শিলিগুড়ি, ৩০ মার্চ- মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়েন, তার জন্য পাইলট কার ব্যবহার করেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ কলকাতায় থাকলে যাতায়াত করেন ছোট্ট গাড়িতে৷ অথচ তাঁরই মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, সরকারি আধিকারিক এমনকী দলের ছোট, বড়, মাঝারি মাপের নেতারাও পাইলট কার হাঁকিয়ে রাজার হালে ঘুরে বে.ডাচ্ছেন৷ ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ হচ্ছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ৷ বুধবার শিলিগুড়ির পিন্টেল ভিলেজে জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে পাইলট কারের অপব্যবহার নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা৷ তিনি বলেন, শিলিগুড়ির মতো ঘিঞ্জি শহরেও অনেক মন্ত্রী, আমলা পাইলট কার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ আমি নিজে কখনও পাইলট কার ব্যবহার করি না৷ মনে রাখবেন, পাইলট কার নিরাপত্তার জন্য৷ স্টেটাস সিম্বল নয়৷ মানুষ এসব ভাল ভাবে নেয় না৷ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, মন্ত্রীদের প্রায় সিংহভাগই কলকাতার মধ্যে এবং জেলা সফরে গেলে নিয়ম করে পাইলট কার নিয়ে থাকেন৷ যদিও তাঁদের অধিকাংশই সেই সরকারি সুবিধার অধিকারী নন৷ পুলিশের রুল বুক অনুযায়ী, যাঁরা জেড ক্যাটাগরি কিংবা তার অধিক সিকিউরিটি স্টেটাস পান, শুধুমাত্র তাঁদেরকেই পাইলট কার দেওয়ার কথা৷ মন্ত্রীরা জেলায় গেলে যদি তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে, তা হলে স্টেট ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের পরামর্শ মেনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন তাঁদের গাড়ির আগে পাইলট কার বরাদ্দ করে৷ জেলা পুলিশ সুপার অথবা তার অধিক সরকারি পদমর্যাদার কোনও আমলার জন্যও গোয়েন্দা দন্তরের সঙ্গে কথা বলে জেলা প্রশাসন পাইলটের ব্যবস্থা করতে পারে৷ কে কোন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাবেন, সেটা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দন্তর ঠিক করে৷ নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার পুনর্মূল্যায়ন হয়৷ কিন্ত্ত বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জেড ক্যাটাগরি তো দূরের কথা, যাঁরা ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তাও পান না, এমন লোকেরাও পাইলট কার নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের অনেক মন্ত্রীই স্রেফ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে পাইলট কার আদায় করে নিচ্ছেন৷ শাসকদলের অনেক চুনোপুঁটি নেতারাও পাইলট কার নিয়ে ঘুরছেন৷ বিশেষ করে মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহলে নেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা খুব বেশি করে বাড়ছে৷ গাড়িতে লালবাতির ব্যবহারও হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো৷ গাড়ির মাথায় লালবাতি লাগানো নিয়ে কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিকেলস আইন ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে৷ সেই মতো রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিধানসভার অধ্যক্ষ, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা গাড়ির মাথায় লালবাতি লাগাতে পারেন৷ এ ছাড়াও গাড়িতে লালবাতি (ফ্ল্যাশার ছাড়া) লাগাতে পারেন, রাজ্যের যে কোনও প্রতিমন্ত্রী, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, কলকাতার মেয়র এবং মুখ্যসচিব৷ ঘূর্ণায়মান নীলবাতি ব্যবহার করতে পারেন যে কোনও সংসদীয় সচিবরা, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাজ্য পাবলিক কমিশনের চেয়ারম্যান৷ অভিযোগ, এই তালিকার বাইরেও অনেকেই ইচ্ছেমতো লাল ও নীলবাতি জ্বালিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তৃণমূলের এক সাংসদ লালবাতি জ্বালিয়ে দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে নিয়মিত প্রাতর্ভ্রমণে যান বলে অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরে৷ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ সফরে এসে শিলিগুড়ি শহরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় পাইলট কার নিয়ে মন্ত্রী-আমলাদের দাপাদাপি নজরে আসে মুখ্যমন্ত্রীর৷ সেটা দেখার পরই পাইলট কারের অপব্যবহার রুখতে নেতা-মন্ত্রীদের সাবধান করে দিয়েছেন মমতা৷
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2mROACI
March 30, 2017 at 05:38PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন