সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মারকলিপি প্রদান


মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যলয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের ১১ বছর পুর্তিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমদের মাধ্যমে স্মারক লিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদ সিলেট’র আহবায়ক নুরুল আমীন, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর হোসেন, আমীর আলী, আব্দুল আহাদ এলিদ, রফিুকুল ইসলাম, রিপন হাওলাদার সানি আলম সরকার, মির্জা আলমগীর, আব্দুল আলীম, শেখ কামাল মিয়া, ওসমান গণি ফেনু, ছালিকুর রহমান, শেখ তোফায়েল আহমদ সেফুল প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলাবাসী। আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে পরপর দুই দফা ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খননকারী প্রতিষ্টান কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো দুই দফা অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে বিশাল ক্ষতি করেছে। যে ক্ষতি কোনো দিন পোষাবে না। আজ এক যুগ হতে চললেও সেই ক্ষত চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে টেংরাটিলার মানুষ। টেংরাটিলায় এখনও বুদবুদ হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে দৃশ্যমান হয় চর্তুদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুদবুদ হয়। আর বর্তমানে যে শুস্কমৌসুম চলছে এই সময়ে গ্যাসের বিকট গন্ধে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যহত হচ্ছে, সুস্থ সবল মানুষগুলো ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অকাল মৃত্যু বরনের মাত্রাও উল্লেখযোগ্য।
টেংরাটিলা এলাকায় বিগত ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন টেংরাটিলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ দুটি দিন টেংরাটিলার ট্র্যাজেডির দিন। ভয়াবহ ও বিভিষিকার দিন। এ দুটি দিন টেংরাটিলাবাসী কোনোদিইন ভুলতে পারবেন না। কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকোর চরম অদক্ষতার কারনে গ্যাস ভান্ডার টেংরাটিলায় দুই দফা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দুই বারে কম হলেও ৬ মাস আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। পরপর দুই বারের আগুনে টেংরাটিলা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রকৃতিঘেরা টেংরাটিলা পরিনত হয় বিরাণভুমিতে। এখানের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়ে পড়ে। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে আশপাশের এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে যাযাবর জীবন যাপন করেন।
এই অগ্নিকান্ডে টেংরাটিলা, আজবপুর, খইয়াজুড়ি, শান্তিপুর ও গিরিশ নগরের ৬১৬ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ। ওই ৫টি গ্রাম টেংরাটিলা গ্যাসকুপের চর্তুদিকের এক কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। পরবর্তীতে টিম পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে ৬১৬টি পরিবার নির্ধারন করেন। এই পরিবারগুলো এখনও অসহায়। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা পায়নি কোনো ক্ষতিপুরন। প্রথমে অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করলেও এখন কিছুটা ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ। তবে, এখনও ক্ষতিপুরনের আশায় পথ চেয়ে বসে আছে মানুষ। কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো অগ্নিকান্ডের সময় সিঙ্গাপুর থেকে বীমার টাকা আদায় করলেও রাস্ট্রীয় কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে কোনো ক্ষতিপুরন দেয়নি। বরং তারা পর্যাক্রমে টেংরাটিলা থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। এ কারনে আমাদের দাবি হচ্ছে- টেংরাটিলায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরন নাইকোর কাছ থেকে আদায় করে ক্ষতিগ্রস্থদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি দেশের সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটিও সরকার আদায় করুক।
এই অবস্থায় টেংরাটিলায় অফুরন্ত গ্যাস ভান্ডার এখনও অক্ষত রয়েছে। বিভিন্ন সময় গ্যাস বিশেষ্ণরা অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন। আজ থেকে ১১ বছর পূর্বে সরকারের খনন কাজে ততটা দক্ষ ছিল না। আপনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টর আগের সিলেট তথা বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গৌরবময় সময় অতিবাহিত করছে। এই অবস্থায় টেংরাটিলার প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার নজর দিলেই টেংরাটিলা আবার সচল হবে। এতে করে সরকার গ্যাস সংকট কাটাতে পারবে।
টেংরাটিলা আবার সচল হোক- সেই আশায় পথ চেয়ে আছে টেংরাটিলাবাসী। আপনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি উন্নয়নশীল রাস্ট্র। সুতরাং জনতার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি রাখতে পারি। কারন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কেবল জনগনের প্রকৃত মনে ভাষা বুঝতে পারেন। আমাদের দাবি তিনটি। ১. নাইকোর কাছ দ্রততম সময়ে ক্ষতিপুরন আদায়, ২. টেংলাটিলা গ্যাসক্ষেত্রকে পেট্রোবাংলার অধীনে সচল করা, ৩. দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদগীরিত গ্যাস সম্পর্কে সিদ্বান্ত গ্রহন করে পরিবেশ রক্ষা করা।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2hUF2zC

January 05, 2017 at 07:37PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top