রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তারক্ষীদের পিটুনিতে এক ছাত্রের আহত হওয়ার জের ধরে প্রগতি সরণিতে অবরোধসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
বুধবার রাত ১১টায় নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরে আহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসনাত তপুকে এ্যাপোল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রাতে এক দফা বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ফেসবুকে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দিলে অবরোধ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এ ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপ দুঃখ প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। পরে আগামীকাল শুক্রবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাশ ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে। শনিবার থেকে ক্লাশ ও পরীক্ষা চলবে।
ঘটনার সূত্রপাতের বর্ণনা দিয়ে আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠি কামরুল জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো গেটে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে আবাসিক এলাকাটির নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে তপুসহ আরো দুই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ওপরে হামলা করে। এ খবর শুনে আরও ১০/১৫ জন ছাত্র সেখানে গেলে তারাও মারধরের শিকার হন। এরপর রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা। আহত তপুকে এ্যাপলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। কিন্তু সকালে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে দেয়া হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান কার্যালয়ের ‘বসুন্ধরা হাউজিং’ ভবনে হামলা করে কাঁচের দরজা, জানালা ও দুটি জেনারেটর ভাঙচুর করেন। এছাড়া ওই এলাকার সব চেকপোস্টে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভিতরে বিভিন্ন রাস্তায় কাগজ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এসময় পুলিশ কয়েক দফা ধাওয়া দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টপ ইট অ্যান্ড শেয়ার কাবাবের দোকান ভাঙচুর করেন। সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বের হয়ে প্রগতি সরনীতে অবরোধ করে। এতে দুই দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা সেখানে সমাবেশ করে। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা প্রহরীদের শাস্তির দাবি করেন। বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও পুলিশের একটি টিম শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। সেখান থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ডেকে নেয়া হয় ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে।
পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে গেছে।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ বুধবারের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে মধ্যে রয়েছে- এ ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, আহত শিক্ষার্থীকে মেডিক্যাল ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দেয়া, শিক্ষার্থীদের যথাযথ সম্মান দিতে নিরাপত্তাকর্মীদের অবহিত করা এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান ফটক প্রাথমিকভাবে রাত ৮টা পর্যন্ত ও পরবর্তীতে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2myY7On
March 03, 2017 at 09:48AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.