কলম্বো, ১৩ মার্চ- গল টেস্টের ফল বেশি খারাপ হওয়ায় খানিক মন খারাপ সবারই; কিন্তু তারপরও শততম টেস্ট নিয়ে যে উৎসাহ-আগ্রহ, উদ্দীপনা, আবেগ ও রোমাঞ্চ- তা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বরং ভারত মহাসাগরের পাড়ে কলম্বোয় বসেও টের পাওয়া যায় দেশে ক্রিকেট অনুরাগীরা উন্মুখ অপেক্ষায়- কখন শুরু হবে শততম টেস্ট? আজ থেকে ১৭ বছর আগে ২০০০ সালে অভিষেক টেস্টে যেমনটা ছিল, এবার ১০০ নম্বর টেস্টে এসেও সেই একই আবেগ-উচ্ছ্বাস। যেখানে ফল ও পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে যাচ্ছে সংখ্যা। আমার দেশ, আমাদের জাতীয় দল ১০০তম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে- এটাই অন্যরকম ভালো লাগা। যার পরতে পরতে ভালোবাসা আর দেশপ্রেম। তাই তো ঢাকা থেকে বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকার ক্লাব পর্যায়ের বেশ কিছু ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষও ছুটে আসছেন কলম্বোয়। এছাড়া লাল সবুজের সমর্থক বেঙ্গল টাইগার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের উৎসাহী সমর্থকদেরও আসার কথা শোনা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থিলাঙ্গা সুমাথিপালা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে তারাও সচেষ্ট। নিজেকে এবং শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করে বর্তমান লঙ্কান বোর্ডপ্রধান ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাবেক প্রধান বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের ১০০ নম্বর টেস্ট খেলাটাকে বড় করে দেখছেন। এটা এক বড় উৎসব ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত করে শততম টেস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সবাইকে বিশেষ পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং টিম বাংলাদেশকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কায় যখন শততম টেস্টের এমন উৎসব আমেজ- ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে বোমা ফাটালেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আজ দুপুর ও বিকেলের মাঝামাঝি সময় কলম্বোর পি সারা ক্রিকেট ওভালে জাতীয় দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনের সময় বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমের সাথে আলাপ করছিলেন হাথুরুসিংহে। ওই কথোপকথনের একপর্যায়ে কথা প্রসঙ্গে টিম বাংলাদেশের প্রাণ ভোমরা ও প্রধান চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসানের বোলিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ কোচ বলে বসেন, সাকিবের বলের ধার কমে গেছে। আমরা ২০১০ সাল থেকে যে সাকিবকে দেখে এসেছি, যে কি না অনুকূল উইকেটে বল হাতে অনেক সাফল্য উপহারের পাশাপাশি দলকে এগিয়ে দিত, সেই সাকিব এখন আর নেই। এই বোমা ফাটানো সংলাপ যে সাকিবের বিরোধিতা করে বলা তা নয়। গল টেস্টের পোস্ট মর্টেম করতে গিয়ে বাংলাদেশ কোচ নিজে থেকে তার দলের বোলিং শক্তির প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে তিনি নিজ দলের বোলিংকে অপরিণত ও অনভিজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন। তখনই কথা প্রসঙ্গে চলে আসে সাকিবের বিষয়টি। এমন নয় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এমনি এমনি হঠাৎ অপ্রাষঙ্গিকভাবে সাকিবের বিষয়ে কথা বলেন। নিজ দলের বোলিং শক্তির কথা বলতে গিয়ে হাথুরু বলে ওঠেন, আমার বোলিং লাইনআপ আছে, সেখান থেকে সাকিবকে সরিয়ে নেন, দেখবেন বাকি চার স্পিনার মিলে খেলেছে মোটে ১৫ টেস্ট। আর সাকিবও ঠিক সেই আগের সাকিব নেই। যে সাকিবকে দেখা যেত ২০১০-এর দিকে। যখন অনুকূল কন্ডিশনে একাই দলকে টেনে নিতে পারতো সে কিন্তু এখন সে সাকিবের দেখা মিলছে না। সে সাকিব নেই। হাথুরুসিংহের এ কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে সন্দেহ নেই। সাকিবভক্তরা হয়তো ক্ষোভে ফেটে পড়বেন। তবে ইতিহাস ও পরিসংখ্যান কিন্তু কোচের পক্ষেই থাকবে। এটা সত্যি ২০০৮ থেকে ২০১৪-২০১৫ পর্যন্ত সাকিবের বলের ধার ছিল অন্যরকম। স্লোলো ও স্পিন সহায় ট্র্যাকে সাকিব যেন বিসেন সিং বেদি কিংবা মানিন্দার সিং হয়ে উঠতেন। তার বাঁ-হাতি স্পিন খেলতে ঘেমে নেয়ে উঠেছেন অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানও। ওই সময়টায় সাকিব টেস্টে বল করা মানেই ছিল গন্ডায় গন্ডায় উইকেট। তার ক্যারিয়ারের ১৫ বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট শিকারের ৯০ ভাগ ওই সময়েই পাওয়া। তখন সাকিবের বলকে অনেক বেশি ধারালো ও জাদুকরি মনে হতো। ভাবা হয় টেস্টের চেয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেট, বিশেষ করে আইপিএল খেলায় সে বোলিংটা অনেক বেশি সীমিত ওভারকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। টার্ন, ফ্লাইট বৈচিত্র্য গেছে কমে। যেন বোলিংয়ে ভাটা নেমে এসেছে। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের মাত্র ছয় নম্বর টেস্টে (৩৬ রানে ৭ উইকেট) প্রথমবার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট পাওয়া সাকিব আর পিছন ফিরে তাকাননি। তারপর থেকে প্রতি সিরিজেই প্রায় একবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। কিন্তু সর্বশেষ ১০ টেস্টে তার উইকেট প্রাপ্তির গ্রাফ বেশ নিচুতে। ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের পর গল পর্যন্ত সর্বশেষ ১০ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ্যা মাত্র ২৯টি। আর ইনিংসে ৫ উইকেট মাত্র একবার। সেটাও পাঁচ টেস্ট আগে ২০১৬ সালে অক্টোবরে চট্টগামে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে ২ উইকেট পাওয়া সাকিব পরের ইনিংসে ৮৫ রানে পাঁচ উইকেটের পতন ঘটান। ম্যাচ ফিগার ছিল ১৩১ রানে ৭ উইকেট। যতই অবাক মনে হোক না কেন, তারপর আর কোন টেস্টের এক ইনিংসে দেশসেরা স্পিনার আর পাঁচ উইকেট পাননি। দুদুবার চার উইকেট করে নিয়েছেন; কিন্তু একটি টেস্টেও দুই ইনিংস মিলে ছয় উইকেটের বেশি পতন ঘটাতে পারেননি। এখানেই শেষ নয়। টেস্টে যার সাফল্য নজকাড়া। সেই বাঁ-হাতি স্পিনার শেষ ১০ টেস্টের পাঁচ ইনিংসে উইকেটশূন্য। এর মধ্যে ক্রাইস্টচার্চে শেষ ইনিংসে ২৮ রানে কোনো উইকেট না পাওয়া সাকিব হায়দরাবাদে ভারতের বিরুদ্ধেও প্রথম ইনিংসে ২৪ ওভারে ১০৪ রান দিয়ে একটি উইকেটও নিতে পারেননি। যার বোলিং ক্যারিয়ারের প্রায় পরতে পরতে সাফল্য মাখা, তার এমন খারাপ দিন সত্যিই বিস্ময় জাগায়। কোচ হাথুরুসিংহের উপলব্ধি ও মন্তব্য হয়তো চোখে কাঁটার মতো বিধছে; কিন্তু খুব কি অমলূক হয়ে গেছে? আর/১২:১৪/১৩ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2mg2ryd
March 13, 2017 at 06:27AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন