কলকাতা, ১৪ জানুয়ারি- অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে ব্যান্ডিট কুইন নামটি। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যান্ডিট কুইন সিনেমাটি নানা কারণে যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছিল সারা দেশে। ফিল্মের একটি দৃশ্যে ছিল ফ্রন্টাল ন্যুডিটি। ক্যামেরার সামনে উন্মোচিত হয়েছিল সীমার শরীরের গোপনতম অঙ্গও। কী ভাবে শ্যুটিং হয়েছিল সেই দৃশ্য? এই দৃশ্য দেখে কী বলেছিলেন সীমার বাবা? আজকাল কী-ই বা করছেন সীমা? আসুন, জেনে নেওয়া যাক। সীমার জন্ম অসমের নালবাড়ি এলাকায়। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা(এনএসডি)-র ছাত্রী ছিলেন সীমা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না তাঁর। অনেক কষ্ট স্বীকার করেই সীমার বাবা মেয়েকে এনএসডি-তে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। পাশ করার পরে সীমার পরিকল্পনা ছিল আইন পড়ার। সিনেমায় অভিনয় করবেন, এমন চিন্তা তাঁর কল্পনাতেও ছিল না তখন। সীমার নিজের সিনেমায় আসার পরিকল্পনা না থাকলেও এনএসডি-তে সুঅভিনেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁকে স্মিতা পাটিলের সঙ্গেও তুলনা করতেন অনেকে। সেই সময়েই পরিচালক শেখর কপূরের নজর পড়ে সীমার উপর। শেখর তখন ফুলন দেবীকে নিয়ে নিজের নতুন সিনেমার নামচরিত্রের জন্য অভিনেত্রী খুঁজছেন। সীমার আনপ্রফেশনাল পোর্টফোলিও পছন্দ হয় শেখরের। তিনি ব্যান্ডিট কুইন সিনেমার মুখ্য ভূমিকার জন্য নির্বাচন করেন সীমাকে। সিনেমায় ফুলন দেবীর চরিত্রে সীমার অসামান্য অভিনয় সকলের নজর কাড়ে। অথচ মজার বিষয় এটাই যে, এই রোলের অফার আসার আগে ফুলন দেবীর নামই শোনেননি সীমা। কিন্তু শেখর তাঁকে ফুলন দেবীর চরিত্রে নির্বাচন করার পর থেকেই সীমা ফুলন দেবীকে নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দেন। এমনকী, ফুলন দেবীকে চাক্ষুষ দেখা এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেও তাঁর ছিল। কিন্তু ফুলন তখন জেলে থাকায় সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সেই সময়ে সীমার হিন্দিও তেমন ভাল ছিল না। অসমের মেয়ে হওয়ার কারণে হিন্দি বলতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন সীমা। কিন্তু রাতের পর রাত জেগে রিহার্সাল করে নিজের সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠেন তিনি। ব্যান্ডিট কুইন রিলিজ হওয়ার পরে ছবিটি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল যেখানে ফুলন-রূপী সীমাকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল। দেশের রক্ষণশীল সমাজ সেই দৃশ্যটি দেখে গেল গেল রব তোলে। পরবর্তী কালে সীমা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ন্যুড সিনটি শ্যুট করার সময়ে ওই দৃশ্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত নয়, এমন কাউকে শ্যুটিং স্পটের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। সীমা আরও জানান যে, ফিল্ম রিলিজ হওয়ার আগে থেকেই এই দৃশ্যটিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তাতে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। রাতের পর রাত কাঁদতে কাঁদতে কেটে যেত তাঁর। এমনকী, শেখর কপূরকে তিনি অনুরোধও করেছিলেন ন্যুড সিনটি সিনেমা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। কিন্তু শেখর জানান, ফিল্মটি যেহেতু সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি, সেহেতু নগ্নদৃশ্যটি বাদ দিলে এক জন নারীর প্রতি সমাজের নির্মমতার বিষয়টি ঠিক মতো তুলে ধরা যাবে না। একটি দৃশ্যকে কেন্দ্র করে যতই বিতর্ক দানা বাঁধুক না কেন, ব্যান্ডিট কুইন-এ অভিনয় করেই জাতীয় পুরষ্কার জিতে নেন সীমা। তবে সীমার নিজের মত হল, ফুলন দেবীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সব চেয়ে বড় পুরস্কারটি তিনি পেয়েছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। সাক্ষাৎকারে সীমা জানিয়েছিলেন, ব্যান্ডিট কুইন দেখার পরে তাঁর বাবা নাকি তাঁর মা-কে ডেকে বলেন, যে যা-ই বলুক, এমন শক্তিশালী অভিনয় আমাদের মেয়ে ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ২০০৩ সালে নিখিলেশ শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয় সীমার। কিন্তু চার বছর পরে তাঁদের ডিভোর্সও হয়ে যায়। এখন একাই থাকছেন তিনি। সঙ্গী হিসেবে অভিনয় অবশ্য রয়েছে। লোকে এখনও তাঁকে ব্যান্ডিট কুইন-এর জন্যই মনে রেখেছে। ব্যান্ডিট কুইন-এর পরে অবশ্য তেমন উল্লেখযোগ্য রোলে দেখাও যায়নি সীমাকে। কিন্তু অভিনয় অব্যাহত রেখেছেন তিনি। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন মালয়লম, পঞ্জাবি, বাংলা, তেলুগু প্রভৃতি সিনেমাতেও। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত তাঁর পরবর্তী ছবি হাফ গার্লফ্রেন্ড-এর শ্যুটিং-এ।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2jHSKHw
January 14, 2017 at 08:41PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন