সারাক্ষণ একসঙ্গেই থাকতেন হাসান সাঈদ মো. সাদ ও ইসহাক ইব্রাহিম শশী। দুজনই ছিলেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। দুজন একসঙ্গেই সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখালে বেড়াতে গিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে চোরাবালিতে আটকে প্রাণ হারালেন। শুধু তাই না, সাদ ডুবে যাওয়ার সময় নিজে সাঁতার না জেনেও বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান শশী। ছেলের এমন ‘বীরোচিত মৃত্যু’র কথা শুনে বুকফাটা কষ্ট আড়াল করে গর্বের কথাও জানালেন শশীর বাবা। হতভাগ্য দুই বন্ধু মেডিক্যালের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বুধবার কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুজনের মরদেহ সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছার পর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মেডিক্যালের এই ছাত্রের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাঁদের নিজ মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস। গতকাল সরেজমিনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখই গম্ভীর। চোখ ছলছল করছে সহপাঠীদের। প্রিয় সন্তান হারিয়ে শোকে বিহ্বল ও পাগলপ্রায় দুই ছাত্রের মা-বাবা।
বুধবার বিকেলে জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের জামে মসজিদ চত্বরে দুজনের গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয়। এরপর সন্ধ্যায় ওই মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ দোয়ার মাহফিল। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আগামীকাল শুক্রবার কলেজের অডিটরিয়ামে শোকসভা করার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার সকালেই সাদের মৃতদেহ তাঁদের ঢাকার ৯২৬/সি খিলগাঁও তালতলার বাসায় পৌঁছে। অন্যদিকে শশীর মৃতদেহ সন্ধ্যায় পৌঁছেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সদরের ৪৮ শান্তিবাগের বাসায়। পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুজনকে দাফন করা হয়েছে।
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন সাদ ও শশী দুজনই। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার কলেজ আধাবেলা খোলা ছিল। মঙ্গলবার ছিল পুরো বন্ধ। এ সুযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কাউকে না জানিয়েই শশী ও সাদ সিলেটের জৈন্তাপুরের পর্যটনকেন্দ্র লালাখাল এলাকায় ঘুরতে চলে যান। ওই সময় তাঁদের সফরসঙ্গী হন কলেজের একই বর্ষের আরো তিন ছাত্র জামিম, ফাহিম ও কশি।
জৈন্তাপুরের লালাখালের সীমান্তবর্তী মিস্ত্রীঘাট এলাকার জিরো পয়েন্টে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে প্রথমে চোরাবালিতে আটকা পড়েন সাদ। চিত্কার শুনে তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে যান বন্ধু শশী। কিন্তু তিনিও আটকা পড়েন। একপর্যায়ে দুজনই চোরাবালিতে আটকে ধীরে ধীরে তলিয়ে যান।
জৈন্তাপুর থানার ওসি সফিউল কবীর মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে ভিন্ন তথ্য দেন। তিনি জানান, এলাকাটিতে রয়েছে প্রচণ্ড স্রোত ও বালু। ওঁরা চোরাবালিতে নয়, সাঁতার জানেন না বলেই পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন। তাঁরা হাঁটুপানিতে নেমে আস্তে আস্তে বুকপানিতে চলে গিয়েছিলেন। এর আগেও ওই স্থানটিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই সাধারণত কেউ পানিতে নামে না। নৌকায় বসেই প্রকৃতি উপভোগ করে।
তিনি জানান, গতকাল জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন সচেতনতামূলক মাইকিং করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি জানান, সীমান্তবর্তী বলে ওখানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নেই। জায়গাটি বিজিবির আওতায়। এলাকাটিতে বিজিবি লাল নিশান গেড়ে রেখেছে।
শশীর অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা-বাবা। তবে বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে শশীর বীরোচিত মৃত্যু হওয়ায় বাবা হিসেবে কিছুটা গর্ব অনুভব করছেন বলেও জানান শশীর বাবা মো. ইব্রাহিম হোসেন। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ইব্রাহিম জানান, শশী সাঁতার জানতেন না। নিজের জীবন দিয়ে তিনি তাঁর বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন। এ জন্য ছেলের মৃত্যুতে কষ্ট পেলেও এমন মৃত্যুতে তিনি গর্বও অনুভব করছেন। গতকালই রাত সাড়ে ৮টায় তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুরের কবরস্থানে শশীর মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে।
জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সৈয়দ মাহমুদুল আজিজ জানান, সাদ-শশীসহ পাঁচজনই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের সদস্যদের না বলে সিলেটে যান। সহপাঠীরা কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে কেউ বলেছে ভৈরবে, কেউ বলেছে ঢাকায় কাজে যাচ্ছে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘সাদ চিকিৎসক বাবা ডা. হুমায়ুন রেজার একমাত্র সন্তান। আজ এভাবে না বলে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে ওরা দুটি পরিবারের স্বপ্ন শেষ করে দিল। মা-বাবাকে সারাটা জীবন এ কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সুত্রঃ কালের কন্ঠ/ ০৯-০২-১৭
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুজনের মরদেহ সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছার পর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মেডিক্যালের এই ছাত্রের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাঁদের নিজ মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস। গতকাল সরেজমিনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখই গম্ভীর। চোখ ছলছল করছে সহপাঠীদের। প্রিয় সন্তান হারিয়ে শোকে বিহ্বল ও পাগলপ্রায় দুই ছাত্রের মা-বাবা।
বুধবার বিকেলে জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের জামে মসজিদ চত্বরে দুজনের গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয়। এরপর সন্ধ্যায় ওই মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ দোয়ার মাহফিল। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আগামীকাল শুক্রবার কলেজের অডিটরিয়ামে শোকসভা করার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার সকালেই সাদের মৃতদেহ তাঁদের ঢাকার ৯২৬/সি খিলগাঁও তালতলার বাসায় পৌঁছে। অন্যদিকে শশীর মৃতদেহ সন্ধ্যায় পৌঁছেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সদরের ৪৮ শান্তিবাগের বাসায়। পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুজনকে দাফন করা হয়েছে।
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন সাদ ও শশী দুজনই। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার কলেজ আধাবেলা খোলা ছিল। মঙ্গলবার ছিল পুরো বন্ধ। এ সুযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কাউকে না জানিয়েই শশী ও সাদ সিলেটের জৈন্তাপুরের পর্যটনকেন্দ্র লালাখাল এলাকায় ঘুরতে চলে যান। ওই সময় তাঁদের সফরসঙ্গী হন কলেজের একই বর্ষের আরো তিন ছাত্র জামিম, ফাহিম ও কশি।
জৈন্তাপুরের লালাখালের সীমান্তবর্তী মিস্ত্রীঘাট এলাকার জিরো পয়েন্টে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে প্রথমে চোরাবালিতে আটকা পড়েন সাদ। চিত্কার শুনে তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে যান বন্ধু শশী। কিন্তু তিনিও আটকা পড়েন। একপর্যায়ে দুজনই চোরাবালিতে আটকে ধীরে ধীরে তলিয়ে যান।
জৈন্তাপুর থানার ওসি সফিউল কবীর মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে ভিন্ন তথ্য দেন। তিনি জানান, এলাকাটিতে রয়েছে প্রচণ্ড স্রোত ও বালু। ওঁরা চোরাবালিতে নয়, সাঁতার জানেন না বলেই পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন। তাঁরা হাঁটুপানিতে নেমে আস্তে আস্তে বুকপানিতে চলে গিয়েছিলেন। এর আগেও ওই স্থানটিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই সাধারণত কেউ পানিতে নামে না। নৌকায় বসেই প্রকৃতি উপভোগ করে।
তিনি জানান, গতকাল জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন সচেতনতামূলক মাইকিং করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি জানান, সীমান্তবর্তী বলে ওখানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নেই। জায়গাটি বিজিবির আওতায়। এলাকাটিতে বিজিবি লাল নিশান গেড়ে রেখেছে।
শশীর অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা-বাবা। তবে বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে শশীর বীরোচিত মৃত্যু হওয়ায় বাবা হিসেবে কিছুটা গর্ব অনুভব করছেন বলেও জানান শশীর বাবা মো. ইব্রাহিম হোসেন। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ইব্রাহিম জানান, শশী সাঁতার জানতেন না। নিজের জীবন দিয়ে তিনি তাঁর বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন। এ জন্য ছেলের মৃত্যুতে কষ্ট পেলেও এমন মৃত্যুতে তিনি গর্বও অনুভব করছেন। গতকালই রাত সাড়ে ৮টায় তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুরের কবরস্থানে শশীর মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে।
জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সৈয়দ মাহমুদুল আজিজ জানান, সাদ-শশীসহ পাঁচজনই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের সদস্যদের না বলে সিলেটে যান। সহপাঠীরা কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে কেউ বলেছে ভৈরবে, কেউ বলেছে ঢাকায় কাজে যাচ্ছে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘সাদ চিকিৎসক বাবা ডা. হুমায়ুন রেজার একমাত্র সন্তান। আজ এভাবে না বলে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে ওরা দুটি পরিবারের স্বপ্ন শেষ করে দিল। মা-বাবাকে সারাটা জীবন এ কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সুত্রঃ কালের কন্ঠ/ ০৯-০২-১৭
from Chapainawabganjnews http://ift.tt/2k80CSp
February 09, 2017 at 09:16PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন