সুনামগঞ্জের ৪৬টি হাওরে ১৫শ কোটি টাকার ফসল নিয়ে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় কৃষক


সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৪৬টি হাওরের বাঁধ রক্ষার কাজ ১৫ডিসেম্ভর থেকে নিয়ম আনুযায়ী শুরু করার কথা পাউবো। কিন্তু ২১দিন পার হলেও মেরামতের কাজ শুরু দুরের কথা জেলার তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা,মধ্যনগড়,দিরাই,শাল্লা সহ বিভিন্ন উপজেলায় এখনো পিআইসি গঠন করা হয় নি। আর যে কয়েকটি উপজেলায় পিআইসি গঠন করা হয়েছে তারাও হাওরের বাঁধের কাজ করছে না। এদিকে কৃষকরা হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই বোরো ধানের চারা রোপন করা শুরু করেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সময় মত বাঁধ নির্মান না করে নাম মাত্র বাঁধ নির্মান করার জন্য পিআইসির মাধ্যমে পাউবো পুকুর চুরির করার পায়তারা করছে। ফলে জেলার লক্ষ লক্ষ কৃষক আগাম বন্যায় কোটি কোটি টাকার ফসল হানীর আশংকায় উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। সরকার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ,পিআইসি ও ঠিকাদারদের বিরোদ্ধে দ্রুত জুরালো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় সর্বস্থরের জনসাধারনের মাঝে চরম ক্ষোব বিরাজ করছে। জেলার উল্লেখ যোগ্য বৃহৎ হাওর গুলো হলো-খরচার হাওর,শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,বলদার হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওর,দেখার হাওর,চাপাতি হাওর,তুফান খালি,মাছুয়ারাখারা,সুরাইয়া বিবিয়ানা,জোয়াইরা সহ মোট ছোট-বড় ৪৬টি হাওর। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানাযায়,এ জেলার আবাদী জমির পরিমান ৩৭,৯২১৬হেক্টর,আবাধ জমি-২৭,৬৪৪৭হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ১৯হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন প্রকার ধান চাষ করা হবে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। আর হাওরের বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে জেলার ৪৬টি হাওরের দু-শত ৩০কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ন ও মাটি ভড়াটের ১০কোটি ৭০লাখ টাকার কাজ পেয়েছে। উৎপাদিত ধানের মধ্যে রয়েছে-হাইবিট,স্থানীয় ও বাকি জমিতে অকশি জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে। এসব জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত ধান থেকে ৯লক্ষ মেঃটন ফসল উৎপন্ন হয়। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকা। আরো জানাযায়,জেলায় ৪৬টি হাওরে ২৩০টি পিআইসি মাধ্যমে হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মান,মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন করার কথা রয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। জেলার ৩৭টি হাওর বড় ও অন্যান্য ছোট হাওরে উৎপাদিত এক ফসলী বোরো ধান জেলাবাসীর একমাত্র সম্পদ। জেলার ২৫লক্ষাধিক জনসাধারনের মধ্যে প্রায় ২০লাক্ষাধিক মানুষ ঐসব হাওরে চাষাবাদের উপর নির্ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত করে থাকে। সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,উত্তম রায়,শফিকুল সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাওর পাড়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়,হাওর রক্ষায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দিলেও সঠিক ভাবে,সময় মত বাঁধ নির্মান ও মেরামত না হওয়ার কারনে কষ্টের ফলানো সোনার ফসল সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়া দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ভাগ কাজ হয় না। হাওরের পানি কমলেও ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতে এখনও কোন প্রস্তুতি নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসিদের। আবারও পাহাড়ী ঢলের পানিতে হাওর গুলো ডুবে যাবার আশংকায় আতœংকের মাঝে আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিভিন্ন সংঘটনের লোকজন জানান,বিভিন্ন হাওরে নির্মিত বেরী বাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোন উপকারে না আসলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারী হয়েছে আর পিআইসি মাধ্যমে প্রতি বছর দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে পাউবো যা অপেন সিক্রেট। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন,হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে আমাদের পক্ষ থেকে বার বার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কে বলছি। সময় মত সঠিক ভাবে বাঁধ না হলে গত বছরের মত এবছরও বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান,প্রতি বছর পাউবো হাওরের বাঁধ নির্মান ও মেরামত করার নামে কোটি কোটি টাকা পুকুর চুরি করে। যার ফলে হাওরে পাউবোর বালির বাঁধ সামান্য পানির চাপে ভেঙ্গে কৃষকের কষ্টের ফলানো সোনালী ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এবার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি হলে এর দায় পাউবো কেই নিতে হবে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। জনস্বার্থে এবার কঠিন আন্দোলন করা হবে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান,হাওরে পানি কমতে দেরী ও সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনের কারনে পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু করতে দেরী হয়েছে। যে সব এলাকায় পিআইসি গঠন করা হয় নি খুব শ্রীর্ঘই পিআইসি গঠন করে বাঁধের কাজ শুরু হবে। আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০কোটি ৭০লাখ টাকা এত কম টাকায় বাঁধ রক্ষার কাজ করতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি।
উল্লেখ্য,গত বছর জেলার ছোট বড় ৪৬টি হাওরে সময় মত ও সঠিক ভাবে বাঁধ মেরামত না করায় ১৫টি বাঁধ ভেঙ্গে ২৫টি হাওরের ৬০-৭০ভাগ পাকা,আধা কাচাঁ বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2iVAwVW

January 08, 2017 at 02:33PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top