ঢাকা,০৫ ফেব্রুয়ারি- জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। দুই দশককেরও বেশি সময় ধরে যার সুরের জালে বন্দি হয়ে আছেন শ্রোতারা। তিনিও নিত্যনতুন গান তৈরি করে শ্রোতাদের মনের খোরাক মেটাচ্ছেন। আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় এ শিল্পীর জন্মদিন। তিনি ১৯৭২ সালের এ দিনে জন্মগ্রহন করেন। গত কয়েকদিন আগে যখন সাঁঝের আগমনে সূর্যির রূপ পাল্টে যাচ্ছিল ঠিক তখনই মগবাজারে তার স্টুডিওতে বসে তার সঙ্গে শুরু হয়েছিল আলাপ। সে সময় বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। প্রতিবেদক: জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বাপ্পা মজুমদার: আপনাকেও জানাই আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। প্রতিবেদক: যদি সংখ্যার হিসেবে বলি, সেটি ৪৫, তবে বয়স হিসেবে তেমন কিছু নয়, আপনার কাছে কাছে কী মনে হয়? বাপ্পা মজুমদার: মানসিকভাবে তো আমি এখনও আগের মতোই আছি। শারীরিকভাবে বয়স তো বাড়ছে। আর বিভিন্ন জটিলতাগুলো দেখা দেওয়াও শুরু করেছে। যেমন- আমার প্রেশারটা এখন বেশিরভাগ সময় হাই থাকে। এসব কারণেই আসলে বোঝা যায়, বয়সটা আসলে বাড়ছে। প্রতিবেদক: বয়সটাকে একটা ফ্রেমে বেঁধে রাখার সুযোগ পেলে কী করতেন? বাপ্পা মজুমদার: বিষয়টা আমি এভাবে ভাবি নি। বয়স বাড়বে এটাই তো নিয়ম। বয়সের সাথে সাথে মানুষ অনেক কিছু জানবে, শিখবে। এটা খুব স্বভাবিক। মাঝেমধ্যে মনে হয় ছোটবেলায় ফিরে যেত পারলে ভালো হতো। সাথে সাথে এটাও মনে হয়; এটা তো প্রকৃতির নিয়ম না। আমার বয়স বাড়বে, একটা সময় প্রকৃতির নিয়মে আমাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। আমি ব্যাপারটাকে খুব সহজভাবে মেনে নেই। প্রতিবেদক: আচ্ছা সংগীত নিয়ে ক্যারিয়ারের এ সময়ে এসে আপনার স্বপ্নের জায়গাটায় পৌঁছাতে পেরেছেন? বাপ্পা মজুমদার: আমি যখন গান গাইতে শুরু করেছিলাম; তখন আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা ছিল ভিন্ন, ধারণাটা ছিল আমি ভিন্নধারা নিয়ে গান করতে এসেছি। ভিন্নকথার গানে গান করতে এসেছি। কিন্ত সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গানের কথার সাথে আমাকে অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। তবে একটা বিষয় আমি সব সময় মেনে চলেছি- আমি কখনও খারাপ কথার গান গাই নি। মানহীন লিরিক নিয়ে আমি কখনও কাজ করি না। এটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করি। প্রতিবেদক: তবে এই সময়ের গানগুলো আপনার কেমন লাগে? বাপ্পা মজুমদার: এই সময়ে নি:সন্দেহে অনেক ভালো গান হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি লিরিক নিয়ে আরও বেশি কাজ করা উচিত। আরও বেশি ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি। প্রতিবেদক: জন্মদিনের প্রসঙ্গ, এবারের জন্মদিনে কী করছেন? বাপ্পা মজুমদার: আমার কোন পরিকল্পনা নেই। আমি যতটুকু জানি আমাদের প্র্যাকটিস আছে। যারা আমাকে ভালোবাসেন তারা নানানভাবে আমাকে সারপ্রাইজ দেন। আমি মনে করি ভালোবাসার মানুষদের কাছ থেকে এটা আমার অনেক বড় একটা পাওয়া। প্রতিবেদক: গানের দল দলছুট ভক্তদের জন্য সুখবর। এখন থেকে গানের এই দল আবারও দর্শক-শ্রোতাদের সামনে নিয়মিত গান গাইবে? বাপ্পা মজুমদার: আমরা এখন দলছুট হয়েই কাজ করছি। এক্সপেরিমেন্টাল লাইনআপ ছিল বাপ্পা মজুমদার এন্ড ফ্রেন্ডস, সেটাকে আমরা স্থগিত রেখেছি। ওটা খুব এক্সক্লুসিভ কিছু হলে আমরা গান করব। এখন আমরা পারফর্ম করছি দলছুট হিসেবে। দলছুটের অ্যালবামের কাজ চলছে। প্রতিবেদক: ভক্তদের উদ্দেশ্যে বাপ্পা কী বলবেন? বাপ্পা মজুমদার: তাদের সবার তো আমার প্রতি ভালোবাসার শৃঙ্খলাবোধ আছে। তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার ভালোবাসা-আমার শ্রদ্ধাবোধ রয়ে গিয়েছে। প্রতিবেদক: আপনার ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনি যে ধরনের মোটিভ কিংবা আবেগ নিয়ে গান করতেন- এখনও কী ঠিক একইরকম বিষয় অনুভব করেন? বাপ্পা মজুমদার: আমার উদ্দেশ্য ছিল আমি ভিন্নধরনের ভিন্ন ধারার কথা নিয়ে গান করব। আমি বলব-ভিন্নধারার গান ছিল কবিতা আঙ্গিকের গান। এর বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, লেখাটা অতো বেশি স্পষ্ট না হলে সবাইকে কমিউনিকেট করে না। তখন বুঝে নেওয়ার একটা বিষয় থাকে। তখন হয় কী শ্রোতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে আসে। তার মানে এই নয়, আমি শ্রোতার কথা চিন্তা করে গান করছি। আমার মনে হয়েছে, আমার গানগুলো যেন আরও বেশি কমিউনিকেটিভ হয়। যারা শুনছেন তারা যেন আরও সহজে বুঝতে পারেন। যার কারণে আমি একটু কঠিন কথা থেকে বের হয়ে একটু সহজ কথায় আসতে চেয়েছি। সেই জায়গাটাতেই আমি কম্প্রোমাইজ করেছি। প্রথমে আমি যখন গান করতাম, তার সবগুলোই থাকত কবিতা। কিন্তু আমি নিজে সুর করেছি। এখনকার গানগুলো অনেক বেশি লিরিক্যাল। আমার প্রথম দিকের গানগুলো ছিল অনেক বেশি পয়েট্রিক্যাল। আর ইমোশন ছাড়া তো হয় না। এটা নিয়েই আমরা গান করি। আর পরদটা যে আগের জায়গায়, বিষয়টা খুব সহজ কথা। এখন বেঁচে থাকার যুদ্ধটা এতো বেশি তীব্র, এখন ইমোশনটা আছে। কিন্তু আগে যেভাবে ইমোশন বেইজড কাজ করতাম। তবে এখন আর করতে পারি না। সবক্ষেত্রে যে ধরতে পারছি, বিষয়টা এমনও নয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রচণ্ড রকম চাপ। এটা আসলে আমাদের প্রত্যেককে ভোগায়। প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যেহেতু গানকে মনে-প্রাণে ধারণ করি, সেক্ষেত্রে আমার সবকিছু গানকে ঘিরেই। প্রতিবেদক: আপনি কী আপনার বাদ্যযন্ত্র ছাঁচ থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে ভিন্ন কিছু করতে চাওয়ার তাড়না অনুভব করেন? বাপ্পা মজুমদার: সেটা তো করার চেষ্টা করছি। সবক্ষেত্রে তো আসলে ভিন্ন কিছু করা যায় না। তবে এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলে কিছু এ্যালিমেন্ট দরকার। সেগুলো পেলে কিছু কাজ করাই যেতে পারে। আর ভাবছি না, তা নয়। এটা পুরোপুরিই এক্সপেরিমেন্টাল একটা অ্যালবাম হবে। ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি। আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ অ্যালবাম মুক্তি দিতে চাই। প্রতিবেদক: আপনি কী মনে করেন আপনি একটি দ্বিতীয় পণ্য ব্যবস্থাপক, এখন আপনার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন? বাপ্পা মজুমদার: আমি যে কোন আর্ট ফর্মকে পণ্য হিসেবে বিচার করতে রাজি নই। কিন্তু আমরা নিয়মিত পণ্য ব্যবস্থাপকের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি, যে কোন জায়গায় দিনশেষে পণ্য হয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গাটাতে আমার বড় একটা দ্বিধা-দ্বন্দ আছে। কোন আর্টফর্ম পণ্য হতে পারে না। ওখানে আমার আপত্তি আছে। প্রতিবেদক: আপনার জীবনের কোন বিষয়টা আপনি সবচেয়ে বেশি উদযাপন করেন? বাপ্পা মজুমদার: আমার জীবনে কখনও খারাপ কথার গান নিয়ে কাজ করি নি। এটা আমি উদযাপন করি। আমার সাথে যারা কাজ করেন, তারা একেকজন দুর্দান্ত একজন লেখক। সেটাও আমার জন্য অনেক বড় একটি বিষয়। অনেক বড় কিছু মানুষের সাথে কাজ করেছি, এটাও বড় বিজয় বলে মনে করি। প্রতিবেদক: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাপ্পা মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ। আর/১০:১৪/০৫ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2kfaSeA
February 06, 2017 at 12:03AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন