আনিসা আবেতিয়া প্রায় ২০ বছর আগে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। তার ইসলাম গ্রহণ তার পরিবারের কিছু সদস্য অবজ্ঞার সঙ্গে বিবেচনা করে। তা সত্ত্বেও তারা একসঙ্গে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প এখন তাদেরকে একটি বেদনাদায়ক অপরিহার্যতার মুখোমুখি করেছে।
যেমনটি বলছিলেন আনিসা আবেতিয়া:
প্রায় ২০ বছর আগে আমার ইসলামে ধর্মান্তর আমার পরিবারে কিছু চ্যালেঞ্জের জন্ম দেয়। আমার কিছু আত্মীয় ইসলামকে ‘শয়তানের’ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে থাকে এবং এখনো তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি। এটি সত্ত্বেও একটি পরিবার হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে সক্ষম হয়েছি।
মুসলিম হওয়ার বিষয়টি ছিল আমার একটি ব্যক্তিগত পছন্দ; যা শুধু আমাকেই প্রভাবিত করেছিল। আমার ইসলাম গ্রহণের জন্য আমার পরিবারের কিছু সদস্যের সুস্পষ্ট অবজ্ঞা ছিল। যে কারণে বিভেদ সৃষ্টি ও আমার পছন্দের অনুভূতি অকপটে প্রকাশ করতে পারি নি। এই হতাশাজনক অবস্থা সত্ত্বেও, ব্যক্তিগত অস্বস্তির চেয়ে আমি পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখাটাকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেছি।
আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্য ট্রাম্পকে ভোট দেয়ায় এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাদের পছন্দে আমি শুধু পিছুই হটুনি একইসঙ্গে আমি গভীর লজ্জাও পেয়েছি।
ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ইসলামভীতি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। তাই ইসলাম নয় বরং ট্রাম্পের ইসলামভীতিই আমার পরিবার ও আমাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে পৃথক করেছে। ট্রাম্প যে মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমার পরিবার সেটিকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে আমাদের পরিবারের হৃদয়ের মধ্যে একটি ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
অনেক দিন ধরেই আমি এই সম্পর্কে লিখতে ইতস্তত বোধ করছিলাম কারণ এটা আমার কাছে বেদনাদায়ক এবং আমার কাছে মনে হয় আমি আমার পরিবারের মধ্যেই রয়েছি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান খারাপ অবস্থা আমার পরিবার এবং আমাকে তাদের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
ট্রাম্পকে পছন্দের কারণে অনেক পরিবারেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে এতে কোন সন্দেহ নেই এবং আমি কল্পনা করতে পারছি কেবল আমরা একাই সংগ্রাম করছি না।
একজন আমেরিকান এবং একজন মানুষ হিসেবে আমি চুপ করে থাকতে পারি না।
আমি আমার জীবনকে অটলভাবে চালিয়ে যেতে চেয়েছি; যেন কোন কিছুই বদলে না যায়। কিন্তু আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই তাদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছি। আশা করেছিলাম তাদের ভোটের কি অর্থ হতে পারে তা তারা বুঝতে পারবে।
আমি জানি, ট্রাম্পের কৌশলের একটি অংশ আমাদেরকে বিভক্ত করেছে। আমরা ইতোমধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছি। ট্রাম্পকে তাদের ভোট দেয়া আমাকে এবং আমার সন্তানদের জন্য কি অর্থ বোঝাচ্ছে তা তাদের বুঝতে সহায়তা করার জন্য আমার প্রচেষ্টার কমতি ছিল না।
আমি চুপ করে থাকতে পারি নাই যখন আমার পরিবারের অর্ধেক অন্ধকারের ওপারে যাচ্ছিল। বছরের পর বছর ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস পড়ে, পর্যবেক্ষণ করে এবং শুনে এসেছি। জার্মানিতে যদি মানুষ ‘ভদ্র’ হওয়ার ছদ্ম সংস্কৃতি চালু করত এবং তাদের নিজেদের পরিবারের সদস্যদের হিটলারকে সমর্থনের জন্য বলতেন তখন কি হতো? হয়তো ইতিহাসটা ভিন্নভাবে লিখা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে একবার বেশ ভাল যুদ্ধ হয়েছিল। আমি আমার ফিনিশ চাচীর গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছি; যিনি নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
আমরা একই মানুষ হিসেবে বড় হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের মূল্যবোধ এত আলাদা ছিল? যখন আমি এটির দিকে তাকাই তখন আমি মনে করি না আমাদের ভিন্ন মূল্যবোধ রয়েছে। তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারে আমাদের বোঝার ভিন্নতা রয়েছে।
যারা আমার প্রতিপালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এমন ঘনিষ্ঠ মানুষদের কুৎসিত রুপ মোকাবিলা করা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল এবং তা আমাকে নিরবে হত্যা করেছে।
তাদের ভোটের পরিণতি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমার ও আমার সন্তানদের বাস্তব জীবনের উপর কি প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে সম্ভবত তারা বুঝতে পারেন নি।
‘থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’ আসল এবং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এখন সময় এসেছে তাদের জিজ্ঞাসা করার। প্রথমেই আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি তারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে ছিল কি না। তারা তাকে ভোট দিয়েছে এই সত্যটি স্বীকার করার সাহস তাদের নেই এবং আক্ষরিক অর্থে তারা ভীত। এতে আমার প্রতিক্রিয়া ‘তোমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
গত ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’তে আমি আমার চাচার লিভিং রুমে যাওয়ার পর আমার সমগ্র বিশ্ব পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেখানে এখন আমার নিজের বা আমার সন্তানদের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই।
আমি আমার এক চাচীকে বললাম, ‘আপনারা আমার সম্পর্কে যা বিশ্বাস করেন, তা নিয়ে আমি তেমন কিছু অনুভব করি না। তবে আমি এমন কাউকে কখনো ভোট দিতাম না; যিনি প্রকাশ্যে বলেন ‘আপনাকে বিতাড়িত করা হবে’, ‘কারগারে কয়েদ করা হবে’ কিংবা ‘ক্ষতি করা হবে’। কিন্তু আপনি সেটিই করেছেন। আপনি সেই ব্যক্তিকেই ভোট দিয়েছেন। তাই দয়া করে আপনি আমাকে আলিঙ্গন করবেন না। আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।’
শেষ পর্যন্ত এটির প্রভাব ছিল না;যেটি আমি আশা করেছিলাম। তারা জাগ্রত হয়নি। আমি জানি না, কি জিনিস তাদের ভিতর এতটা ঘৃণাবোধ তৈরি করল।
আমি জানি না তাদের জীবনে কি ঘটেছে; যা তাদের বর্ণবাদী মতামতের ন্যায্যতা যাচাই করতে সক্ষম করেছে। তারা ক্রিসমাসের জন্য তারা আমার মায়ের ঘরে আসল না এবং তাদের বুঝাতে আমাকে একরকম সংগ্রাম করতে হয়েছে যে, যারা নিজেদের খ্রিষ্টান বলে দাবি করে কিন্তু আবার আমার সবার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের সৃষ্টির পবিত্রতাকে স্বীকার করতে অস্বীকার করে।
ইতিহাস আমাদের একটি ভয়ঙ্কর জিনিষ শিক্ষা দেয় আর তা হলো মানুষ তখনই নিজেদের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পারে যখন তারা অন্য মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখা বন্ধ করে দেয়।
ট্রাম্প যদি তার ঘৃণা অব্যাহত রাখেন সেক্ষেত্রে আমার পরিবার আমাকে ও আমার শিশুদের রক্ষা করতে পারবে না এবং এর ফলাফল তাদেরকেও নিতে হবে।
আনিসা আবেতিয়া একজন খ্যাতিমান লেখক। তিনি পোস্ট-কলোনিয়াল এবং নারীবাদী তত্ত্বের ওপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস ও এমএ ডিগ্রি নেন।
from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2lYUptK
March 07, 2017 at 10:55PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.