রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিক্ষাকে মুনাফা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তনে ভাষণের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আবদুল হামিদ প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে বিশ্বমান ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করে দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত মানব সম্পদ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শুধু সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা নয়, সৃজনশীল ও আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য উচ্চ শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই মান নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে পেশাগত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতি গঠনে নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নতুন স্নাতকদের এ দেশ এবং এ দেশের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, পরিবার, সমাজ এবং দেশ এই অবস্থানে তাদের পৌঁছতে বিশাল অবদান রেখেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের স্ব স্ব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সততার, দক্ষতার ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, শ্রেণীকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস অনুযায়ী শুধুমাত্র শিক্ষাদানই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়, তাদের মানবিকতার প্রশিক্ষণ, সহিষ্ণুতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মূল্যবোধও শিক্ষা দিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি সাম্প্রতিককালে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি মানব সভ্যতার প্রতি একটি বড় হুমকি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যের প্রতি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহবান জানান তিনি।
আবদুল হামিদ পিতা-মাতার প্রতি তাদের শিশুদের আরো সময় দিয়ে তাদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ এবং ভালোবাসা দেয়ার আহবান জানান। তিনি নৈমিত্তিক সামাজিক চিন্তা-ভাবনার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান এবং তাদের ক্লাস কোর্সের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব ও সহিষ্ণুতার বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্যও শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান। বলেন, বর্তমান সরকার দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময়েই বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং তিনি আশা করেন যে, তরুণ প্রজন্ম এই ভিশন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
দেশে শিক্ষা খাতে অর্জিত ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোল মডেল হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু উন্নয়নের এই ধারাকে আরো এগিয়ে নিতে বেসরসকারি খাতের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।’
রাষ্ট্রপতি উচ্চতর শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণকে বর্তমান সরকারের একটি বড় ধরনের সাফল্য উল্লেখ করে বলেন, দেশের সকল প্রান্তে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে সকল শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ সহজ হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করছি, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানীর বাইরে বিনিয়োগ করবে।’
আবদুল হামিদ বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন ও বিপ্লব প্রসঙ্গে বলেন, টেকনোলজির প্যাটার্ন দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং আমাদের উন্নয়ন কৌশলে এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ অগ্রগতি অর্জন করছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করবে।’
তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তোলার এবং দেশীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে ওই অভিজ্ঞতার ব্যবহারের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম শহীদুল হাসান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বক্তৃতা করেন।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2kTv9Yd
February 08, 2017 at 11:44PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন