কলম্বো, ১৭ মার্চ- টেস্ট ক্রিকেট মানেই ওঠানামা আর উত্থান-পতনের খেলা। দুএকটি সেশন কিংবা এক-দুই দিনের উজ্জ্বল পারফরমেন্সই শেষ কথা নয়। পাঁচদিনের অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন ও পারফরমেন্সে একটা ধারাবাহিকতা খুব জরুরী। এক-দুই সেশন খুব ভাল কাটা আর এক-দুই দিন বিচ্ছিন্নভাবে ভাল খেলা শেষ পর্যন্ত কোনই কাজে আসে না, যদি না পাঁচদিন ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা না যায়। খুব বেশি দুর যেতে হবে না। তেমন ইতিহাস ঘাঁটতেও হবে না। পরিসংখ্যানের পাতাও বেশি উল্টাতে হবে না। নিউজিল্যান্ড সিরিজ আর হায়দরাবাদে ভারতের সাথে টেস্ট ম্যাচ খুঁটিয়ে দেখলেই বেরিয়ে আসবে কঠিন সত্য- প্রায় প্রতি ম্যাচের কোন না কোন সেশন বা দিন বাংলাদেশ ভাল খেলেছে। তা দেখে মনে হয়েছে, যাক পারফরমেন্স মন্দ নয়। ভালো কিছুর আশা করাই যায়; কিন্তু দেখা গেছে ঠিক তারপর দিনই আবার ভুল অ্যাপ্রোচ এবং বাজে অ্যাপ্লিকেশন। তাতেই আশার প্রদীপ গেছে নিভে। ওয়েলিংটনে ৫৯৫ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারা। ক্রাইস্টচার্চেও দ্বিতীয় ইনিংসে বাজে ব্যাটিংয়ের চড়া মাশুল গোনা। একই অবস্থা ছিল হায়দরাবাদেও। এমনকি গলেও ঠিক সেই অবস্থা। প্রথম ইনিংসে ৩১২। আর পরেরবার দুশোর নিচে (১৯৭) থেমে যাওয়া। শুধু ব্যাটিংয়েই যে এমন হয়, তা নয়। বোলিংয়েও হয়। সাম্প্রতিক সময় খুব কম টেস্টেই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে কম রানে বেঁধে ফেলতে পেরেছে। বেশিরভাগ সময় পারেনি। সে না পারার কারণেই সাফল্য ধরা দেয়নি। ইতিহাস জানাচ্ছে বাংলাদেশ নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ে একবারই প্রতিপক্ষকে প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে কম রানে অলআউট করতে পেরেছে, সেটা গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই টেস্টেই বাংলাদেশের বোলাররা ইংলিশদের দ্বিতীয় ইনিংসকে কম রানে গুটিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের প্রথম ইনিংসের স্কোর ছিল ২৯৩। আর পরেরবার কুকের দল অলআউট হয়েছে ২৪০ রানে। ওই ম্যাচ জিততে না পারলেও ঢাকায় ২৪৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশদের ১৬৪তে বেঁধে ফেলে ১০৮ রানের ঐতিহাসিক জয়ের দেখা মেলে। শততম টেস্টে অবিস্মরনীয় কিছু করতে হলেও বাংলাদেশকে সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হবে। লঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে করেছে ৩৩৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে যদি তার চেয়ে বেশি করে বসে, তাহলে ম্যাচ জেতা খুব কঠিন হবে টাইগারদের। তখন টার্গেট দাড়াবে ৩০০ কিংবা তার আশপাশে। তাই ম্যাচ জিততে হলে বা জয়ের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে হলে স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের চেয়ে কম রানে অলঅঅউট করার কোনই বিকল্প নেই। আজ তৃতীয় দিন পর্যন্ত উইকেট ভালই ছিল; কিন্তু আজও শেষ ঘণ্টায় কিছু ডেলিভারি টার্ন করেছে। তাই ধরেই নেয়া যায় আগামীকাল চতুর্থ দিন শেষ সেশন থেকে উইকেটে বল ঘুরতে শুরু করবে। আজ দিন শেষে কথা শুনে মনে হলো, এ কঠিন সত্য উপলব্ধি করছেন সাকিব আল হাসানও। তাই তো মুখে এমন কথা, টেস্টে পাঁচদিন ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলতে হয়। যেটা সহজ না। আর আমরা খুব বেশি অভ্যস্তও না। যেহেতু এই বছর আমরা অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলছি, এখনই সময় এগিয়ে আসার। এই জায়গাগুলোতে উন্নতি করার। সাকিব অকপটে স্বীকার করেছেন, তারা পাঁচ দিন ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারেন কম। তাই তো মুখে এমন কথা, গত কিছু দিন, আমরা একটা ইনিংস ভালো করছি, আরেকটা ইনিংস ভালো করতে পারছি না। কিন্তু এ ম্যাচের ব্যাটিং ও বোলিং দুই ইনিংসেই ভাল খেলার জোর তাগিদ কন্ঠে। আমাদের আরও একটি করে ব্যাটিং-বোলিং ইনিংস বাকি আছে, ফোকাস থাকবে এই দুটিতে ভালো করার। যদি এই বছরটি দেখেন, প্রতিটা ম্যাচে আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে এসেছি যেখানে মনে হয়েছে ভালো অবস্থায় আছি; কিন্তু পরের ইনিংসে গিয়ে আর ভালোর রুপটা ধরে রাখতে পারিনি। সেই না পারাকে এবার জয় করতেই হবে। আর তা করে দেখাতে হলে, এই এক দুই দিন ভাল খেলা যথেষ্ট নয়। সাকিবের সেঞ্চুরি আর মুশফিক-মোসাদ্দেক সৈকতের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে মোড়ানো একটি দিন অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে; কিন্তু তাই বলে সাফল্য নিশ্চিত করেনি। সাফল্য নিশ্চিত করতে দরকার পরের দুদিন ব্যাট ও বলে ভাল খেলা। তবেই না শততম টেস্টে ঐতিহাসিক সাফল্য ধরা দেবে। না হয় সেই থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়! আর/১০:১৪/১৭ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2nA4WwB
March 18, 2017 at 04:57AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন