মোঃ আবুল কালাম ● লাকসাম পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র দৌলতগঞ্জ বাজারের ৩টি পাইকারী মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে দৌলতগঞ্জ বাজারের মনোহরী পট্টী, স্বর্ণ পট্টী ও কাপড়িয়া পট্টির প্রায় দেড় শতাধিক পাইকারী দোকান ঘর সম্পূর্ন ভূস্মিভূত হয়।
এমন বিপর্যয় লাকসামের মানুষ অতীতে আর কখনো দেখেনি। এক রাতেই ধ্বংসস্তূপে পরিনত হল লাকসাম বাজার। শেষ হয়েগেল শত শত মানুষের স্বপ্ন।
এতে ক্ষয়ক্ষতি ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। সংবাদ পাওয়ার পর লাকসাম দমকল বাহিনীর ২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে নামে। পরে বিভিন্ন স্থান আরো ৬টি ইউনিট সম্মিলতভাবে প্রায় ৯ ঘন্টা চেষ্টার পর শনিবার সকালে আগুন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে আনে।
আগুন লাগার পর পরই পুড়ে যাওয়া দোকান মালিক-কর্মচারী এবং আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানাতে শনিবার দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে।
লাকসাম দমকল বাহিনী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সুত্রে জানা যায়, ওইদিন রাত ১১টার দিকে লাকসাম পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্র দৌলতগঞ্জ বাজারের মনোহরী পট্টির মাঝামাঝি একটি কসমেটিক দোকান থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিনশেড দোকানগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে প্রথমে দমকল বাহিনীর লাকসামের ২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, চৌয়ারা, বরুড়া, সোনাইমুড়ি ও হাজীগঞ্জ থেকে আসা দমকল বাহিনীর আরো ৬টি ইউনিট সম্মিলতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রনে নামে।
কিন্তু মনোহরী পট্টিতে প্লাষ্টিক, আতশবাজি এবং কাপড়পট্টিতে কাপড়ের গুদামে আগুন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এ সময় দমকল বাহিনীর সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রনে যোগ দেয় স্থানীয় জনগন ও ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ প্রায় ৯ ঘন্টা অবিরাম চেষ্টার পর দমকল বাহিনীর ৮টি ইউনিট শনিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
অগ্নিকান্ডে কাপড়পট্টীতে অবস্থিত সাংবাদিক মোঃ আবদুল কুদ্দুসের ডাঃ ক্লথ স্টোর, সাংবাদিক কামরুল ইসলামের পাপন শাড়ী বিতান, নিউ বাংলাদেশ ক্লথ স্টোর, মেসার্স আমিনুল ইসলাম, আরব ক্লথ স্টোর, মেসার্স অমলেন্দু সাহাসহ প্রায় ৪৩টি দোকান, ১৬টি জুয়েলারী দোকান, ৪০টি জুয়েলারীর কারখানা, একটি তৈল মিল, ২টি খাবার হোটেল, ২টি লাইব্রেরীসহ ছোট-বড় দেড়শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অগ্নিকান্ডে ভস্মিভূত হয়। পুড়ে যাওয়া কাপড়, মনোহরী ও স্বর্ণ দোকানগুলোর অধিকাংশই পাইকারী দোকান।
অগ্নিকান্ডে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারনা করছেন ব্যবসায়ীরা।
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জুয়েলারী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সুভাষ বণিক জানান, ১৬টি জুয়েলারী দোকান এবং প্রায় ৪০টি জুয়েলারীর কারখানায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ১শ’ কোটির অধিক টাকা ক্ষয়ক্ষতির ধারনা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
কাপড় ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক জানান, কাপড়পট্টীতে অবস্থিত প্রায় ৪৩টি দোকান ও গুদামের মালামাল সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও আনুমানিক শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি উপস্থিত থেকে আগুণ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়েছি। অগ্নিকান্ডে ২ শতাধিক দোকান-ঘর ভস্মিভূত হয়েছে। এতে অন্ততঃ ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
অগ্নিকান্ডের সংবাদ পেয়ে কুমিল্লা-৯ জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এমপি কর্নেল (অবঃ) এম. আনোয়ারুল আজিম, লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুছ ভূইয়া, পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, লাকসাম পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ বাহার উদ্দিন বাহার, প্যানেল মেয়র-২ আবদুল আলিম দিদার, লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক তাবারক উল্লাহ কায়েস, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরির্দশন এবং উদ্ধার কাজ তদারক করেন।
লাকসাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার মোবারক আলী বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এক পর্যায়ে টিনসেড দোকান, কাপড় ও দাহ্য পদার্থের দোকানে আগুণের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়লে আগুনের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়। পরে আমাদের সাথে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নোয়াখালী থেকে আসা ৮টি ইউনিটের অব্যাহত চেষ্টায় সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারনে অগ্নিকান্ড ঘটেছে বলে ধারনা করলেও ক্ষয়-ক্ষতির ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি।
The post এক রাতেই ধ্বংসস্তূপে পরিনত হল লাকসাম বাজার appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2kfp7kO
January 22, 2017 at 10:27AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন