যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর দেখলাম বাংলাদেশে, এমনকি এখানেও অনেকেই চিন্তিত। গুজব চলছে, পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে একটু ঝামেলা হবে। এগুলো ভিত্তিহীন ভাবনা। ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন বলে কারও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন গুঁড়েবালি হয়নি। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্পের কথায় চলবে না। এখানে যে যার রাজ্যে ট্রাম্প। উচ্চশিক্ষার্থীকে নেবে বিশ্ববিদ্যালয়। নেবেন অধ্যাপক। অধ্যাপকের দৃষ্টিতে শিক্ষার্থী যোগ্য হলে, তার নাম-ধাম-ধর্ম-জাত দিয়ে তাদের কিছু আসে যায় না।
এ দেশে ব্যাচেলর (চার বছর) শেষ করেই গ্র্যাজুয়েট স্টাডি শুরু করে সবাই। ব্যাচেলরকে তারা বলে আন্ডারগ্র্যাড। গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম (পিএইচডি) হলো সাধারণত পাঁচ বছর। তবে ক্ষেত্র বিশেষে, কারও কারও পিএইচডি শেষ করতে ছয়-সাত বছর লাগতে পারে। তাতে অবাক হওয়া কিছু নেই। বিষয়গুলো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে—যেমন স্কুল, সুপারভাইজর (PI), ফান্ডিং, শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও গবেষণার ধরন (Research Field) ইত্যাদির ওপর।
গ্র্যাজুয়েট স্টাডির জন্য এ দেশে জিআরই (GRE) টেস্ট লাগে। যারা এ দেশের নাগরিক, তাদেরও এই টেস্ট দিতে হয়। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট। ব্যাচেলর শুরুর আগে যেমন তাদের দিতে হয় SAT টেস্ট। আর টোফেল/আইএলটিএস হলো শুধুমাত্র আমাদের জন্য। আমরা যারা নন ইংলিশ স্পিকিং দেশ থেকে আসতে চাই। কারণ এই দুটো টেস্ট শুধুমাত্র ‘ইংরেজি ভাষা’ জ্ঞানের দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। বাংলাদেশে অনেকেরই একটা ভুল ধারণা থাকে। সেটা হলো, জিআরই ও টোফেলে ভালো স্কোর তুললেই আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত। ধারণাটা ঠিক নয়। এই সব টেস্টের স্কোর হলো ভর্তির একটা রিকোয়ারমেন্ট (Requirement)। আবেদনের জন্য এই টেস্টগুলো সম্পন্ন থাকতে হবে। তবে এগুলো থাকলেই ভর্তি নিশ্চিত নয়।
জিআরইর দুটি ধরন থাকে। জিআরই জেনারেল ও জিআরই সাবজেক্ট। এখানের কোনো কোনো স্কুল গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য দুটিই চায়। অনেক স্কুল শুধু একটা চায়। স্কুলভিত্তিক বিষয়গুলো নির্ভর করে। সুতরাং আবেদনের আগে ওই সব স্কুলের ওয়েবসাইটে গেলেই বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
লেখককেউ যদি এ দেশে পোস্ট ডক্টরাল (পিএইচডি পরবর্তী) গবেষণা করতে চান, তাহলে এই সব টেস্ট দরকার হয় না। পোস্ট ডক্টরাল গবেষকদের মূল্যায়ন করা হয় ‘রিসার্চ স্কলার’ বা ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস’ হিসেবে। গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের মতো, পোস্ট ডক্টরাল গবেষকেরা স্টুডেন্ট নন। তবে, নন-ইংলিশ স্পিকিং দেশ বা এশিয়ান দেশগুলো থেকে আসা গবেষকদের জন্য, অনেক স্কুল একটি জেনারেল স্পিকিং টেস্ট নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই হাজার কলেজ-ইউনিভার্সিটি আছে। যার যার যোগ্যতা, মেধা ও দৃষ্টিশক্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে, কে কোথায় পড়তে ইচ্ছুক। গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদনের আগে অনলাইনে খোঁজ-খবর নেওয়া ভালো। যত বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা যায় ততই সুবিধা। এ দেশে বহু স্কুল হলো টিচিং স্কুল। এগুলোতে মেইনলি কোর্স পড়ানো হয়। গবেষণা সীমিত। অনেক স্কুল হলো রিসার্চ স্কুল। যেগুলোতে মেইনলি গবেষণা হয়। আমেরিকার প্রথম সারির স্কুলগুলো হলো ‘রিসার্চ স্কুল’। এগুলোতে ফান্ডিং বেশি। বড় বড় গবেষকেরা সেখানে কাজ করেন। (চলবে)
ড. রউফুল আলম: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র<rauful.alam15@gmail.com>
from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2j0YL4J
January 10, 2017 at 08:20PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন