কলকাতা ০৪ ফেব্রুয়ারি- প্রশ্নটা তিনিই করেছিলেন। যে ভাবে করে থাকেন আর পাঁচটা সম্মেলনের মঞ্চ থেকে। উত্তর শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণাটা তার পরেই করলেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে রাজ্যের প্রায় ৬২ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মধ্যে পদাধিকারীদের মাসিক ভাতা শুক্রবার এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিলেন তিনি। উপরন্তু, দেড় হাজার টাকার মাসিক ভাতা চালু হল সাধারণ সদস্যদের জন্য। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, সদস্যদের ন্যূনতম ভাতা না দিলে চুরি ঠেকানো যাবে না ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এ দিন প্রথম পঞ্চায়েত সম্মেলনের সূচনা করেন মমতা। সেখানেই পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে তিনি জানতে চান আপনারা মাসে কত টাকা পান? উত্তর আসে ১৫০ টাকা। শুনে একটু থেমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চুরি করবে না তো কী করবে? মাসে ১৫০ টাকায় কী হয়? এর পরেই ত্রিস্তরে মাসিক ভাতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, অনেকের অনেক টাকা বাড়াতে পারতাম। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি। তাই যতটা পারছি বাড়াচ্ছি। চুরি বন্ধ করতে হলে এঁদের মান উন্নয়ন জরুরি। ত্রিস্তরে প্রত্যেক সদস্যের পরিবারকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার কথাও এ দিন ঘোষণা করেছেন মমতা। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত রাজ্যে এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জন্ম ১৯৭৮ সালে। কিন্তু সেই ইস্তক লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায়। প্রতি বছর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পায় পঞ্চায়েতগুলো। তাতে গ্রামীণ উন্নয়নের বহু কাজ হয় ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে কত টাকা যে বেহাত হয়ে যায়, তার হিসেব নেই। প্রশাসনের একাংশই বলছে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও ছেদ পড়েনি দুর্নীতিতে। এই পরিস্থিতিতেই ভাতা বৃদ্ধির দাওয়াই মমতার। কেমন সেই দাওয়াই? মমতার ঘোষণা অনুযায়ী, জেলা পরিষদের সভাধিপতিরা এ বার থেকে মাসে ৩৫০০ টাকার বদলে ৫০০০, সহকারী সভাধিপতিরা ৩২০০ টাকার বদলে ৪০০০ এবং কর্মাধ্যক্ষেরা ৩০০০ টাকার বদলে ৪০০০ টাকা পাবেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের ভাতা ২৮০০ থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। পঞ্চায়েত প্রধানরা ২০০০ টাকার বদলে ৩০০০ টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধারণ সদস্যরা এমনিতে কোনও মাসিক ভাতাই পেতেন না। ওই দেড়শো টাকাও তাঁরা পেতেন বৈঠকে যোগ দিলে রাহা-খরচ (টিএ বিল) হিসেবে। এ বার থেকে তাঁদের জন্যই মাসিক ১৫০০ টাকার ভাতা চালু হল। সব মিলিয়ে এই বাড়তি ভাতা দিতে সরকারের মাসে অতিরিক্ত ১৫ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য। ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণার পরেই দুর্নীতি নিয়ে সদস্যদের সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, পঞ্চায়েতে জিতে মানুষের কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। লোভ সংবরণ করুন। লোভ করলে পাঁচ বছরেই সব শেষ। আর ফিরতে পারবেন না। এর পরেই তাঁর সংযোজন, সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে গেলে বছরের পর বছর থাকবেন। মনে রাখবেন, এক বার সম্মানহানি হলে আর ফেরত আনা যায় না। বাল্মিকীর পাপও কেউ গ্রহণ করেননি। প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ দিন চুরির প্রসঙ্গ টানলেন কেন? তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, মমতা সবই জানেন। কিন্তু তিনি যে এ সব আর বরদাস্ত করবেন না, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন। সাম্প্রতিক কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের জেরে পঞ্চায়েতে দিল্লির টাকা আসছেও কম। এই অবস্থায় দুর্নীতিতে রাশ টানা না গেলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ক্ষোভ বাড়বে মানুষের। তৃণমূল সূত্রের মতে, এই কারণে বাজে খরচ বন্ধ করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে দুর্নীতি একটুও কমাতে পারেননি মমতা। পরের বছর পঞ্চায়েত ভোট। তাই সদস্যদের খুশি করতেই ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন। আদৌ তিনি দুর্নীতি আটকাতে আগ্রহী নন। ভাতা বাড়িয়ে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি আদৌ আটকানো যাবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান প্রশাসনের একাংশও। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, ১১টি দফতর কমিয়ে রাজ্য প্রশাসনিক সংস্কার শুরু করেছে। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। পঞ্চায়েত কর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কাজটা প্রয়োজন, সেটাই করবেন। অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবেন না। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ভাল কাজের জন্য এ দিন কয়েকটি জেলাকে পুরস্কৃতও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর/১৭:১৪/০৪ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ksaTKI
February 04, 2017 at 11:43PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top