অটোয়া, ২৩ ফেব্রুয়ারি- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি? বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় কানাডার শহরে শহরে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পরের দিন কর্মদিবস থাকায় কিছুটা ছন্দপতন হলেও প্রতিটি শহরে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় একই সময়ে একাধিকস্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভাষাশহীদকে স্মরণ করে অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ রকমারি আয়োজনে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতি ছিলো। এছাড়াও বলতে গেলে সপ্তাহ জুড়েই একুশের রকমারি অনুষ্ঠান ছিলো। অমর একুশ তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপযাপন উপলক্ষ্যে ভিএজি,বির উদ্যোগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় মন্ট্রিয়লের ৬৭৬৭ কোট দ্য নেইজ (কক্ষ নং ৬৯৪) মিলনায়তনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি শাহ মোস্তাইন বিল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক রোকেয়া চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন ভিএজি,বি সাধারণ সম্পাদক ডঃ শোয়েব সাঈদ, লেখক-গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, ডঃ সৈয়দ জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আবুল আলম, অপরাহ্ন সুসমিতো, দিলীপ কর্মকার, আরিয়ান হক, হামোম প্রমোদ সিনহা, এ এফ এম মাহমুদুল হাসান, এডোয়ার্ড কর্ণেলিয়াস গোমেজ, শরীফ ইকবাল চৌধুরী ও সৈয়দ সানজিদ হোসেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জিয়াউল হক জিয়া, গোলাম মুহিবুর রহমান, শামশাদ রানা, অশোক তেওয়ারী, মুফতি ফারুক, আবু হোসেন জয়, রওশন আরা শোয়েব, ডাঃ জিনাত ফারাহ নাজ, পুষ্পিতা দেব চম্পা, মোঃ আশরাফুল কবির, মাসুম আনাম, জাহাঙ্গীর আলম, নাহিদা আক্তার, মোঃ সিদ্দিক, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ও অর্ঘ ঘোষ। সভার শুরুতে ভাষাশহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয় এবং সভা শেষে পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন পুষ্পিতা দেব, আরিয়ান হক, জিনাত ফারাহ নাজ, রওশন আরা শোয়েব, জাহাঙ্গীর আলম, মুফতি ফারুক, শামশাদ আরা রানা ও অপরাহ্ন সুসমিতো। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে টরন্টোর সাহিত্য সংগঠন বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টারের (বিএলআরসি) উদ্যোগে ১৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত হলো মাতৃভাষা উৎসব। এক ঝাঁক তরুণ তরুণীর স্বদেশীয় মিশ্রধ্বনির কলতানে মুখর হলো টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরি মিলনায়তন। বহু ভাষাভাষী তরুণদের এই সম্মিলনকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক-এর দুই সংসদ সদস্য ন্যাথানিয়েল এরকিন-স্মিথ এবং আর্থার পটস। বিএলআরসি সভাপতি ড. রাখাল সরকারের শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় মাতৃভাষা উৎসবের আয়োজন। তিনি প্রবাসের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে প্রত্যেকের নিজ নিজ মাতৃভাষাচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানান। মাতৃভাষা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ: স্টোরিজ অব দ্য ইয়ুথ পর্বে প্রাণময় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জসুয়া, বাংলাদেশি তরুণ হাসিব করিম, শর্মিলা সেনথিলমনোহরন, চাইনিজ বংশোদ্ভূত জুনিং(শ্যারন)শি, কানাডীয়ান-গায়ানিজ অমর অজয়ল্যাচমান। প্রত্যেকেই মাতৃভাষা নিয়ে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও অভিমত ব্যাক্ত করেন। মাতৃভাষা বিষয়ক তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাষা-বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য রবীন্দ্রপ্রেমী মেথিউ কেলওয়ে, বিচমেট্রো নিউজ পত্রিকার সম্পাদক আনা কিলেন, মুক্তচিন্তক আকবর হোসেন, ইংরেজি-ভাষী বাঙালি কবি সব্যসাচী নাগ এবং টরন্টোর পরিচিত উর্দু কবি ভাকার রাইস। বাংলাদেশে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস তুলে ধরা হয় একটি চমৎকার নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। দেশের গান এবং নিজ ভাষার প্রতি প্রবাসীরা ভালোবাসায় কতোটা আপ্লুত হয় বোঝা গেলো পুরো হলের পিনপতন নীরবতায়। একুশের গানে সজল হলো প্রতিটি হৃদয়। নৃত্যালেখ্যটি উপস্থাপনা করেন সূচনা দাস বাঁধন, শ্রেয়সী প্রামানিক, রাধিকা ভট্টাচার্য, আরিত্রি ভট্টাচার্য, সুকন্যা চৌধুরী, সামারা এবং নিশুতি সাহা। তরুণ পরিচালক নাদিম ইকবালের তথ্য-চলচ্চিত্র মাদার টাং-এর প্রদর্শনী ছিল অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা। প্রদর্শনের শুরুতে তিনি সিনেমাটি বানানোর প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন। অভিবাসী শিশুদের মাতৃভাষাকে ভুলে যাওয়া বা শিখতে না পারা এবং এর কারণে বয়স্ক দাদা-দাদি, নানা-নানীদের সাথে তাদের ভাবপ্রকাশের যে ব্যবধান সৃষ্টি এই তথ্যচিত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণী অর্ক ভট্টাচার্য, সূচনা দাস বাঁধন, অদিতি জহির, ব্রতী দাসদত্ত, জ্যোতি দত্ত পুরকায়স্থ, কৃত্যা চৌধুরী, সুবর্ণ চৌধুরী এবং চিত্তা চৌধুরীর সাবলীল সঞ্চালনা এবং পরিচালনায় পুরো অনুষ্ঠানটি ইংরেজিতে উপস্থাপন করা হয় সব ভাষাভাষীদের সুবিধার্থে। ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে (একুশের প্রথম প্রহর) কানাডার মন্ট্রিয়লে প্রচন্ড শীত ও পরের দিন কাজ থাকা সত্বেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা ২১র প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেছে। সার্বজনীন একুশ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই ২১র অনুষ্ঠানে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সংগঠন অংশগ্রহণ করে পার্কের সালাতীন ব্যাঙ্কুয়েট হলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের সময় মন্ট্রিয়লের ডেপুটি মেয়র ও স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর ম্যাদাম মেরি ডেরস উপস্থিত ছিলেন। তোমাদের আশা অগ্নিশিখার মতো জ্বলবে, প্রতিশোধ এবং বিজয়ের আনন্দে শিরোনামে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়াল এর সার্বজনীন মহান একুশ উদযাপন করেছে মন্ট্রিয়লের ৬৭৬৭ কোট্ দ্যা নেইজে। বিশাল আয়োজনে বিপুল সংখ্যাক প্রবাসীর উপস্থিতিতে অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা শিরোনামে সম্মিলিত অমর একুশে উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মন্ট্রিয়লের সেন্টরক স্ট্রীটের সেন্টার উইলিয়াম হিংস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুস্পমাল্য অর্পনের মধ্য দিয়ে মহান একুশের শহিদের প্রতি শ্রদ্ধাঘ্য নিবেদন করা হয়। মন্ট্রিয়লের সুপরিচিত উপস্থাপিকা শর্মীলা ধরের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ কানাডার শাখার অন্যতম নেতা শ্যামল দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, অধ্যক্ষ ফনীন্দ্র ভূষণ ভট্টাচার্য, জিয়াউল হক জিয়া, কবি আব্দুল হাসিব প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন শামসাদ রানা। ২১র প্রথম প্রহরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, কানাডা আওয়ামীলীগ, ক্যুইবেক আওয়ামী লীগ, মৌলভীবাজার সমাজ কল্যাণ সমিতি, উদীচী মন্ট্রিয়ল, তৈমুননেসা ফাউন্ডেশন কানাডা সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। এসময় বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শর্মীলা ধর, কেয়া ভট্টাচার্য, মুনমুন দেব, শেলী দেব, মুধুমিতা দে ও পূরবী হালদার প্রমুখ। টরন্টো প্রবাসী বাঙালিরা একুশের প্রথম প্রহরে ডেনফোর্থ ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য প্রদান করে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঘ্য জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনারে উপস্থিত থেকে টরন্টো মেয়র জন টরি ভাষা শহীদদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গের ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। তাঁদের আত্ম উৎসর্গের ঘটনা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রচন্ড শৈত প্রবাহ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যাক প্রবাসীরা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফ্রেব্রুয়ারি গানটি কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বারোটা এক মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামুনাই, , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদদালয় এলোমুনাই এসোসিয়েশন প্রবাসী বৃহত্তর রংপুর বাসী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, টরন্টো ফ্লিম ফোরাম, অন্য থিয়েটার, জগন্নাথ হল এসোসিয়েশন, হবিগঞ্জ সমিতিসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শহিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে মহান একুশের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া কানাডার অন্যান্য শহরে রকমারি আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। আর/১০:১৪/২২ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2lw2R47
February 23, 2017 at 06:12AM
23 Feb 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top