আগরতলা, ৩০ মার্চ- শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় শীর্ষ আদালতেও হোঁচট খেল ত্রিপুরা সরকার। এই মামলায় হাইকোর্টের রায়-ই বহাল রাখল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৪ সালের ৭ মে হাইকোর্টের এক রায়ে ত্রিপুরার ১০,৩২৩ শিক্ষকের জীবনে নেমে আসে ঘোর আঁধার। নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে, তা বাতিল করে দেয় উচ্চ আদালত। রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে, সাময়িক স্বস্তি পেয়েছিলেন চরম উত্কণ্ঠায় থাকায় এই শিক্ষকরা। কিন্তু, বুধবার সুপ্রিম রায়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ত্রিপুরার ১০,৩২৩ শিক্ষকের জীবনে। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর আর তাঁদের চাকরি থাকছে না। এমন পরিস্থিতির জন্য সরকার তথা শাসকদলের গোয়ার্তুমিকেই দায়ী করা হচ্ছে। মন্ত্রী থেকে পার্টি নেতা, কেউ-ই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। অস্বস্তি এড়াতে তাঁরা মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন। ২০০৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও অস্নাতক স্তরে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করেছিল ত্রিপুরা সরকার। নিয়োগের নির্ণায়ক ছিল মেধা, সিনিয়রিটি ও প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু কিছু বঞ্চিত বেকার সরকারের এই নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। ২০১০ সালে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এই মামলায় রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, কমিটি গঠন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে শুনানির পর ২০১৪ সালের ৭ মার্চ প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্তার নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালত রাজ্য সরকারকে দু- মাস সময় দিয়ে সমস্ত নিয়োগ বাতিল বলে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি কী হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আদর্শকুমার গোয়েল ও বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের ডিভিশন বেঞ্চে মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল শুনানি। তা চলে ২৯ মার্চ দুপুর পর্যন্ত। শুনানি শেষে এ দিন মামলার রায় দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে - ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০,৩২৩ জন শিক্ষক চাকরি করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে সরকারকে নুতন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী না মিললে, শিক্ষক নিয়োগের যে নিয়ম রয়েছে, তা শিথিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করতে হবে। বেকারদের পক্ষে এই মামলার সওয়াল করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট আইনজীবী সলমন খুরশিদ ও আইনজীবী ইমতিয়াজ উদ্দিন। দলীয় কাজে রাজ্যের বাইরে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী তথা আইনমন্ত্রী তপন চক্রবর্তীও ফোন ধরেননি। বিরোধীরা এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারের একরোখা মনোভাবকেই দায়ী করছেন। চাকরি সংক্রান্ত এই মামলার ইস্যুতে যে আগামী দিনে ত্রিপুরার রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কেননা, হরিয়ানার পর একযোগে এতজন শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণার নজির আর নেই।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2nlru3A
March 30, 2017 at 04:23PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন