আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মালয়েশিয়ায় আবারও শুরু হচ্ছে অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের পারমিটের নিবন্ধন। তবে এ নিবন্ধন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ই-কার্ডের মাধ্যমে অবৈধরা বৈধ হতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে যারা স্টুডেন্ট ভিসা, নৌপথে আসা, টুরিস্ট ভিসা এবং রেগুলার শ্রমিক ভিসায় এসে এখনও অবৈধ হয়ে বসবাস করছেন তাদের জন্য মূলত এই প্রোগ্রাম। আর এ প্রোগ্রাম শেষ হবে চলতি বছরের ৩০ জুন। ৪ মাসের এই প্রসেসে অনেকেই বৈধ হয়ে যেতে পারবেন।
এ ছাড়া যাদের পাসপোর্ট বা অন্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট রয়েছে কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ, যাদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট কিছু নেই অথবা পাসপোর্ট বানানো যাবে, যাদের কোনো প্রকার ডকুমেন্ট নেই তারা এই ই–কার্ডের জন্য কোম্পানির মালিকের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। ফিঙ্গার প্রিন্টের সময় কোম্পানির মালিকের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেবে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ।
ই-কার্ড মূলত ৩ মাসের জন্য দেয়া হবে। এই কার্ড ২ কালারের হবে। যথাক্রমে নীল ও লাল। যাদের পাসপোর্ট আছে তারা প্রথমেই নীল কার্ড পাবেন। এই নীল কার্ড যারা পাবেন তারা তাদের কোম্পানির মাধ্যমে যার যার ক্যাটাগরি অনুযায়ী লেভি দিয়ে রিহায়ারিং প্রসেসের মাধ্যমে ভিসা পেয়ে যাবেন। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদেরকে প্রথমে লাল কার্ড দেয়া হবে। ৩ মাসের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট করে এনে কোম্পানির মালিকের মাধ্যমে লেভি দিয়ে তারা নীল কার্ড পাবে এবং বৈধ হতে পারবেন।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী বলেন, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে সরকার ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পেনিনসুলা এবং স্টেট ইমিগ্রেশন অফিসে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানান।
এই ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক আরো বলেন, ই-কার্ড নিবন্ধন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যাবে এবং ই-কার্ডের মেয়াদ হবে ১ বছর। শুধুমাত্র ৫টি সেক্টরের জন্য ই-কার্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই ৫টি সেক্টর হলো- প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, কনস্ট্রাকশন এবং সার্ভিস সেক্টর।
নিয়োগকর্তারা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে ৩০ জুনের পর ই-কার্ড নিবন্ধনের জন্য আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।
ই-কার্ডের মেয়াদ ১ বছর এবং এই ১ বছরের মধ্যে নিয়োগকর্তাদের তাদের শ্রমিকদের দিয়ে শ্রমিকদের নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট এবং অন্যান্য পারমিট করতে হবে।
মুস্তাফার আলী নিয়োগকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কোনো এজেন্ট অথবা দালালদের মাধ্যমে যেন ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধন না করা হয়।
নিয়োগকর্তাদের তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং ই-কার্ড প্রসেসিংয়ের জন্য ২ দিন সময় লাগবে।
মুস্তাফার আলী আরো বলেন, এই ই-কার্ড প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৪ থেকে ৬ লাখ অবৈধ বিদেশী শ্রমিক নিবন্ধন করবে বলে আমাদের ধারণা। আর অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের পারমিটের ই-কার্ডের বয়সসীমা ৪৫ থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত হতে পারবে।
মালয়েশিয়া উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নূর যাজলান মোহামেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে কিছু অপব্যবহার হবে। কারণ তারা চার্জ (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) এর যোগ্য হবে যদি ১০ বছর পর্যন্ত এই দেশে অবস্থান করে।
যাজলান আরো বলেন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির এমনটাই পরামর্শ ছিল। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকৃত অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের জন্য ই-কার্ড রেজিস্ট্রেশন। অস্থায়ীকাজের ই-কার্ড নিবন্ধন করা যাবে ইমিগ্রেশন বিভাগ অফিসের যেকোনো পেনিনসুলা থেকে, এই কার্ড সবাইকে বিনামূল্যে দেয়া হবে এবং মেয়াদ থাকবে ১ বছর।
নূর যাজলান আরও বলেন, নিয়োগকর্তাদের প্রথমে লোকাল শ্রমিকদের কাজে নেয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
বিদেশী শ্রমিকের কারণে আমাদের স্থানীয় শ্রমিকদের কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে নিয়োগকর্তারা এখন বয়স্ক বিদেশী শ্রমিকদের কাজে নিচ্ছে। তাদের এই বিষয়টি ভালো করে দেখা উচিত বলে দেশটির স্টার অনলাইনকে বলেন নূর যাজলান।
এদিকে, মালয়েশিয়ার এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দিন বরদান বলেন, অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের জন্য ই-কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং বিদেশীদের হারানো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট এর সমস্যা কমবে।
বরদান বলেন, ই-কার্ড চেকিংয়ের ব্যবস্থা সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে থাকতে হবে তাহলে কোনো বিদেশী শ্রমিককে আটক করা হলে সহজে তাদের চিহ্নিত করা যাবে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখার কাউন্সিলার মো: সায়েদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী কর্মীদের জন্য সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী সেদেশেই কাজের সুযোগ পাবে। অন্যথায় বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরে আসতে হতো।’
সায়েদুল ইসলাম অবৈধ শ্রমিকদের উদ্দেশ করে বলেন, সুযোগ বারবার আসে না। এ সুযোগ হাত ছাড়া না করতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের আহ্বান জানান তিনি।
from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2kwlHXm
February 11, 2017 at 04:16PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন