ওয়েলিংটন, ১৫ জানুয়ারি- বিদেশের মাটিতে এতটা আধিপত্য বিস্তার করে বাংলাদেশ এর আগে কখনও খেলতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেখানে প্রতিটি দলই গিয়ে খাবি খায়, কদিন আগেও পাকিস্তানের মত দল গিয়ে নাকানি-চুবানি খেয়ে এসেছে, যেখানে বাংলাদেশ ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে একের পর এক পরাজয়ের স্বাদ নিয়েছে, সেখানে টেস্টে বাংলাদেশ ভালো কিছু করবে, সে আশা অতি আশাবাদীও দেখেনি। প্রথম টেস্ট ম্যাচটা ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে। প্রচণ্ড বাতাসের শহর বলা হয় ওয়েলিংটনকে। বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেটে কিউই পেসারদের দাপটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যাদের নাভিশ্বাস উঠে যাবে- এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। তারওপর ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা। বৃষ্টির প্রকোপ। আদর্শ সিমিং উইকেট দেখে ফিল্ডিং বেছে নিলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। সব পূর্বাভাষকে মুহূর্তে মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালালেন। মারার কিংবা লুজ বলগুলো খেললেন। ৫০ বলে ৫৬ রান করে ডিআরএসের হেঁয়ালিপনায় ফিরে গেলেও যে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে গেছেন তিনি, তার ওপর ভর করে মুমিনুলের ৬৪, পরের দিন সাকিব-মুশফিকের অতি মানবীয় ব্যাটিং। ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি, সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের ১৫৯ রানের ইনিংসের ওপর সাব্বিরের দ্রুত হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করার মত সাহস দেখাতে পারলো বাংলাদেশ। বোলিংয়ে তিন তরুণতুর্কী তাসকিন, শুভাশিস এবং রাব্বি। সঙ্গে আরেক তরুন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিব তো আছেনই। দারুণ বোলিং করেছে বাংলাদেশ। তবুও নিউজিল্যান্ড করে ফেলেছে ৫৩৯ রান। বাংলাদেশের লিড দাঁড়ালো ৫৬ রানের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটাই বা কম কিসে। এতক্ষণ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। বাংলাদেশ ডমিনেট করেছিল। চার দিকের মধ্যে বলতে গেলে পুরোটা সময়ই শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ; কিন্তু বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল জাগো নিউজেই লেখা তার এক কলামে লিখেছেন, টেস্টে আধা ঘণ্টার ভুলেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। বুলবুলের সে শঙ্কাটাই কেমন যেন সত্যি হয়ে গেলো। চতুর্থ দিন বিকালে আধা ঘণ্টার এক ঝড়ে বাংলাদেশের সাজানো বাগান এলোমেলো হয়ে গেলো। তামিম-মাহমুদউল্লা বাজে শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। মিরাজকে নামানো হয়েছিল নাইটওয়াচম্যান হিসেবে রাত পাহারা দেয়ার জন্য। তিনিও রানআউট হয়ে গেলেন। ইমরুল পড়লেন ইনজুরিতে। স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে সোজা হাসপাতালে। স্কোরকার্ডে দেখাচ্ছে বাংলাদেশের রান তিন উইকেটে ৬৬। আদতে, ইমরুলের ইনজুরির কারণে এখানে পড়তে হবে চার উইকেট। ইমরুল যদি সুস্থ হয়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে পারেন, তাহলে সেটা হবে বোনাস। আপাতত সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উইকেটে ১০ রান নিয়ে রয়েছেন মুমিনুল হক। তার ওপর এখন অনেক ভরসা। বাইরে রয়েছেন সাকিব-মুশফিক এবং সাব্বির। কাল সকালে মুমিনুলের সঙ্গে ব্যাট করতে নামবেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসে স্বপ্নের ডাবল সেঞ্চুরি তার ব্যাট থেকে এসেছে। এবার তার ব্যাট থেকে কোনো মাইলফলক নয়, প্রয়োজন সময়োচিত উইকেট ধরে রাখা। শেষ দিন খেলা হতে পারে ৯৮ থেকে ১০০ ওভার। বাংলাদেশের হাতে আছে আক্ষরিত অর্থে ৬ উইকেট। এর মধ্যে তিনজনকে ব্যাটসম্যান জিসেবে ধরা যাবে না। সুতরাং, সব মিলিয়ে আছে ধরতে গেছে চার উইকেট। এ চারজনের দৃঢ়তার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। আমিনুল ইসলাম বুলবুলই তার আজকের কলামে লিখেছেন, পঞ্চম দিন সকালে মরণ কামড় দেবে নিউজিল্যান্ড। এমনিতেই শেষ দিন সকালে বোলাররা উইকেট থেকে দারুণ সযোগিতা পায়। সে ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডই এগিয়ে আমাদের চেয়ে। তাদের এই মরণ কামড় উপেক্ষা করে সাকিব-মুমিনুল কতদুর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। সকালে লাঞ্চের আগে যদি ৩০ ওভার এ দুজন উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে পারেন, দ্বিতীয় সেশনে অন্তত বাংলাদেশ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাটিং করতে পারে, তাহলে ম্যাচটা বাঁচাতে পারবে হয়তো। কারণ, ইতিমধ্যে লিড দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে মাত্র ১২২ রান। ম্যাচ বাঁচাতে হলে লিড প্রয়োজন ৩০০ প্লাস। সে জন্য অন্তত আরও ১৮০ রান করতে হবে। এরপর নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নামলেও পারবে না কিছু করতে। নিশ্চিত ড্র মেনে নিতে হবে। কিন্তু ভয়ের কারণ হলো, চতুর্থদিন বিকেলে যেভাবে উইকেট পড়েছে, এই মড়ক না আবার কাল সকালে লেগে যায়। আস্থা রাখার মত যে এখনও অবস্থা তৈরি হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। যদিও সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সে আস্থা দেখাতে পেরেছি। তবুও, মাঠটা ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। স্বাগতিক দেশ নিউজিল্যান্ড। তারা সর্বশক্তি দিয়ে লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করতে বদ্ধ পরিকর। চতুর্থদিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে টম লাথাম এ প্রত্যয়ই ব্যাক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে হয়তো বাংলাদেশের লিড দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ২৫০ রান। দুই সেশন ব্যাট করতে পারলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে এই রান তাড়া করা কোনো ব্যাপারই না। দলটিতে টি-টোয়েন্টি মানসিকতার ব্যাটসম্যানই বেশি। দ্রুত এই রান তুলে ফেলবে তারা। এ জন্য বাংলাদেশকে অন্তত শেষ দিন ৫০ থেকৈ ৬০ ওভার টিকে থাকার মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে। সাকিব-মুশফিক-মুমিনুল-সাব্বিররাই পারেন এই মানসিকতা দেখিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিতে। অন্যথা এত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেও কপালে পরাজয়ই লিখা থাকতে পারে। আর/১০:১৪/১৫ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2jMJlym
January 16, 2017 at 04:27AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন