কলকাতা ১৩ মার্চ- উত্তরপ্রদেশের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বাংলায় শাসক দলের আগাম উৎকন্ঠা ছিলই। হিন্দি বলয়ের বৃহত্তম রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী একাই তিনশো পার করার পরে সেই উৎকণ্ঠা বাড়ল বইকি! উদ্বেগের বিষয় মূলত দুটি। এক, চিট ফান্ড তদন্তে সিবিআই কি আরও সক্রিয় হবে? নারদ তদন্তেও কি খাতা খুলবে এ বার? এবং দুই, কেন্দ্রে তাঁদের সরকারের মধ্য মেয়াদে এই বিপুল সাফল্যের পরে বাংলায় কি মেরুকরণের অস্ত্রে আরও শান দেবেন মোদী-অমিত শাহরা? তৃণমূল এই দুই প্রশ্নেই আন্দোলিত ছিল শনিবার। ভোটের ফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দুপুরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পরাজিতদের ভেঙে পড়ার কারণ নেই। সেই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ-ও বলেন, গণতন্ত্রে হারজিত থাকবেই। কিন্তু পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূলের সাহসী মুখ তুলে ধরতে সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের মতো তিন পোড় খাওয়া নেতাকে মাঠে নামান দলনেত্রী। প্রশ্ন হল, তবে কি মমতা আশঙ্কা করছেন, বিজেপি-তৃণমূল পারস্পরিক শ্রদ্ধায় এ বার ঘাটতি পড়তে পারে? আর সেটাই ভবিতব্য হলে, কী ভাবে তার মোকাবিলা করবেন তিনি? মমতার মন্তব্যকে কটাক্ষ করে এ দিনই বামেরা বলেন, বাংলায় বিরোধীদের প্রতি তিনি নিজে কি শ্রদ্ধা দেখান? তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বামেরা কী বলছেন তা এখানে গুরুত্বহীন। বাস্তব হল, ১১ মার্চের পর চিট ফাণ্ড তদন্তের গতি বাড়বে বলে ইতিমধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছে বিজেপি। ফলে তৃণমূলের আশঙ্কা অমূলক নয়। এবং সেই আশঙ্কা রয়েছে বলেই, নোট-বন্দির বিরুদ্ধে গোড়ায় তেড়েফুঁড়ে নামলেও সিবিআইয়ের হাতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতারের পর থেকে মোদী-বিরোধিতায় দৃশ্যতই কিছুটা ঢিলে দিয়েছে তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকেও বিরত হয়েছেন মমতা। তা ছাড়া, সংসদে মোদী সরকারকে সুষ্ঠু ভাবে বাজেট পেশ করার সুযোগ করে দেওয়া, জিএসটি বাস্তবায়নে সুবিধা করে দেওয়ার মধ্যে দিয়েও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা বা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের বিরুদ্ধে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের মানহানির মামলা করার ঘটনায় বিজেপি চটেছে। ফলে পাঁচ রাজ্যের ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিজেপিকে মোকাবিলার পথ খোঁজাও শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তার কিছুটা ইঙ্গিত এ দিন পাওয়া গিয়েছে দলের মুকুল রায়ের কথায়। তাঁর বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলের দশ-বারো জন নেতা জেলে গেলে কোনও ফারাক হয় না। দেখতে হবে পঞ্চায়েত-পুরসভা স্তর পর্যন্ত মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে কি না। মানুষ সঙ্গে থাকলে কোনও চিন্তা নেই। মুকুলবাবুর কথায়, খাদ্যসাথী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নকে একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন দিদি। পশ্চিমবঙ্গের সাত কোটি মানুষ সেই সুবিধা পাচ্ছেন। অখিলেশ কিন্তু সেটা করে দেখাতে পারেননি। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আইনের শাসনে বাঁধা, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা এই সবের মাধ্যমেও মানুষের আস্থা ধরে রাখার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছেন মমতা। যদিও ভিন্ন মতও রয়েছে দলে। দলের একাংশের উদ্বেগ ধর্মীয় মেরুকরণ কোনও যুক্তি মানে না। খয়রাতির সুবিধা পেতে পেতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। বড় কথা হল মেরুকরণের স্রোত গোটা দেশে বইছে। মণিপুরের মতো রাজ্যও এর ছোঁয়া এড়াতে পারেনি। বাংলা কি পারবে? তা ছাড়া, রাজনৈতিক ভাবে বাংলায় একটা বার্তা চলে গিয়েছে এর মধ্যেই। তা হল, একমাত্র মোদীই পারেন মমতাকে রুখতে। ফলে বাম ও কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামিয়ে বিজেপি বাংলায় প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সন্দেহ নেই, সিবিআই তদন্ত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতি, ভাঙচুরের ঘটনা তাতে হাওয়া দেবে। সব মিলিয়ে এখন মোদী-শাহদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূল। আর/১২:১৪/১৩ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ndkQzS
March 13, 2017 at 06:06AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন