ধা শহীদ হন। রাতেই বিমান বন্দরে পাক বাহিনীর পতন ঘটে। ভোর রাতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মুক্ত কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে।
৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শহর মুক্ত হলেও শহরের ৬কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতি সেনানিবাস তখনও পাক বাহিনীর দখলে। বিভিন্ন স্থান থেকে পাক বাহিনী পিছু হটে এ গ্যারিসনে পরপর তিনটি বুহ্যের সৃষ্টি করে ট্যাংক ও কামান বহর দিয়ে অত্যান্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। এজন্য যৌথ বাহিনী ময়নামতি গ্যারিসন অবরোধ করে অনবরত বিমান হামলা পরিচালনা করে। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনির আত্মসমর্পণের পর ১৬ডিসেম্বর ময়নামতি গ্যারিসনও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এখানে পাকিস্তানি ২৫জন ব্রিগেডিয়ার, ৭৬জন অফিসার, ১শ ৭৫জন জেসিও এবং ৩ হাজার ৯শ ১৮জন সৈন্য আত্মসমর্পন করে। ময়নামতি গ্যারিসন ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত হলেও কুমিল্লা শহর ৮ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কুমিল্লার প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ৮ ডিসেম্বর বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী, উৎসুক জনতার উপস্থিতিতে ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, তৎকালীন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী ও কুমিল্লার প্রথম জেলা প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমেদ।
কুমিল্লা মুক্ত দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টায় কুমিল্লা টাউন হল থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে ধর্মসাগর নগর উদ্যান সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্তস্তবক অর্পণ, বিকাল ৫টায় কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গনে কুমিল্লা মুক্ত দিবস উপলক্ষে শিখা প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যা ৬টায় টাউন হলের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
The post ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2gkRN92
December 08, 2016 at 12:15AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.