চাঞ্চল্যকর খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়, খেয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন মা। ‌তাড়াহুড়োর কারণে খেয়ে যেতে পারেননি খাদিজা বেগম নার্গিস। মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা শেষে এসে ভাত খাবেন।
সেদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি খাদিজার। উল্টো ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে মৃত্যুশয্যায় চলে যেতে হয় খাদিজাকে। গত বছরের ৩ অক্টোবরের ঘটনা এটি।
এরপর তো ইতিহাস। খাদিজার উপর হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল আলোড়ন। খাদিজার উপর হামলার বিচার দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভের মুখে নড়চড়ে বসে প্রশাসন। দ্রুত বিচারের উদ্যােগ নেওয়া হয়।
এদিকে, মৃত্যুর মুখ থেকে চাঞ্চল্যকরভাবে ফিরে আসেন খাদিজা। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি।
আজ (বুধবার) চাঞ্চল্যকর সেই মামলার রায়। আজ সকলের দৃষ্টি থাকবে এই রায়ের দিকে। গত রোববার চাঞ্চল্যকর এই মামলার যুক্তিতর্ক শেষে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা ৮ মার্চ রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন।
৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে নারী দিবস উপলক্ষ্যে পালিত হয়। নারী দিবসের নিজের উপর হামলার বিচার পাচ্ছেন খাদিজা।
সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের আশা, বদরুল আলমের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে আজকের রায়ে। আদালত তাদের বক্তব্য ও মামলার প্রমানাদিতে সন্তুষ্ট হয়ে রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে আশাবাদী তিনি।
তবে বদরুলের আইনজীবী সুজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ঘটনার দিন বদরুল নেশাগ্রস্ত ছিল। আসামি বদরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী এবং সে একটি মাধ্যমিক স্কুলের অনারারি শিক্ষক। আমরা আদালতের কাছে এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি। আশা করছি এই মামলার রায়ে বদরুল বেকসুর খালাস পাবেন।
গত ১ মার্চ এই মামলা সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। খাদিজাকে কোপানোর দায়ে ঘটনাস্থল থেকে জনতা শাহজালাল বিশ্ববদ্যিালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। বদরুলের চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
হামলার পর প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় খাদিজাকে। সেখানে ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় খাদিজাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজ খাদিজা।
এদিকে, ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দন্ডবিধির ৩০৭, ৩২৪ ও ৩২৬ ধারায় শাহপরান থানায় বদরুলকে একমাত্র আসামী করে মামলা করেন। ওইদিনই বদরুলকে বহিস্কার করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বদরুল। ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন খাদিজা। এরমাধ্যম্যে মামলার ৩৬ সাক্ষীর ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। বদরুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে ও খাদিজা সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2m0gEzo

March 08, 2017 at 07:06AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top