জার্মানির হামবুর্গে থাকত জোহান্না নিউম্যানের পরিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ইহুদিবিরোধী গণহত্যা শুরু হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি। আরো অনেক পরিবারের মতো বাবা-মায়ের সাথে আলবেনিয়ায় পালিয়ে যায় আট বছরের জোহান্না। একটি মুসলিম পরিবার আশ্রয় দেয় তাদের। কিন্তু সেখানেও হানা দেয় জার্মান বাহিনী। জার্মান বাহিনীর কাছে সেই পরিবারটি জোহান্না ও তার মাকে নিজেদের পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দেয়, যা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কোনোভাবে ধরা পড়লে ইহুদিদের আশ্রয় দেয়ার ‘অপরাধে’ তাদেরও মেরে ফেলত হিটলারের সৈন্যরা। তবুও সম্পূর্ণ মানবিক কারণেই দু’টি জীবন বাঁচাতে এত বড় ঝুঁকি নিয়েছিল আলবেনীয় পরিবারটি।
জোহান্নার পরিবার একটি উদাহরণ মাত্র। কিংবা তিউনিসিয়ার খালেদ আবদুল ওয়াহাব, যিনি দুই ডজন ইহুদিকে আশ্রয় দিয়েছেন। ইরানি কূটনীতিক আবদুল হোসেইন সারদারি, যিনি হাজার হাজার ইহুদিকে ইরানি পাসপোর্টে জার্মানি ত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন। অথচ বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট তার দেশে ইহুদি উদ্বাস্তুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। প্রাণ বাঁচাতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ইহুদিদের ফিরিয়ে দেয় তারা। ইউরোপের দেশগুলোও প্রত্যাশামতো বাড়ায়নি সহযোগিতার হাত। কিন্তু তখন অনেক ইহুদির জীবন বাঁচিয়েছে মুসলমানেরা, আদতে ইহুদিরা যাদের শত্রু বলেই গণ্য করে। মতপার্থক্য ভুলে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই তারা সবচেয়ে জরুরি মনে করেছেন।
দুই হাজারের বেশি জার্মান ইহুদি আশ্রয় নিয়েছিল মুসিলমপ্রধান দেশ আলবেনিয়ায়। যাদের জার্মান বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে স্থানীয়রা। সুযোগ দিয়েছে বসবাসের। ইতিহাসের এমনই কিছু মানবিক ঘটনা নিয়ে গত শুক্রবার নিউ ইয়র্কের একটি সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রদর্শনীর। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধের বিষয়টি বিশ্বসম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিতেই এই আয়োজন করে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক ‘আই অ্যাম ইউর প্রটেক্টর’ নামক একটি সংগঠন। যুদ্ধের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইহুদিদের সহায়তার অন্তত পনেরোটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ওই আয়োজনে।
সেদিনের শিশু জোহান্না এখন ৮৬ বছরের বৃদ্ধা। অনুষ্ঠানের দিন সেই ভয়াবহ সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইহুদি সেটা প্রকাশ পেলে পুরো পরিবারটিকে শেষ করে দিত। তারা যা করেছে, অনেক ইউরোপীয় দেশ তা করেনি। তারা সম্মিলিতভাবেই ইহুদিদের জীবন বাঁচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ইরাক, সিরিয়ার মুসলিম উদ্বাস্তুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ তারা উদ্বাস্তু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের কারণেই। স্থগিত করা হয়েছে সাতটি মুসলিম দেশের সকল নাগরিকের ভিসা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতেই নিউ ইয়র্কের ওই আয়োজন। আয়োজক সংগঠনটির আশা বর্ণবাদ আর ঘৃণাভরা বিশ্বে মনুষ্যত্বের জয়গান গাইতে ইতিহাসের এসব ঘটনা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে। সংগঠনের সহ-পরিচালক ড্যানি লরেন্স আন্দ্রিয়া ভারাদি বলেন, ‘ইতিহাস প্রমাণ করে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সম্প্রদায়গুলো যখন একই মানসিকতা নিয়ে পরস্পরের পাশে দাঁড়ায় তখন তা ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।
from মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্য – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2ll5bxy
February 09, 2017 at 12:37AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন