কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) দ্বিতীয় নির্বাচন আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। কুসিকের নির্বাচিত প্রথম মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রশাসকের নিকট দায়িত্ব অর্পণ করে নগর ভবন ছেড়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণ করে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
গত সোমবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা–কল্পনা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে বড় দুটি দল থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন? কে হচ্ছেন কুসিকের দ্বিতীয় মেয়র? এসব আলোচনা এখন সর্বত্র।
নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নুরুল হুদা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কোনো সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই সবার দৃষ্টি এখন নতুন নির্বাচন কমিশনের দিকেও।
জানা যায়, বিগত ২০১১ সালের ১০ জুলাই ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা একীভূত করে ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের এলাকা ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন থেকে বাড়িয়ে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করায় আটকে যায় নির্বাচন।
গত বছরের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের সঙ্গে কুসিকের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের সীমানা বর্ধিতসহ মাস্টারর প্ল্যান বাস্তবায়ন সংক্রান্তে উচ্চ আদালতে একটি রিট থাকায় আটকে যায় রবিক উদ্দিন কমিশনের শেষ নির্বাচন। তবে বিধি মোতাবেক পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ দিনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ক্ষমতা ছেড়েছেন প্রথম মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। এখন নগরজুড়ে আলোচনা কে হচ্ছেন কুসিকের দ্বিতীয় মেয়র।
মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী এক ডজন
মেয়র পদে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা ছোট হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এই তালিকা এরই মধ্যে হাফ ডজন অতিক্রম করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে আলোচনায় রয়েছেন, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ মো. ওমর ফারুক, জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেটের মেয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবং অধ্যক্ষ আফজল খান পুত্র এফবিসিসিআই‘র পরিচালক ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএসএম কামরুল ইসলাম।
অপর দিকে বিএনপি থেকে সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। একই দল থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংসদ আলহাজ মনিরুল হক চৌধুরী। জামায়াত থেকে মহানগর জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, জাতীয় পার্টি (জাফর) থেকে এয়ার আহমেদ সেলিম এবং স্বতন্ত্র থেকে মেজর (অব.) মামুনুর রশিদের নাম আলোচনায় রয়েছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তারা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন, কারণ জেলা পরিষদ নির্বাচনে হাফ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও দলের নেত্রী দলীয় সমর্থন দিয়েছেন অন্যকে, তাই সিটি নির্বাচনেও এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা, তাই আপাতত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ ওমর ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীও অনেক থাকবে তবে এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই আমরা কাজ করবো।
জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরফানুল হক রিফাত বলেন, সদর আসনের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে মহানগরীর উন্নয়নে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবো।
এফবিসিসিআই’র পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান।দলের জন্য আমাদের অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাই নির্বাচনে আমি ও আমার বোন মনোনয়ন চাইবো। আশা করি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারকে সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করবেন না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ছাত্র রাজনীতির পর থেকে সিটি নির্বাচনের জন্য নিজেকে প্রায় দেড় যুগ ধরে তৈরি করেছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।
এদিকে সদ্য বিদায়ী মেয়র ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশি অনুদান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অর্থ এবং সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে গত পাঁচ বছরে সিটিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার নানা উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান আছে। তাই সিটির উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে নগরবাসীর সমর্থন ও দোয়া কামনা করছি।
সাক্কু বলেন, অনেক চড়াউ-উৎরাই পেরিয়ে বিরোধী দলে থেকেও নগরবাসীর সেবায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছি। তাই দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নির্বাচনের তফসিল
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়পত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন ৫ ও ৬ মার্চ আর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ মার্চ।
এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮৪। সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫টি। সম্ভাব্য ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪২১টি। পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন ও নারী ৮৬ হাজার ৭৪ জন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেট। ওই নির্বাচনে ৯ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে অপর ৭ জনই জামানত হারিয়ে ছিলেন।
from Comillar Khabor – Comilla News http://ift.tt/2l9pERA
February 25, 2017 at 10:29AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন