রসমালাই-খাদি নিজস্ব করে নিতে প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক ● বাংলাদেশের সুপরিচিত দুটি পণ্য কুমিল্লার রসমালাই ও খাদিকে ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দুটি পণ্যকে নির্দিষ্ট করে তাদের আদি উৎপাদকদের বাছাই করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো: জাহাংগীর আলম।

তিনি বলেন, “আমরা এ দুটি পণ্যের উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি,”

বিশ্ব বাণিজ‌্য সংস্থার ১৯৯৪ সালের এক চুক্তি আবদ্ধ হয়েছিল সদস‌্য দেশগুলো, যার মধ‌্য দিয়ে প্রতিটি দেশ তার ভূখণ্ডে উৎপাদিত পণ্য, বস্তু ও জ্ঞান-এর উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) আইনের মাধ‌্যমে নিবন্ধনের অধিকার প্রাপ্ত হয়।

তবে দীর্ঘদিন নজর না দেওয়ার পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করে। ওই আইনের অধীনে ২০১৫ সালে হয় বিধিমালা।

এরপর ঐতিহ‌্যবাহী জামদানির মেধাসম্পদের মালিকানা সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার পর এখন তা আরও সম্প্রসারণ চলছে, যার মধ‌্যে কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই রয়েছে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মেরিনা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “রসমালাই ও খাদি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”

জিআই হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য রসমালাই উৎপাদনকারী মাতৃ ভাণ্ডার ও খাদি পণ্যের উৎপাদকদের গত সোমবার আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল।

খনিন্দ্র সেন ও মণিন্দ্র সেন নামে দুই ভাই ১৯৩০ সালে কুমিল্লার কেন্দ্রস্থল মনোহরপুর এলাকার রাজ রাজ্যেশ্বরী কালী মন্দিরের কাছে ‘মাতৃ ভাণ্ডার’ নামে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন। এই দোকান থেকেই সর্বপ্রথম রসমালাইয়ের বিপণন শুরু বলে স্থানীয় অনেকের মত।

খনিন্দ্র সেনের উত্তরাধিকারিদের হাতেই রয়েছে বর্তমানের মাতৃ ভাণ্ডার; যদিও এই নামে, কাছাকাছি নামে জেলা শহরটিতে মিষ্টির দোকানের ছড়াছড়ি।

মসলিনের মতোই কুমিল্লার খাদি উৎপাদনের ঐতিহ‌্য রয়েছে। তখন থেকেই খাদি বিদেশে রপ্তানি হত বলে ইতিহাসে রয়েছে।

কুমিল্লার চান্দিনাতে বহুকাল থেকেই খাদি কাপড় তৈরির ইতিহাস রয়েছে। স্বদেশী আন্দোলনের রয়েছে বিদেশি পণ্য বর্জনে খাদির চাহিদা বহু বেড়ে যায়। সেখানে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত তাঁতও রয়েছে।

বর্তমানে খাদি উৎপাদনের সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে আছে। এর মধ্য থেকে আদি উৎপাদক কীভাবে বাছাই করা হবে- এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “চান্দিনাতে পুরনো খাদি উৎপাদকরা রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে আমরা যাচাই-বাছাই করছি।”

জিআই নিবন্ধক দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের আবেদনে অধিদপ্তর থেকে গত নভেম্বরে দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জামদানি শাড়ির ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

ইলিশসহ আরও কয়েকটি পণ্যের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক (পেটেন্ট ও ডিজাইন) সাইদুর রহমান।

সাইদুর জানান, “প্রত্যেক জেলার নিজস্ব পণ্য খুঁজে বের করে জিআই নিবন্ধন দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেভাবেই জেলাগুলো থেকে ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব পণ্য খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে।”

পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট আরেকজন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে পণ্য বাছাই করে পাঠানোর পর তারা যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেবেন।

নেত্রকোনার সাদামাটি, কাটারীভোগ ও কালিজিরা চাল, রাজশাহীর আমসহ কয়েকটি পণ্যের জিআই নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই চলছে বলেও জানান তিনি।



from Comillar Barta™ http://ift.tt/2lLtiph

February 15, 2017 at 11:22PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top